• ঢাকা
  • শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

খাগড়াছড়ির আলুটিলায় সুপেয় পানির সন্ধান 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৩ পিএম
আলুটিলায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে
সুপেয় পানির সন্ধান 

রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি:  খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ উচুঁ পাহাড় আলুটিলায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৪ শ ফুট মাটি খনন করে  আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্যে বৌদ্ধ বিহারে  সুপেয় পানির সন্ধান মিলেছে। যা বিহারের ভিক্ষুকদের পাশাপাশি আলুটিলা পর্যটন এলাকা ও আশেপাশে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের  দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে কোন সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই বিহার কমিটির নিজস্ব অর্থায়নে এ পানির ব্যাবস্থা করেছেন। তবে একই এলাকায় আরো বেশ কিছু স্থানে খাবার পানির সংকট নিরসনের লক্ষে  ১ হাজার ১০ ফুট  পর্যন্ত মাটি খনন করা হলেও  পানির উৎস্ পাওয়া যায়নি।

এক সময় আলুটিলা পর্যটন এলাকার স্থানীয় উপজাতীয়দের পানির একমাত্র উৎস ছিল আলুটিলা সুরঙের জলাধার।  সেটিও নানা কারণে ব্যবহার অনুপযোগিতা হওয়ায় এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রান্নার কাজে ব্যবহার ও খাবার পানির সংকট প্রকট আকার ধারণা করেছিল। তাই বৌদ্ধ বিহার এলাকায় সুপেয় পানির সন্ধান পাওয়ায় স্থানীয় ত্রিপুরা, মারমাসহ উপজাতিদের মধ্যে স্বস্থি ফিরেছে।  

আলুটিলা আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বিহারটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দীর্ঘ ২৩ বছর পর খাগড়াছড়ির সর্বোচ্চ উঁচু এই পাহাড়ে মাত্র ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ৪ শত ফুট মাটি খনন করে বিশুদ্ধ পানির সন্ধান পাওয়া সত্যিই যেন এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। 
এটি খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়নের  ২০৪ নং আলুটিলা মৌজায় অবস্থিত।

আলুটিলা পাহাড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু। পাহাড়ি এ জেলার অন্যতম বড় সমস্যা বিশুদ্ধ পানির।  উঁচু নিচু পাহাড় এলাকার অধিকাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। তাই জীবন ধারণের জন্যে ঝিড়ি-ঝর্ণা পানিই এসব জায়গার মানুষের একমাত্র উৎস। বর্ষা ছাড়া বছরের অন্য মৌসুমে সেখানে পানি সরবরাহ থাকে না বললেই চলে। যেটুকু পাওয়া যায় তা সংগ্রহ করা বেশ র্দুসাধ্য।

আলুটিলা এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে অবসর প্রাপ্ত ডা. ক্যথোয়াই চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং ২ লক্ষ টাকা দান করেন। পরে আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্যের দায়ক-দায়িকা ও স্থানীয়দের সহযোগিতার বাকি টাকা সংগ্রহ করে  এ পানির ব্যাবস্থা করা হয়েছে। 

আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাইথোঅং মারমা বলেন, এই মহান কাজটির উদ্যোক্তা হলেন ক্যথোয়াই বাবু। আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে  পানি দান হলো সবচেয়ে বড় দান। তিনি চ্যালেঞ্জ করে সারাদেশের মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন পাহাড়ে পাথর খনন করে সুপেয় পানি পাওয়া সম্ভব। তার এমন উদ্যোগে আমরা সকলেই সাধ্য মতো সহযোগিতা করেছি। বর্তমানে পানি সংরক্ষণের জন্য পানির ট্যাংক  ও মাটি ক্ষয় রোধ তথা পরিবেশ রক্ষা করার জন্য আরসিসি ওয়াল করতে ৫ লক্ষ টাকা খরচ হবে। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ বা সরকারি কোন খাত থেকে সহযোগিতা পেলে অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করতে পারবো।

পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্যজরী মারমা বলেন, খাগড়াছড়ির সবচেয়ে উঁচু পাহাড় হলো আলুটিলা। পাথর খনন করে মাত্র ৪শ ফুটে সুপেয় পানি সন্ধান পাওয়া খাগড়াছড়ি তথা তিন পার্বত্য জেলার জন্য সুখব।  আমরা শুধু এই চৈত্যের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকবো না। এখানে কয়েকটি ত্রিপুরা পাড়া আছে। তারা সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। তাদেরকে বিনামূল্যে আমরা সুপেয় পানি প্রদান করবো। 

তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের অন্যতম সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট। পাহাড়ের উন্নয়ন করতে হলে আগে পানির সমস্যা সমাধান করতে হবে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত পানির সুবিধা পেলে এখানকার জীবনমান উন্নত হবে। 

আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্যের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত পঞ্ঞা ওয়েংসা মহাথের বলেন,  কর্মই হল মানুষের ধর্ম। ডা. ক্যথোয়াই চৌধুরী এমন কাজ করে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন। তার এই পূর্ণ্য কর্মের জন্য  নির্বাণ পাওয়া হেতু কামনা আশীর্বাদ করছি। আমি তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

মিস্তী নবী হোসেন বলেন প্রায় সাড়ে ৩ মাস রাত দিন কাজ করে সুপেয় পানির সন্ধান মেলে। ১ হাজার ফুট খনন করার পরও আর কোন সুপেয় পানি সন্ধান পাওয়া যায় নি। পরে ৪শ ফুটে পানির স্তর ভালো থাকায় সেখানে ফিল্টার দিয়েছি। এটার জন্য আমরা যথেষ্ট পরিমাণ কষ্ট করেছি। কষ্ট হলেও খাগড়াছড়ি সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড়ে কাজ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। 

উদ্যোক্তা ডা. ক্যথোয়াই চৌধুরী বলেন, আলুটিলা আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার  ২৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানকার ভিক্ষুসহ সাধারণ মানুষ এর আগেও বিশুদ্ধ পানির অভাবে থাকতো। অনেক সময় অনুষ্ঠানের জন্য সদর থেকে বিশুদ্ধ পানি এনে ব্যবহার করতে হতো।

আমি অবসরে যাবার পর পানির সমস্যা সমাধানের জন্যে এই উদ্যোগ নিই, যখন আমি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করি তখন আমার অবসরের প্রাপ্ত ২ লক্ষ টাকা দিয়ে সকলের পরামর্শ নিয়ে কাজ শুরু করি। তবে আমার এ কাজের জন্য সকলে হাত বাড়িয়েছে। এখন এই স্থাপনার মাধ্যমে সাংকসস্ নগর বিহারের ভিক্ষুদের পাশাপাশি আশেপাশে কয়েকটি পরিবার সুপেয় পানি পান করতে পারবে।

উপকারভোগী তনয় ত্রিপুরা বলেন, অনেক বছর পর আমরা নিরাপদ পানি পান করতে পারবো। মারাত্মক রোগবালাই থেকেও রক্ষা পাবো।

খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান বলেন, এটি খাগড়াছড়ি জেলাবাসীর জন্য সুখবর। তবে পাহাড়ের উপরে মাত্র ৪শ ফুট নিচ থেকে পানির উৎস কতোটা স্থায়িত্ব হবে তা সন্দেহজনক।  তবে আমি সময় করে পরিদর্শনে যাবো।

আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এসব স্থাপনা উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image