• ঢাকা
  • রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ জনশক্তি গঠনের মেগাপ্রকল্প সময়ের দাবী


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৬ আগষ্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:০২ পিএম
দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইভ মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে 
নার্সিং স্বাস্থ্যসেবা

অধ্যাপক ড: মোঃ আনিসুর রহমান ফরাজী
নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সারা বিশ্বে নার্সদের অত্যাধিক চাহিদা থাকা সত্বেও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বাংলাদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরী করা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শতাধিক বে-সরকারী নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।যেখানে নার্সিং, ও ব্যচেলর ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে।

তন্মধ্যে একই ছাঁদের নীচে নার্সিং এর বিভিন্ন কোর্স যেমন বিএসসি নার্সিং, এমএসসি নার্সিং, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারী, হেলথটেকনোলজি কোর্স ইত্যাদি নামে ও বেনামী শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও পঞ্চাশোর্ধ নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ঐ সমস্ত নামি ও বেনামী অনেক কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় এবং মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বোর্ড বা কাউন্সিল থেকে শিক্ষাগত সনদ এবং রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হয়। এসমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ না পেয়ে সার্টিফিকেট সর্বস্ব কিছু কিছু শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে রোগীদের ক্ষতিকর কাজ করে আসছে। যেখানে চিকিৎসার অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রতিদিন কোন না কোন খবরের কাগজের শিরোনাম হচ্ছে বা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অদক্ষ ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য পেশাজীবিদের দক্ষতার চিত্র ও রোগী অকালে মৃত্যুর করুণ ও হ্নদয় বিদায়ক চিত্র আমরা প্রতিদিনই দেখছি।

হাসপাতালে রোগীদর ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব নার্সদের থাকলেও সেখানে নার্সরা দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বা প্রতৃতভাবে নার্সিং পাচ্ছে না। যেহেতু মেডিকেল সার্ভিসটি একটি টিম ওয়ার্ক কিন্তু সমস্ত কিছু এড়িয়ে সমস্ত দূর্ঘটনার দায় আসে চিকিৎসকদের উপর যাহা অত্যন্ত অমানবিক ও দুঃখজনক।

পক্ষান্তরে এদেশের চিকিৎসক সমাজ নার্সদের কোনঠাঁসা করে রাখার কারণেও এ সম্পূর্ন অযৌক্তিক সমস্ত দায়-দায়িত্ব বিপত্তি ঘটেছে এবং তাদের উপরই বর্তাচ্ছে। যেহেতু নার্সিং এখন উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সেখানে বেসরকারী নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নার্স তৈরী হচ্ছে, তবে তাদের কর্মদক্ষতার মান দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিংহভাগ নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এতদপ্রেক্ষিতে কিছু মৌলিক বিষয় ও অনিয়ম যথাযথ ভবে তুলে ধরা হলো :

১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বেসরকারী নার্সিং কলেজ সমূহে শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা মানা হচ্ছে না। অনেক বেসরকারী নার্সিং কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম অর্থাৎ নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষের কাজ পরোক্ষ ভাবে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

২। দেশের বিভিন্ন নার্সিং ও মিডওয়াইফারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারী কাউন্সিলের নীতিমালা লঙ্ঘন করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যাহা বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কাউন্সিল নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। শিক্ষার্থী নার্সদের প্রশিক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার কোনো মনিটরিং সেল নেই। ফলে শুধুমাত্র কাগজে পত্রে নার্স তৈরী হচ্ছে।

৩। অনেক নার্সিং কলেজে কর্মরত শিক্ষিকা যাঁরা বিশ্ববিদ্যালযের নিয়মে ৬৫ বছর অতিক্রম করেছে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামের বাহিরে উপদেষ্টা , কো-অর্ডিনেটর ইত্যাদি পদে অধিষ্ঠিত করে বেসরকারী নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ অল্প বেতনে কাজ করাচ্ছেন। মূলত তারা বে-নামে কলেজের অধ্যক্ষের পদের বিপরীতেও অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রশাসনিক কাজ চালাচ্ছেন। জুনিয়র পর্যায়ে কোনো গ্রাজুয়েট নার্স দিয়ে প্রিন্সিপালের নাম শো করছেন। 

৪। অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নার্সিং শিক্ষক/ শিক্ষিকাগণ অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিভিন্ন বেসরকারী নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার কাজ করছেন যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেই। খন্ডকালীন শিক্ষক শিক্ষিকাগণ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী শিক্ষার কোন মান দন্ড কেউ রক্ষা করছেন না।
তারা শুধুই থিউরি পড়াচ্ছেন। অন্যদিকে বেসরকারী অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স শিক্ষক, শিক্ষকতার চাকুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।কারণ খন্ডকালীন নার্স শিক্ষক দিয়ে অল্প খরচে তারা শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

৫। পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তরে কর্মরত কিছু সংখ্যক পোষ্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী প্রাপ্ত নার্স এসব অনিয়মতাত্রিক কাজে জড়িত আছেন এবং নিয়নারসহ কলেজ অব নার্সিং এর শিক্ষক শিক্ষিকাগণ এসব কাজে জড়িত আছেন।

৬। ঢাকার অদূরে একটি স্বনামধন্য নার্সিং কলেজে অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে সহকারী অধ্যাপক পদে একজন চিকিৎসক নিয়োগ পেয়েছেন, কিন্তু ডিন অফিস ম্যানেজ করে কোনদিন নার্সিং কলেজের কোন ক্লাস নেন না। বরঞ্চ তিনি সংশ্লিষ্ট নার্সিং কলেজের বাইরে পরীক্ষক হিসেবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও হেলথ্ টেকনোলজি ইউনিট, ফিজিওথেরাপী কলেজ ইত্যাদি অনেক কলেজের অনেক সাবাজেক্ট এর পরীক্ষক হিসেবে পরীক্ষা নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মহোদয় অবগত আছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বেসরকারী নার্সিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সঠিক ভাবে দেশে দক্ষ প্রশিক্ষিত নার্স তৈরীর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর দেখাদেখি দেশের অন্যান্য বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিনস্ত নার্সিং কলেজ ও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কাউন্সিলের অধিনস্থ নার্সিং ও মিডওয়াইফারী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ যথাযথ ভাবে হচ্ছে না।

ফলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশের দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরী বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এদেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফদের বহি:বিশ্বে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এদের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক রিমিটেন্স অর্জন করতে পারে।এতদপ্রেক্ষিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্দ্যোগে দেশে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরী করা এখন সময়ের দাবী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে দক্ষ নার্স ও মিডওয়াইফ তৈরী করার এক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। 

লেখক : অধ্যাপক ড: মোঃ আনিসুর রহমান ফরাজী

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image