• ঢাকা
  • বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কুমিল্লা ডাকাতিয়া নদীর পানি দূষনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০১:৩৮ পিএম
স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে মানুষের
ডাকাতিয়া নদীর পানি দূষন

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা : বর্ষাকাল, থৈ থৈ পানি থাকার কথা এ নদীতে কিন্তু পানি নাই যা টুকু আছে ময়লা- আর্বজনায় পরিবেশ দূষনে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের। কুমিল্লার লাকসাম , লালমাই ও  মনোহরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীটি এখন এলাকাবাসীর গলার ফাঁস।

জানা যায়, নদীটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্কারের অভাবে নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় তীরবর্তী হাজার হাজার একর জমিতে সেচ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। নদীবক্ষে মাইলের পর মাইল বালুচর জেগেছে। নদীতে পানি না থাকায় সেচ যন্ত্র বন্ধ; ব্যাহত হচ্ছে নানান ফসলের আবাদ। এককালের স্রোতস্বীনি ডাকাতিয়া বৃহত্তর কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলের ২০/২২ লাখ মানুষের ভাগ্যের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় আর্থসামাজিক অবস্থার উপর নদীটির বন্ধ্যাত্বের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। 

অপরদিকে, থামছে না নদীর দু’পাড়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ জবর দখল। দীর্ঘদিন ধরে দখল প্রক্রিয়া চলায় নদীটি এখন মরা খালে পরিণত। এতে সেচ সংকটে হাজার হাজার একর জমিতে কোটি কোটি টাকার ফসল উৎপাদন ব্যাহতসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ বৈরী হয়ে উঠছে। 

স্বাধীনতার ৫৩ বছর ধরে ওই নদীটির সংস্কার ও পূনঃ খনন  প্রকল্পটি ঝুলে আছে। তবে গত অর্থবছরে এ নদীটির লালমাই উপজেলা অংশে খনন কাজ করলেও অনেকটাই বির্তকিত। এছাড়া এ নদীটির সাথে সংযোগ উপজেলাগুলোর একাধিক খাল গত ২ বছরে খনন করা হলেও অনিয়ম. দায়িত্বহীনতা ও অর্থ অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের রাজনীতি ও অর্থনীতি অনেকটা ডাকাতিয়া নদী নির্ভর। নদীটিকে সামনে রেখে অনেকেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হচ্ছেন। কিন্তু জবর দখল মুক্ত কিংবা নদী সংস্কারে কেউ এগিয়ে আসেনি। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ফি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন আবাদী ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে সেচ সংকটের কারনে। পলি জমতে জমতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃহত্তর লাকসামের বাগমারা বাজার থেকে চিতোষী শান্তিরবাজার পর্যন্ত ৭০/৭৫ কিলোমিটার নদীটি শুকনো মওসুমে পানি শুন্য থাকে। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময়েই নদীতে পণ্য পরিবহন ও জন যাতায়াত বন্ধ হয়ে পড়ে। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা নানান ফসল উৎপাদনে দারুন হিমশিম খেতে হচ্ছে। চলমান বর্ষাকালের শুরুতে নদীটিতে পানি ভর্তি থাকার কথা থাকলেও কিন্তু পানি নেই, যা আছে তা আবার পরিবেশ দূষনের স্বীকার।  

সরেজমিনে জানা যায়, গ্রীষ্মের শুরুতে ইরি-বোরো মওসুমে পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তখন পানির জন্য এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে হাহাকার পড়ে। সময় মত জমিতে পানি দিতে না পারলে আর্থিকভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করছেন। এদিকে, কুমিল্লার লালমাই থেকে শুরু করে চিতোষী পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর দু’পাড় বিগত কয়েক বছরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। কোন কোন স্থানে নদীগর্ভেও দখলের প্রক্রিয়া চলছে। কোথাও কোথাও ডাকাতিয়ার তীরেই গড়ে ওঠেছে আবাসন প্রকল্প কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। জেলা, উপজেলা প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন। ১৩০ ফুট প্রস্থের ডাকাতিয়া এখন ৫০/৬০ ফুটে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে, ঘাঘৈর, চালতা তলিসহ ডাকাতিয়ার অন্যান্য শাখা খালগুলোও দখল হয়ে পড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। 

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, ডাকাতিয়ার পানিশুন্যতায় আবাদকৃত ফসলাদির উৎপাদন ৫০/৬০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। এ অঞ্চলের উৎপাদনযোগ্য প্রায় ২০ হাজার একর কৃষি জমিতে ৬/৭ মাসের ফসল দিয়েই নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পুরো বছর পার করেও বাইরের জেলায় সরবরাহ সম্ভব। কিন্তু নদীর বেহাল দশায় ৩/৪ মাসের ফসলও ঠিকমতো কৃষকদের ঘরে তোলা যাচ্ছে না। উপরন্তু অন্য স্থান থেকে খাদ্য এনে এ অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে হয়। আবার নদীতে মাছ শিকারী জেলে ও নৌকা বেয়ে মাঝি-মাল্লাসহ জীবিকা নির্বাহকারীদের অনেকেই পৈত্রিক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকেছে।

সূত্রটি আরও জানায়, এককালে ডাকাতিয়া নদীকে ঘিরেই দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো গড়ে ওঠে। বৃহত্তর লাকসামের সুপ্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র দৌলতগঞ্জ বাজার থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, ফরিদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রের সাথে বহু যুগ ধরে নৌ যোগাযোগ ছিল। বর্তমানে নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় সেসব বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর সাথে বৃহত্তর লাকসামের নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে এ অঞ্চলে নদীটিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বহু মন্ত্রী-এমপি, নেতা-নেত্রী। কিন্তু তা তাদের আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি আর কথার ফুলঝুড়িতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে; নদীর উন্নয়নে তা বাস্তবতার মূখ দেখেনি। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে ওই নদীটির উন্নয়ন ঝুলে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কারো যেন এ ব্যাপারে মাথা ব্যাথা নেই। 

অপরদিকে শুকনো মওসুমে পানিশূন্য থাকলেও সর্বনাশা ডাকাতিয়া বর্ষা মওসুমে অকাল বন্যায় কৃষকদের আবাদকৃত সকল ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। কৃষকদের স্বার্থে, এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ডাকাতিয়া নদীটি সংস্কার, বিভিন্ন পয়েন্টে সুইসগেট কাম-রেগুলেটর নির্মাণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থাপনসহ বেদখল হয়ে পড়া নদীর দু’পাড়ের হাজার হাজার একর জমি উদ্ধারে বছরের পর বছর এলাকাবাসীর দাবি, বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন-তদ্বীর, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও কর্তাব্যক্তিদের সুনজর পড়েনি এ নদীটির দিকে দাবী এ অঞ্চলের কৃষকদের। 

এ ব্যাপারে জেলা- উপজেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন ফলপ্রশু জবাব পাওয়া যায়নি। তবে অপর একটি সূত্র রাজনৈতিক চাপের কথা শিকার করে বলেন, ওই নদীটির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে স্থানীয় ভাবেই সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু আমরা এ অঞ্চলে পেটের দায়ে চাকুরী করতে এসেছি ইচ্ছা থাকলেও মুখ খুলতে পারছি না। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image