• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৩ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কায় কী করা হয়েছে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৪৩ এএম
বৃদ্ধি ও মুদ্রার একক বিনিময় হার নিশ্চিত করা
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কায়

রেজাউল করিম খোকন

শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির একটি কারণ ছিল দেশ থেকে অর্থ বেরিয়ে যাওয়া। সেটা হতো মূলত আমদানির মাধ্যমে, যার মূল্য পরিশোধ করতে হতো ডলারে। ডলার বেরিয়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য কমে যায়, যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। নতুন গভর্নর আসার পর সরকার তাকে স্বাধীনভাবে দুটি কাজ করার সুযোগ দেয়। মূলত যে দুটি খাতে তিনি হাত দেন তা হলো, নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও মুদ্রার একক বিনিময় হার নিশ্চিত করা।

অন্যান্য দেশের মতো শ্রীলঙ্কায়ও মুদ্রার অনানুষ্ঠানিক বাজার আছে, সেখানকার কারসাজির কারণেও মুদ্রার বিনিময় হারে প্রভাব পড়ে, মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তবে মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা করলেও নীতি সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা গেছে। শ্রীলঙ্কার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সংকটের চূড়ান্ত সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪৯ শতাংশের বেশি। আরেকটি খাতে শ্রীলঙ্কা গত এক বছরে অনেক ভালো করেছে। সেটা হলো শ্রমশক্তি রপ্তানি। বস্তুত গত বছর বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে দেশটি।

২০২২ সালে দেশটির ৩ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ কাজের জন্য বিদেশে গেছেন, যাদের মধ্যে চিকিত্সক, প্যারামেডিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতো অনেক উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আছেন। এরা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর কারণে গত এক বছরে দেশটির প্রবাসী আয় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে আইএমএফের ঋণের সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত থাকে। এসব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষেই ঋণ দেওয়া হয়। এতে অনেক দেশ উপকৃত হয়, আবার অনেক দেশ বিপদে পড়ে। তবে শ্রীলঙ্কা এবার আইএমএফের ঋণের বেশির ভাগ শর্ত ভালোভাবেই পূরণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

যখন কোনো দেশ ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অন্য বাজার যখন তাকে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে, তখনই তারা সাধারণত আইএমএফের দ্বারস্থ হয়। এসব ক্ষেত্রে আইএমএফ স্বল্প সুদে ও স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়। আইএমএফ কোনো বিপদগ্রস্ত দেশকে ঋণ দিয়েছে এটা জানলে সেই দেশ সম্পর্কে বাজারও আশ্বস্ত হয়। তখন অন্যরাও এগিয়ে আসে। তবে আইএমএফের ঋণের সঙ্গে নানা ধরনের শর্ত থাকে। এসব শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষেই ঋণ দেওয়া হয়। এতে অনেক দেশ উপকৃত হয়, আবার অনেক দেশ বিপদে পড়ে।

তবে শ্রীলঙ্কা এবার আইএমএফের ঋণের বেশির ভাগ শর্ত ভালোভাবেই পূরণ করতে পেরেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আইএমএফের শর্ত মেনে শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যে রাজস্ব খাত সংহত করেছে। কর্তৃপক্ষ ভর্তুকি কমিয়ে এনেছে এবং করহার ও করের জাল বাড়িয়ে আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জনের দিকে বেশ এগিয়েছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ঘুরে দাঁড়ানো শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে আমাদের  শিক্ষণীয় কিছু তো আছে। তারা যেভাবে বড় সমস্যা মোকাবিলা করে এখন স্থিতিশীল হচ্ছে, সেটাই শিক্ষণীয় বিষয়। এক্ষেত্রে কী শেখা যেতে পারে?

বাংলাদেশে এখনো বিদেশি মুদ্রার সংকট আছে, যার প্রভাব অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও পড়েছে। সে কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তাদের গভর্নর যেভাবে এই সংকট মোকাবিলায় নায়ক হিসেবে বেরিয়ে এসেছেন, তা খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়। তারা আগের নীতি থেকে সরে আসছে। কৃষি খাতে আগের ভুল নীতি থেকে সরে এসেছে। পর্যটন খাত চাঙ্গা করা, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার মাধ্যমে তারা রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। রাতারাতি কিছু হচ্ছে না, ধীরে ধীরে হচ্ছে, সেটাই নিয়ম। তবে তারা ঠিক পথেই আছে। শ্রীলঙ্কার সব সংকট এখনো শেষ হয়নি। তাদের ঘাড়ে এখনো বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা আছে। সেই ঋণ পরিশোধ করতে অর্থনীতির চাকা আরো সচল করতে হবে। সেটা করতে গেলে আবার অর্থনীতিতে অর্থের সঞ্চার করা প্রয়োজন।

তবে দেশটি এখন সবার আগে পূর্বের ভুল শোধরানোর চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তে তাদের অগ্রাধিকার অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। ফলে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে খানিকটা সময় লাগবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image