• ঢাকা
  • শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মঙ্গলবার রাতে শবেকদর


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:০০ পিএম
মঙ্গলবার
শবেকদর রাত

নিউজ ডেস্ক : শবেকদরের রাতে সৌদি আরবের মক্কায় নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়। সর্বপ্রথম তার নিকট প্রথম সুরা আলাক্বের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়।

এ রাতে ফেরেশতা জীবরাইলের নিকট সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয় যা পরে ২৩ বছর ধরে ইসলামের নবী মুহাম্মদের নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ রাত সসম্পর্কে হাদিস শরিফে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এমনকি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআনে সুরা ক্বদর নামে স্বতন্ত্র একটি পূর্ণ সুরা নাজিল হয়েছে। এ সুরায় শবেকদরের রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম মতে, মুহাম্মদ (সা.) পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতরা দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে বহু বছর আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। কোরআন ও হাদীসের বর্ণনায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকরিয়া, হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই ৮০ বছর স্রষ্টার উপাসনা করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোনো প্রকার পাপকাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে স্রষ্টার আরাধনা করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এ আক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দূর করার জন্য সূরা কদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়।
 
শবেকদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। তাই এই রাতটি মুসলমানদের জন্য ভাগ্যরজনী হিসেবে সম্মানিত। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত।
 
পবিত্র কোরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ রাতকে হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহা সম্মানিত রাত হিসেবে আমারদের জন্য দান করেছেন। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ বা লাইলাতুল কদরের রাত।
 
যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর। আল্লাহতায়ালা বলেন: ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে সমভিব্যহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা বা ফজর পর্যন্ত। (আল কোরআন, সুরা-৯৭ [২৫] আল কদর)  
 
রমজান মাস পবিত্র কোরআন নাযিলের মাস। শবে কদর কোরআন নাযিলের রাত। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার হেরা পর্বতের গুহায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের সরদার হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে রাহমতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল করেন।
 
এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ রাতের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ রাতে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদিকে হাজার মাসের ইবাদত-বন্দেগি ও আমলের সমান সাওয়াব দান করে। কোরআনুল কারিমের অন্য স্থানে এ রাতটিকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কোরআন) এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা দুখান : আয়াত ১-৬)
 
কোরআন নাযিলের কারণে মর্যাদার এ রাতের কথা উল্লেখ করার পর যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে সে মাসের কথাও আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন এভাবে- আল্লাহ তায়ালা বলেন: ‘রমজান মাস! এমন একটি মাস যে মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে মানবের মুক্তির দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে। ’ (সুরা-২ আল বাকারা, আয়াত: ১৮৫)।
 
সুতরাং লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর ওইসব বান্দারা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী হবেন, যাদের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক বেশি। যিনি কোরআন-সুন্নাহর আলোকেই নিজের জীবন পরিচালিত করবেন। বাস্তবজীবনে কোরআন-সুন্নাহর আমলে সাজাবেন জীবন। আর তারাই হবেন সফল।
 
রমজানের শেষ দশদিনের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুলকদর তালাশ করা যায়, অর্থাৎ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রমজান দিবাগত রাতগুলো। তবে অনেক আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যায় এবং বুজুর্গানেদ্বীনের মতে ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ তারিখে পবিত্র শবেকদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত।
 
মর্যাদার এ রাত পেলে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে কী প্রার্থনা করবেন? কী চাইবেন? এ সম্পর্কে হাদিসের একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে- হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলে দিন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা জানতে পারি, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়ব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে-
উচ্চারণ: 'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুয়্যুন; তুহিব্বুল আ'ফওয়া; ফা'ফু আ'ন্নী।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা-
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতটি পাওয়ার জন্য শেষ দশকে আজীবন ইতেকাফ করেছেন।
উম্মতে মুহাম্মদীর উদ্দেশে  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে (রমজানের) প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। তারপর আমার প্রতি ওহি নাযিল করে জানানো হলো যে, তা শেষ ১০ দিনে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে। তারপর মানুষ (সাহাবায়ে কেরাম) তার সঙ্গে ইতেকাফে শরিক হয়।’ (মুসলিম শরীফ)
 
কদর রাতের ফজিলত-
মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাযিল হওয়ার কারণে অন্যসব মাসের চেয়ে রমজান মাস বেশি ফজিলত ও বরকতময় হয়েছে। আর রমজানের রাতগুলোর মধ্যে কোরআন নাযিলের রাত লাইলাতুল কদর সবচেয়ে তাৎপর্যমণ্ডিত একটি রাত।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি একে নাযিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সুরা: কদর, আয়াত: ১-৩)।  
এ আয়াতের ব্যাখায় মুফাসসিরকুল শিরোমণি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম’। (তানবিরুল মিকবাস মিন তাফসিরে ইবনে আব্বাসঃ ৬৫৪ পৃষ্ঠা)।
তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন, এর ভাবার্থ হলো, এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

মুফাসসিররা এমনই ব্যাখ্যা করেছেন। আর এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। (ইবনে কাসির: ১৮ খণ্ড, ২২৩ পৃষ্ঠা)।
 
শবেকদরের আমল-
সুতরাং লাইলাতুল কদর পেলে এ আমল ও দোয়া রাত অতিবাহিত করা জরুরি। তা হলো-
১. নফল নামাজ পড়া।
২. মসজিদে ঢুকেই ২ রাকাত (দুখুলিল মাসজিদ) নামাজ পড়া।
৩. দুই দুই রাকাত করে (মাগরিবের পর ৬ রাকাত) আউওয়াবিনের নামাজ পড়া।
৪. রাতে তারাবির নামাজ পড়া।
৫. শেষ রাতে সাহরির আগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
৬. সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়া।
৬. সম্ভব হলে তাওবার নামাজ পড়া।
৭. সম্ভব হলে সালাতুল হাজাত পড়া।
৮. সম্ভব হলে সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া।
৯. কুরআন তেলাওয়াত করা। সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাসির, সুরা ইয়াসিন, সুরা ত্বহা, সুরা আর-রাহমান, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুলক, সুরা কুরাইশ এবং ৪ কুলহু সুরা পড়া।
১০. দরুদ শরিফ পড়া।
১১. তাওবাহ-ইসতেগফার পড়া। সাইয়্যেদুল ইসতেগফার পড়া।
১১. জিকির-আজকার করা।
১২. কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত দোয়াপড়া।
১৩. পরিবার-পরিজন, বাবা-মা ও মৃতদের জন্য দোয়া করা, কবর জেয়ারত করা।
১৪. বেশি বেশি দান-সদকা করা। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image