মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে সাম্প্রতিক ডাকাতি ও চুরির ঘটনাবৃদ্ধি পেয়েছে । চলতি বছরে ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক নেতারা। পুলিশ বলছে, বেশির ভাগ ঘটনা জেলে বসে পরিকল্পনা হচ্ছে আর জেলা থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েও আন্তঃজেলার ঢাকাতরা সংঘটিত করেছে দুর্ধর্ষ ডাকাতি।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের উপজেলায় ১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া চুরি-ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। এসব ঘটনায় অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা। তবে সব কটি ডাকাতির ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ১৩টি ডাকাতিরঘটনায় গ্রেপ্তার ৮৩ জনের মধ্যে ৭৯ জনই ময়মনসিংহ জেলার বাইরের বাসিন্দা। প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা দিনে ভ্যান-ইজিবাইক চালানো ছাড়াও শ্রমিকের কাজ করত। জেলে বসেই তারা ডাকাতির পরিকল্পণা করতো। একের পর এক ডাকাতি ও চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
আরও জানা গেছে, গত ২০ জুলাইরাত সোয়া ৯টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা বাজারে ডাকাত দল প্রকাশ্যে গুলিকরে এক মিনিটে লুটকরে স্বর্ণের দোকান। পরে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালায় ডাকাত দলের সদস্যরা। এ ঘটনার দুই মাসের মাথায় ২৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে নান্দাইল বাজারে দুটি স্বর্ণের দোকান লুট করে ওই ডাকাত দল।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ২০ থেকে ২৫ জনের ডাকাত দল বাজারের সাতজন পাহারাদারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে। পরে বেঁধে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্থান ত্যাগ করে তারা।
এ সময় তারা মুক্তা জুয়েলার্স থেকে ৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৪০ ভরিরুপা এবং বিসমিল্লাহ জুয়েলার্স থেকে ১৩ ভরি স্বর্ণ ও ৫০ ভরি রুপার অলংকার, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় লুণ্ঠিত ১১ আনা স্বর্ণালংকার ও ৭০ ভরি রুপার অলংকার উদ্ধারসহ সাতজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডে নিউভিশন মেডিসিন পয়েন্ট ফার্মেসিতে ডাকাতি স্টাইলে করা হয় দুর্র্ধষ চুরি। নগদ ৬ লাখ টাকাসহ প্রায় ২৮ লাখ টাকার ওষুধ চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ আসামি ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে।
নান্দাইলের স্বর্ণের ব্যবসায়ী মো.সাগর বলেন, ‘দোকান লুট হওয়ার পর থেকে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি। আতঙ্কের মধ্যে আছি। কয়েকজন ডাকাত ধরা পড়লেও আমাদের ভয় কোনোভাবেই কাটছেনা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শিব্বির আহম্মেদ লিটন বলেন, এখনই এসব ঘটনার টুঁটি চেপে না ধরতে পারলে আগামী প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি সফিকুল ইসলাম বলেন, ডিবির হাতেই ডাকাতির ১২ মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলার কারণ অনুসন্ধান করে আসামি ও লুণ্ঠিত মাল উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহে ডাকাতির কথা স্বীকার করে জেলা পুলিশসুপার মো. মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানেই ওইসব ডাকাতরা ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ময়মনসিংহের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার কারণেই তারা আলোচনায় এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন মামলা রয়েছে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেই সংঘবব্ধ হয়ে আবারও ডাকাতির কাজে লিপ্ত হচ্ছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: