নিউজ ডেস্ক: আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বাইডেনের নির্দেশে, ইউএস সেনাবাহিনী, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জোট বেধে ইয়েমেনে বেশ কয়েকটি হুথি অবস্থানে আক্রমণ করেছে। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসও এই আক্রমণগুলিকে সমর্থন দিয়েছে।
কয়েকদিন আগে ইয়েমেনে হুথিদের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অন্তত তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সানা ছাড়াও সাদাহ, হোদেইদাহ, তাইজ এবং ধামার প্রশাসনিক এলাকায় হুথি অবস্থানগুলিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনী ইয়েমেনে বেশ কয়েকটি হুথি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা ও নেদারল্যান্ডও এসব হামলায় সহযোগিতা করেছে।
হামলায় আমেরিকান যুদ্ধজাহাজের টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও, ইউকে টাইফুন ফাইটার জেট সাইপ্রাস থেকে উড়ে এসে ইয়েমেনে হামলা চালায়।
এই হামলার আগে হুথি বিদ্রোহীরা ক্রমাগত লোহিত সাগর দিয়ে যাওয়া জাহাজে হামলা চালাচ্ছিল। হামাসের সমর্থনে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তারা এসব করছে এমন দাবি হুতিদের।
৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, হুথিরা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে লোহিত সাগরে জাহাজগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করতে শুরু করে। এ পর্যন্ত ২৭টি জাহাজ হুতি হামলার শিকার হয়েছে। এসব জাহাজে থাকা ২০ দেশের ক্রুদের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল বা জিম্মি হয়েছিল।
হোয়াইট হাউস থেকে জারি করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হুথি হামলায় জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হুথি হামলার কারণে এ পর্যন্ত ২০০০ বেশি জাহাজ তাদের গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
প্রসঙ্গত লোহিত সাগর ব্যতীত, অন্য পথটি পুরো আফ্রিকার চারপাশে যায় যা সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি মাল পরিবহনের খরচ এবং সময় উভয়ই বৃদ্ধি করে। এসব কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সামনে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে কারণ বিশ্বের বাণিজ্যের ১২ শতাংশ লোহিত সাগর দিয়ে যায়।
হুথিদের ওপর সরাসরি হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য
আমেরিকার নেতৃত্বে, প্রথম ১৩টি দেশ হুথিদের তাদের আক্রমণ বন্ধ করার জন্য সতর্ক করেছিল। কিন্তু এরপরও হুথি মিলিশিয়ারা হামলা অব্যাহত থাকে।
৯ জানুয়ারি হুতিরা সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। হুথিরা ২১ ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট নিক্ষেপ করেছে। জবাবে, মার্কিন এবং যুক্তরাজ্যের জাহাজ থেকে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এটি ধ্বংস হয়ে যায়।
এরপর আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য হুথিদের ওপর সরাসরি হামলার ইঙ্গিত দিয়েছিল, যা এখন বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছে হুথি। বলা হচ্ছে ফলাফল খারাপ হবে। অন্যদিকে হুথিদের সাহায্য করা বন্ধ করতে ইরানকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে আমেরিকা, অন্যথায় ফল ভোগ করতে হবে। আমেরিকা থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী, ইরান শুধু হুথিদের অস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করছে না, জাহাজে হামলার জন্য গোয়েন্দা তথ্যও দিচ্ছে।
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ ইয়েমেনের ভূমিতে পৌঁছেছে। একমাত্র ইরানই হুতি সমর্থিত ইয়েমেন সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর একদিন আগে, হুথিদের হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল।
জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো তাদের জাহাজ রক্ষায় আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে স্বাধীন, এটাও বলা হয়েছে। এরপর আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য হুথিদের ওপর হামলা চালায়।
এর মানে এখন ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ ইয়েমেনের মাটিতে পৌঁছেছে। লোহিত সাগরের নিরাপত্তা যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। লোহিত সাগর এবং এর আশপাশের এলাকায় ২০টি দেশের সাথে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী অপারেশন পরিচালনা করছে। অনেক জাহাজ এখন এই এলাকায টহল দিচ্ছে।
এছাড়া মার্কিন নৌবাহিনীর থিওডোর রুজভেল্ট ক্যারিয়ারকেও লোহিত সাগরের দিকে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এর অর্থ হুতি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ আগামী সময়ে আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: