নিউজ ডেস্ক : এবছরের বর্ষা মৌসুমেও প্রায় ডেঙ্গুমুক্ত শহরে রুপান্তরিত হয়েছে ভারতের কলকাতা। চলতি বর্ষা মৌসুমেও প্রায় তিন কোটি মানুষের শহরটিতে ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যা তিনশ অতিক্রম করেনি। অথচ গত বছরেও পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার। মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে এই চিত্র।
ডেঙ্গুতে প্রায় মহামারি অবস্থা বাংলাদেশে। সেখানে প্রতিবেশী ভারতের এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই স্বস্তির হওয়ায় বিষয়টি অনেকেরই নজরে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে আগের চেয়ে সাধারণের মানুষের সচেতনা বেড়েছে । তাই এমন ফল পাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী।
জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে চলতি বর্ষা মৌসুমে বেসরকারিভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের গণ্ডি পার করেনি। আর গোটা ভারতের চিত্র গতবছরের তুলনায় শুধু স্বস্তিরই নয় বরং বিস্ময়করও। ভারতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের বেশি।
সরকারি তথ্যানুসারে, গত বছর ভারতের রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র শাসিত ৩৬ প্রদেশে ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৩০৩ জনের। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার। আর মৃত্যু হয়েছিল ৩৩ জনের।
যদিও বেসরকারি হিসাবে সংক্রমণ-মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি বলে দাবি করা হয়।
তবে চলতি বছরে ভারতে এখন পর্যন্ত সার্বিকভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্য আগের যে কোনো বছরের তুলনায় স্বস্তি দেয়ার মতো বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
কলকাতা পৌরসংস্থার প্রধান পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করেনি। আর মৃত্যুরও কোনো পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। কলকাতার নগর ব্যবস্থাপনা করে কলকাতা পৌরসংস্থা। মূলত তাদের তিনস্তরের ডেঙ্গু মোকাবিলা উদ্যোগই এমন সুফল।
তিনি বলেন, পরপর তিন বছর করোনার কারণে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ। তবে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করল তখন থেকেই আমরা আমাদের পরিকাঠামোকে শতভাগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি।
আরও বলেন তিনি, আমাদের ১৪টি ডেঙ্গু ডিটেকশন সেন্টার রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক ওয়ার্ডে ত্রিস্তরীয় নজরদারি চলে। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ছয় থেকে আটজন করে ট্রেন্ড ওয়ার্কার রয়েছেন। যারা প্রত্যেকদিন কোথাও জমে থাকা পানি রয়েছে, ডোবা রয়েছে কিনা, রাস্তায় কোথাও অপরিষ্কার রয়েছে বা পরিত্যাক্ত জমি রয়েছে কিনা কিংবা যেখানে ডেঙ্গুর লার্ভার উৎপত্তি হতে পারে সেরকম কোনো জলাশয় রয়েছে কিনা সেই তথ্য সংগ্রহ করেন।
এরপর রয়েছে ড্রোনের নজরদারি। শুধু রাস্তায় বা মাটিতে নয়, ছাদের ওপরে ট্যাংকির ঢাকনা খোলা রয়েছে কিনা, ছাদে পরিষ্কার পানির কোনো ভান্ডার রয়েছে কিনা কিংবা যেখানে ডেঙ্গুর লার্ভা জন্ম হতে পারে এমন কোনো জায়গা রয়েছে কিনা সেখানেও নজরদারি করা হয়। এ ধরনের নজরদারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি কলকাতা করপোরেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ তিনস্তরের ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনস্তরের প্রথম স্তরে ওয়ার্ড ভিত্তিক। প্রথমে দেখেন সেখানে পুরো বিষয়টি দেখভাল করে ওয়ার্ড ভেক্টর কন্ট্রোল ইনচার্জ। এরপর দ্বিতীয় ধাপ বরো। সেখানেও রয়েছেন একজন ভিক্টর কন্ট্রোল ইনচার্জ। তাকে সাহায্য করার জন্য রয়েছে বড় র্যাপিড অ্যাকশন টিম। প্রত্যেক টিমে আবার রয়েছেন ছয় থেকে ৮ জন করে ট্রেন্ড কর্মী। এরপর রয়েছেন কেন্দ্রীয়ভাবে একজন সিনিয়র এন্টোমলজিস্ট এবং তিনজন ফেক্টর কন্ট্রোল অফিসার এবং সবার উপরে মুখ্য পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।
তিনি পুরো ব্যবস্থাপনার জন্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথাও স্মরণ বলেন, কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র বিধায়ক অতীন ঘোষের ফগার দিয়ে মশা নিধন সম্ভব নয় এই স্লোগানটিই যে শতভাগ বাস্তব সেটা আমরা কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি। মূলত তার ব্যবস্থাপনার জন্যই আজ কলকাতার ডেঙ্গু পরিস্থিতি মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: