
মশিউর রহমান সেলিম,কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লায় লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউপির রামারবাগ গ্রামে পৈত্রিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে চাচা-চাচীকে পিটালো আপন ভাতিজারা এবং বসত বাড়িতেব হামলা ভাংচুর ভাতিজাদের বেদম মারধরে ও লাঠিসোঁটার আঘাতে স্থানীয় আতাকরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চাচী হাজেরা আক্তার রুবি গুরুতর আহত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহত হাজেরা আক্তার রুবি (৪২) সে উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক বশির উল্লাহ বাচ্চুর স্ত্রী।
এ ঘটনায় স্বামী বশির উল্লাহ বাচ্চু বাদী হয়ে রবিবার সন্ধায় লাকসাম থানায় রামারবাগ গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, তাছলিমা আক্তার ও ঘাটার নোয়াগাঁও মৃত মমতাজ মিয়ার ছেলে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
গত শুক্রবার রাতে ওই গ্রামে হামলার ঘটনায় পুলিশ জরুরি সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রধান শিক্ষিকা চাচী হাজেরা আক্তার রুবি ভাসুর পূত্রদের মারত্মক আঘাতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
থানায় অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলা উপজেলার উওরদা ইউনিয়ন পল্লী এলাকা রামারবাগ গ্রামে মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে জামাল ও কামাল হোসেনের সঙ্গে মৃত হাজী আলী আশ্রাফ মিয়ার ছেলে বশির উল্লাহর বাচ্চুর পরিবারের সম্পর্ক চাচা ভাতিজা। দীর্ঘদিন ধরে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ ব্যাপারে একাধিক শালিস-দরবারও হয়েছে কিন্তু কোন পক্ষই একমত হতে পারেনি।
ফলে এর জের ধরে শুক্রবার রাতে বশির উল্লাহ বাচ্চু ও ভাতিজা কামাল এবং জামালের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ভাতিজা জামাল, কামাল, জামালের স্ত্রী তাছলিমা ও ভগ্নিপতি রুহুল আমিনসহ কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী মিলে দেশীয় অস্ত্র দা চুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে চাচা বশির উল্লাহ বাচ্চুর বসতঘরে প্রবেশ করে পুরো পরিবারের উপর হামলা ও ভাংচুর চালায়।
এ সময় বশির উল্লাহ বাচ্চু বাঁধা দিলে তাকে আঘাত করতে দেখে বশিরের স্ত্রী হাজেরা আক্তার রুবি ও তার সন্তানরা এগিয়ে আসে। কিছু বুঝে উঠার আগেই লাথি, কিল,ঘুষি ও দেশীয় অস্ত্র দা চুরি এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে সকলকে পিটাতে থাকে। এতে ভাসুর পুত্রদের চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত হয় চাচী হাজেরা আক্তার রুবি।
ভাতিজারা এসময় চাচী ও চাচাতো বোনের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। তাদের আর্ত চিৎকারে ঘটনাস্থলে এলাকাবাসী ছুটে আসতে শুরু করলে হামলাকারীরা চাচী হাজেরা ও মেয়ে বাধঁনের স্বর্ণালঙ্কার ও মুঠোফোন সেট নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে চলে যাওয়ার সময় তারা এ ঘটনায় কোন মামলা করলে বাদীকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয়।
স্থানীয়রা রক্তাক্ত শিক্ষিকা হাজেরা আক্তার রুবিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পথে বসতবাড়ীর সামনে হামলাকারীরা রাস্তা বন্ধ করে অটোরিকশাটি আটকে তাদের উপর পুনরায় হামলা চালায়। আহত ব্যক্তিদেরকে লাকসাম সরকারি হাসপাতালে নিলে কর্মরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী ভাবে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
অভিযুক্ত ভাতিজা জামাল ও কামাল হোসেন এব্যাপারে বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে চাচা বশির উল্লাহ ও তার স্ত্রী-সন্তানেরা আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ বিষয়ে চলতি বছরে ৫ মার্চ লাকসাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। ওই দিন রাতে হামলার ঘটনার কাউকে কোন আঘাত করা হয় নাই। চাচা বশির উল্লাহ বাচ্চু ও তার ছেলে রেদোয়ান ফোন করে ৭টি হোন্ডায় প্রায় ২০ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের বসতঘরে হামলা ভাংচুর করেছে।
অভিযোগের বাদী বশির উল্লাহ বাচ্চু বলেন, কামাল ও জামাল সম্পর্কে ভাতিজা হয়। তারা জোর পূর্বক আমার সম্পত্তি দখল করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। রাতে ভাতিজা জামাল-কামাল ও কয়েকজন সন্ত্রাসী আমার বসত ঘরে ঢুকে আমাকে মারধর শুরু করলে আমার সহধর্মিণী হাজেরা আক্তার রুবি এগিয়ে আসলে তাকেও এলোপাতাড়ি ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। হাজেরা আক্তার রুবি স্থানীয় আতাকরা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউপি‘র গোয়ালিয়ারা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা শাহআলমের মেয়ে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আনোয়ার হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং রবিবার রাতে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ভুইঁয়া এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি,তাদের বিরোধ মূলত সম্পত্তি নিয়ে, বশির উল্লাহ বাচ্চু নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইতিমধ্যে আমরা তদন্ত কাজও শুরু করেছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মো. মশিউর রহমান সেলিম/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: