
অলোক আচার্য
নবান্ন শব্দটির অর্থ নব অন্ন। নব অর্থ নতুন আর অন্ন অর্থ খাদ্য (ধান)। মোট কথা নবান্ন শব্দটির সাথে নতুন ধান ওঠার সম্পর্ক রয়েছে। কার্তিক মাসের শুরুতেই কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানে পূর্ণ হতে থাকে। কৃষক-কৃষাণিরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে সেই ধান কাটা,শুকানো,মাড়াই এবং এরপর সেই ধান ঢেঁকিতে গুড়া করে বহুবিধ পিঠা-পায়েস ইত্যাদি তৈরিতে। এটা যে ঋতুতে হয় সেটি হেমন্ত। প্রকৃতির রোষানলে ষড়ঋতুর যে দুই ঋতু এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে তার একটি হলো হেমন্ত। বাংলার প্রতিটি ঋতুর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট। ভিন্ন ভিন্ন রুপ। সব মিলিয়েই এই বাংলা। হেমন্তের মাঠ-ঘাট, শিশির ভেজা সকাল, মাঠের পাকা সোনালী ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলার দৃশ্য, ঘরে ঘরে ডোলা ভর্তি ধান, কৃষক-কৃষাণির আনন্দ সবই হেমন্তের রুপের অণুষঙ্গ।
বৈচিত্র্য রুপের সাজে প্রকৃতিতে হেমন্ত বিরাজ করে। হেমন্ত ঋতুতে চলে শীত-গরমের খেলা। হেমন্তের শুরুতে এক অনুভূতি আর শেষ হেমন্তে অন্য অনুভূতি। ভোরের আকাশে হালকা কুয়াশা, শিশিরে ভেজা মাঠ-ঘাট তারপর ক্রমেই ধরণী উত্তপ্ত হতে থাকে। বাংলার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ীই এদেশ ষড়ঋতুর দেশ। পালা করে প্রকৃতি একে এক তার ছয়টি রুপ আমাদের সামনে আনে। আমরাও অপেক্ষায় থাকি দুই মাস অন্তর অন্তর ঋতুর পালাবদলের।
আমাদের জীবনযাত্রায় এসব ঋতু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের ফসল উৎপাদন এবং ঋতু নির্ভর ফল ঋতু বদলের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঋতু বদলের সাথে সাথে প্রকৃতি ভিন্ন বৈচিত্রে হাজির হয়। প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সাথে আমাদের মনেও বৈচিত্র্য আসে। প্রিয় ঋতুর তালিকায় ভিন্ন মত আছে। তবে সৌন্দর্যের তালিকায় হেমন্তের আলাদা কদর রয়েছে। কারণ হেমন্ত হলো নবান্ন উৎসবের ঋতু। নতুন ধানে ঘরে ঘরে পিঠা-পুলি-পায়েস তৈরির ধুম এই ঋতুতেই শুরু হয়। সারা বছরের মহাজনের কাছ থেকে ধার নেওয়া পাওনা পরিশোধের সুযোগ হয় ফসল ঘরে ওঠার পরেই। সারা বছরের মুখের অন্নের যোগানও আসে এ সময়। হেমন্ত তাই সুখ-সমৃদ্ধির কাল। তাই মুখের হাসিটা অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই থাকে কার্তিকের নবান্নের দেশের মানুষের। হেমন্ত এলে পাল্টে যায় প্রকৃতি ও মানুষ। গ্রামের পরিবেশে আনন্দ বিরাজ করে। গ্রাম্য মেলা,ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস বানানোর আয়োজন, ঢেঁকির শব্দ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতিকে বরণ করে নেয় হেমন্তে। হেমন্তের এই নবান্ন উৎসব আমাদের একটি ঐতিহ্য। সেই অতীত কাল থেকেই গ্রাম বাংলায় ধুমধামের সাথে পালন করা হয়ে থাকে। এই উৎসব ঘিরে গ্রামে বিরাজ করে আনন্দ। একসময় যাত্রাপালা,গান নিয়ে মেতে থাকতো এই সময়। এখন সময়ের সাথে সাথে এসব ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। যেভাবে হেমন্ত ঋতুই প্রায় হারিয়ে গেছে। সেভাবেই নবান্ন উৎসবের কথাও কেবল বইয়ের পাতায় লেখা থাকবে।
সাংবাদিক ও লেখক পাবনা।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: