• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কুমিল্লায় ড্রেজিং বানিজ্যে পরিবেশ ঝুঁকি বাড়িঘর ভাংছে মানুষের


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৪০ পিএম
ড্রেজিং বানিজ্যে পরিবেশ ঝুঁকি বাড়িঘর ভাংছে মানুষের
ড্রেজিং বানিজ্যে পরিবেশ ঝুঁকিতে

মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা : কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চল লাকসাম পৌরএলাকা, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন, নবগঠিত লাইমাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, নাঙ্গলকোট উপজেলার পৌরশহর সহ ১২টি ইউনিয়ন ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পরিবেশ ও জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে ভরাট করা হচ্ছে নদী-খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, দিঘী-নালা, জলাশয়সহ নিচু জমি। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক আশংকা এবং মানুষের বাড়িঘর ভাংলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কারো যেন মাথাব্যথা নেই।

এছাড়া এ অপকর্মের ফলে এ অঞ্চলের কয়েক হাজার একর আবাদী কৃষি জমিসহ এলাকায় ড্রেজিং বানিজ্যে পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে এ ব্যাপারে লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলা প্রশাসন জিরো টলারেন্স। ইতি মধ্যে পুরাতন ডাকাতিয়া-নতুন ডাকাতিয়া নদীসহ বেশ কিছু এলাকায় ড্রেজার জব্দ করে ধ্বংস করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলেও অপরাপর উপজেলাগুলোর প্রশাসন রহস্য জনক কারনে রয়েছে নিরব দর্শক। বিশেষ করে লাকসাম উপজেলার মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউপির নাগঝাটিয়া, কাঠালিয়া, আউশপাড়া, চিকুনিয়া, পাশাপুর, নগরীপাড়া, মুদাফরগঞ্জ ইউপির কাকৈয়া, হামিরাবাগ, সালেপুর, টোরা হামিরাবাগসহ মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্নস্থানে অবৈধ ড্রেইজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এর পিছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের একটি চক্র জড়িত রয়েছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এলাকার পৌরশহর এলাকা ও উপজেলা ৪টির বিভিন্ন স্থানে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে অবাধে বালু উত্তোলনে ভরাট করায় কমে যাচ্ছে এলাকার খাল-পুকুর,জলাশয়, দিঘি-নালা ও নিচু জমিসহ আবাদী কৃষি জমি। এ অঞ্চলে  আগে শুকনো মওসুমে ডাকাতিয়া নদীতে বালু উত্তোলনে ভরাট প্রক্রিয়া চললেও বর্ষা মওসুমের শুরু থেকে অদ্যবধি মহোৎসবের মত প্রতিযোগিতায় অবৈধ ভাবে ড্রেজিং মেশিনের সাহায্যে পার্শ্ববর্তী নতুন-পুরাতন ডাকাতিয়া নদী ও সংযোগ খাল কিংবা ফসলি জমি থেকে মাটি সংগ্রহ করে পুকুর-ডোবা-নালা ভরাট কার্যক্রম চলছে দেদারচ্ছে। এদিকে লালমাই-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহা সড়কের পশ্চিম পাশে সড়ক বিভাগ ও রেলওয়ের প্রচুর জায়গা থাকা সত্বেও সংশ্লিষ্ট কৃর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলের পানি নিস্কাশনের এক মাত্র মাধ্যম বেরুল্লা খালটি ভরাট করে  ৪ লেন সড়কের কাজ করার ফলে ঐতিহ্যবাহী বেরুলা খালটি আজ তার অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। অপরদিকে মনোহরগঞ্জের শাহাপুর-মহড় সড়কটি ভেঙ্গে পাশ্ববর্তী খালে পড়ে যায়।

সূত্রটি আরও জানায়, এছাড়া জেলার দক্ষিণাঞ্চলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক পেশি শক্তির অনেকের বিরুদ্ধে নানাহ পকেট বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এক শ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহলের এহেন অপতৎপরতা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। লাকসাম-নাঙ্গলকোট পৌরশহরসহ উপজেলা ৪টির বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ ও জলাধার আইন লংঘন করে এক শ্রেণীর দুর্নীতি পরায়ন ব্যাক্তিদের যোগসাজশে যত্রতত্র প্রকাশ্যে চলছে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে পুকুর-দীঘি-নালা ভরাটের মহোৎসব। আর এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ফলে এলাকার পরিবেশ ক্রমেই বিপন্নের পথে এগুচ্ছে এবং বাড়িঘর ভাংছে মানুষের।

সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নতুন-পুরাতন ডাকাতিয়া নদীসহ সংযোগ খালগুলো থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন হলেও প্রশাসন রয়েছে নিরব দর্শক। অপরদিকে লাকসাম ও মনোহরগঞ্জের চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রতিনিয়ত ওই উপজেলা ২টি কোন না কোন স্থানে ডাকাতিয়া নদীসহ খাল-বিল ও পুকুর-ডোবা ভরাটের কাজ চলছে।

পুকুর-ডোবা-নালা ও নিচু জমি ভরাট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন ওই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ। উপজেলা ৪টির সবক’টি ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলন ও ভরাট প্রকল্প জমে উঠায় এ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানি রাস্তায় গড়িয়ে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং কোন কোন এলাকার বাড়িঘর ভেঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছে ও অপরিকল্পিত খাল খনন-সড়কের উন্নয়নের কারনে লাকসাম-শালেপুর, লাকসাম-আউশপাড়া হয়ে মুদাফরগঞ্জ সড়কের দুপাশের বাড়িঘর, গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে।

স্থানীয় আরেকটি সুত্র জানায়, উপজেলাগুলোতে অবাধে পুকুর-দিঘি-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতাসহ মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও স্থানীয় ভূমি খেকোদের দমাতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। পুকুর-ডোবা-নালা ভরাটের বিষয়ে তারা আইনের আশ্রয়সহ জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করেন।

এ ব্যাপারে জেলার দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, পরিবেশ ও জলাদার আইন লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের কথা শিকার করলেও এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে জেলা পরিবেশবাদীদের একাধিক সুত্র বলছেন, পুকুর-দীঘি ভরাট বন্ধে স্থানীয় সরকার কাঠামো অত্যান্ত দূর্বল বিধায় এবং সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে ভুমি দস্যুরা উৎসাহিত হচ্ছে। জেলা দক্ষিণাঞ্চলের ৪টি উপজেলার ও ২টি  পৌরশহরের যত্রতত্র পুকুর- দীঘি ভরাট হতে থাকলে এলাকার পরিবেশ হবে বিপন্ন।

এতে অল্প বৃষ্টিতে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভরাটকৃত পুকুর-দীঘির বিষয়ে একাধিক মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভরাট হওয়া পুকুর-দীঘির মালিকদের নাম- ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় মামলা দায়েরে সমস্যা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ড্রেইজার ব্যবসায়ী সেন্ডিকেটের জনৈক সদস্য বলেন, আমরা স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকার বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে এ ব্যবসা চালাচ্ছি। আপনারা সাংবাদিক লেখালেখি করলে আমাদের কিছুই হবে না।

ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image