• ঢাকা
  • শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ঘূর্ণিঝড় মোখার মূল কারন বিশ্ব উষ্ণায়ন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৩৯ পিএম
মূল কারন বিশ্ব উষ্ণায়ন
ঘূর্ণিঝড় মোখা

সাইদুর রহমান
        
বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে এগোচ্ছে। বিশ্বে শিল্পায়ন হচ্ছে যুগের চাহিদার নিমিত্তে। পরিবেশের ধারন ক্ষমতাকে উপেক্ষা করে, দূষণের তীর নিক্ষেপ করা হচ্ছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে!

অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে বৈশ্বিক সমস্যাটি প্রকট থেকে প্রকটতর রূপ নিচ্ছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বলতে পৃথিবীতে সাম্প্রতিক কালের মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়। এর প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ ও বাতাসসহ বিভিন্ন সূচকের পরিবর্তন হয় ও পৃথিবীপৃষ্ঠে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ( Global warning) পৃথিবীর পরিবেশকে ভারসাম্যহীন করার জন্য একমাত্র দায়ী বলা যেতে পারে। জগতের প্রাণীকূলকে প্রকৃতির রক্ত চক্ষুর ঘূর্ণিপাকে ফেলে দিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেনা উন্নত দেশগুলো। তাদের দৃষ্টিগোচরে আসতে হলে, আর কত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হবে তা আমাদের মতো স্বল্প উন্নত দেশগুলো জানেনা। বিশ্বে অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পায়ন হওয়ায় ফলে বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন অক্সাইডের ( Co2) কারণে, মহাসাগর গুলোতে co2.এর দ্রবীভবনের মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ভূমণ্ডলের ওজন স্তর ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা।

উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে, আইপিসিসি তথ্যমতে, চলতি শতকে কার্বন দূষণ বৃদ্ধি পাবে ১০ শতাংশ। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে ২.৮ ডিগ্রি সে.। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে পাবে ২ ডিগ্রি সে.। আইপিসিসি উদ্ভাবিত জলবায়ুর মডেল নির্দেশনা বলে, আগামী ২০৩০সালে বাংলাদেশে ১৫ ভাগ বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে প্রায় ২২.৮৮ বর্গকিমি ভূমি সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাবে। এই হিসাবে বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৫.৮%সমুদ্র জলে তলিয়ে যাবে। বিজ্ঞানিগণ আরও আশঙ্কা করছেন যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় সমূহের সংখ্যা এবং প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি করবে। ২৭° সেলসিয়াসের অধিক তাপমাত্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর মতো ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন ঘন সৃষ্টি করবে।

বিশ্বায়নের ফলে প্রযুক্তির অযৌক্তিক ব্যবহারে পরিবেশ আজ সংকটাপন্ন। বিশ্বের উন্নত দেশ গুলির শিল্পায়নের যাঁতা কলে পিষ্ট হয়ে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। শিল্পে অধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর বেসামাল শিল্পনীতির জন্য আমাদের মতো স্বল্প উন্নত দেশ আজ বাসের অযোগ্যের দ্বারপ্রান্তে। শিল্পের বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ছেড়ে দিচ্ছে পরিবেশে। 

আর বায়ুমণ্ডলে সৃষ্টি হচ্ছে গ্রিনহাউজ ইফেক্ট। যারফলে; দেশে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, পাহাড় ধস, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দিনে দিনে বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
তার সাথে আমাদের প্রিয় মানচিত্রের অবস্থানও পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। গ্রিনহাউজ ইফেক্টের জন্য একমাত্র কার্বন নিঃসরণকে দায়ী করলে ভুল হবে। গ্রিনহাউজ ইফেক্টের জন্য কার্বন ৫০ ভাগ দায়ী। বাকিটার জন্য অন্যান্য উপাদান দায়ী। 

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রতিবছরেই কার্বন নিঃসরণের রেকর্ড ভাঙ্গতেছে। পৃথিবীতে শীর্ষে থাকা কার্বন নিঃসরণকারী দেশ গুলো হচ্ছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারত । বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ চীন ( ২৮%) ।

বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবীটাকে একটা টাইম বোমার সাথে তুলনা করা যেতে পারে । যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ুর রুক্ষতার জন্য বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড় ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে ১১ হাজার ৪৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার। যা জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ। এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পুয়ের্তোরিকো। গতবারও শীর্ষে ছিল দেশটি। এরপর যথাক্রমে রয়েছে মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন, মোজাম্বিক, বাহামা। বাংলাদেশ সপ্তম। যদিও বিগত বছরের চেয়ে বাংলাদেশের জলবায়ুর সূচকের উন্নতি হয়েছে কিন্তু 

প্রকৃতির বৈরীতার কাছে কেউ আপনজন নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,তার মূল কারণ ভৌগোলিক অবস্থান। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকা গুলো সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের তেমন ভূমিকা নেই। তারপরও বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর কথা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকার করেছে। ইতিমধ্যে প্যারিসে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে অর্থ দিতে অনেক দেশ রাজি থাকলেও, অহীনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য যেসব দেশ বেশি দায়ী তাদের দৃষ্টি ইতিবাচক নয়!

বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধিরোধ একক রাষ্ট্রের কিংবা অঞ্চল ভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোর প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যমতে আসতে হবে। বিশেষ করে বিশ্বে তালিকা ভুক্ত বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ গুলোকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার চেয়ে বিশ্ববাসীকে নজর দিতে উষ্ণতা কমানোর দিকে। বাংলাদেশ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য তেমন দায়ী নয়, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত আমরাই বেশি। তাই উষ্ণতা কমানোর জন্য বিশ্ববাসীর কাছে জোরালো দাবি জানাতে হবে।
আপাতত; আমরা সবুজায়নের দিকে নজর দিব আর নীরবে মোকার বিষ পোড়া ছোবল হজম করবো।

লেখক ও কলামিস্ট

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image