নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জর প্রধান ডাকঘরে সহকারী পোষ্ট মাস্টারের ছেলের বিয়ের সংবাদটি শনিবার নগরী জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রকাশিত ভিডিওটি রীতিমত ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওর কমেন্ট বক্সে চলছে সমালোচনার ঝড়।
এতো কিছুর পরেও শনিবার (২৫ মে) দুপুরে পোষ্ট অফিস কার্যালয়ের ভেতরেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ওই বিয়ের বৌ-ভাত অনুষ্ঠান। সরকারী কর্মকর্তা বলে কথা। তাই তো ছেলের বিয়েতে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে বাড়তি খরচ বাঁচাতে নিজ কর্মরত অফিসের ভেতরেই সেরে ফেলেছেন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অফিসের অন্যান্য র্কমকর্তা এবং কর্মচারীরাও।
তবে এ প্রসঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যায় না বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকঘর কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে বসানো রয়েছে সাড়ি সাড়ি চেয়ার। রান্না করা হচ্ছে হরেক রকমের খাবার। অতিথিদের খাবার দিতে সাদা-কালো পোশাকে ব্যস্ত রয়েছে বেয়ারা। ডাক অফিসের ভেতরে সাজানো রয়েছে ভোজনের জন্য ১২টি ডেকোরেশনের টেবিল। যেখানে চারপাশে ১২ টি করে আসন রাখা হয়েছে। আর সেই সরকারী প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে প্রায় তিন শতাধিক আগত অতিথির ভোজন বিলাস।
তবে এসব আয়োজন বিয়ে বাড়ি কিংবা কমিউনিটি সেন্টারে দেখে অভ্যস্ত হলেও সরকারী প্রতিষ্ঠানে হওয়ায় উর্ধতন কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও সরকারী প্রতিষ্ঠানের বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা চালু রেখে চলেছে সহকারী পোষ্ট মাস্টারের ছেলের বৌভাত অনুষ্ঠানের কার্য্যক্রম। যদিও এসব রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবেই গন্য করা হয়। কিন্তু এগুলি ব্যবহারের জন্য অনুমতিপত্র কিংবা বিল পরিশোধের জন্য কোনো রশিদ দেখাতে পারেন নি আয়োজক। এমনকি ডাকঘর কার্যালয়ে যেখানে সকল প্রকার অফিসিয়াল কাজকর্ম সহ আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হয়, ওই স্থানেই মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। প্যান্ডেল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে সরকারী প্রতিষ্ঠানের কেবিনেট গুলো। আর এমন পরিবেশ দেখে হতবাক স্থানীয়রা।
তাই সরকারি অফিসে এমন বিয়ের আয়োজন নিয়ে অনেকের মাঝেই মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় দোকানী ও তাদের কর্মচারীসহ পথচারীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, এ যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। তা না হলে এভাবে এতো বড় আয়োজন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে কিভাবে করতে পারে?
ডাকঘরের পাশেই এক দর্জি দোকানী বলেন, এই প্রথম দেখলাম যে কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠানে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। এখানে এবার পোস্ট মাস্টারের ছেলের বিয়ে হয়েছে। এরপর আরো অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা শুরু হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ বিষয়ে এক পথচারী বলেন, কর্মকর্তা মনে হয় অনেক ক্ষমতাধর। তা না হলে এমন আয়োজনের অনুমতি কিভাবে পায়। তার উর্ধতন কর্মকর্তারা কি তা হলে সহকারী মাস্টারের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের পোস্ট অফিস চালায় ?
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোষ্ট মাস্টার (স্থানীয় ব্যবস্থাপনা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাওয়া মনির হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি অনেক আগে এই পোষ্ট অফিসে ছিলাম। আমি এখন অবসর নিয়েছি।
পোষ্ট অফিসের ভেতরে এমন বিয়ের আয়োজন কতটা আইনসিদ্ধ বা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনসিদ্ধ বা কতটুকু যৌক্তিক সেটা আমার জানা নাই। তবে আমি শুনেছি তিনি কার্যালয়ের ভেতরে বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি এনেছেন।
জানা গেছে, শহরের কালীরবাজার এলাকায় অবস্থিত প্রধান ডাকঘরের কার্যালয়ের ভেতরে সহকারী পোষ্ট মাস্টার মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলের বিয়ের জন্যই এতো আয়োজন করা হয়েছিল। কার্য্যালয়ের ভেতরে বর ও কনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। আর বাইরে সামিয়ানা ও প্যান্ডেল ঘিরে অতিথিদের জন্য করা হয় রান্না। এরআগে শুক্রবার সন্ধ্যায়ও বিয়ের আয়োজনে অংশ নিয়েছে অসংখ্য অতিথিগণ।
তবে এমন অনুষ্ঠান কিভাবে করছেন জানতে চাইলে অনুমতি আছে বলে জানান, আয়োজক সহকারী পোষ্ট মাস্টার মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি জানান, আমি এখানে দায়িত্বে আছি। আমার ছেলের বিয়ে হচ্ছে। আমি পারমিশন এনেছি। কোন কাগজ নেই। মৌখিক ভাবে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে ডাক বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা আসবেন বলেও তিনি জানান।
ঢাকানিউজ২৪.কম / জেডএস/বিশ্বজিৎ দাস
আপনার মতামত লিখুন: