• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি দুটি আলাদা ফ্রন্টে যুদ্ধ চালাবে?


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৩৯ এএম
দুটি আলাদা ফ্রন্টে যুদ্ধ চালাবে?
গাজার যুদ্ধ পরিস্থিতি

মাহফুজুর রহমান মানিক

হামাস নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনিদের হামলার মাত্র তিন দিন পর ইসরায়েল অতিরিক্ত অস্ত্রের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধরনা দিয়েছে। হামাস ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনা লক্ষ্য করে তিন দিক অর্থাৎ স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে ব্যাপক আক্রমণ চালায়। ১০ অক্টোবর প্রকাশিত পলিটিকোর প্রতিবেদন বলছে, পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, ‘বাইডেন প্রশাসন অস্ত্রের জন্য ইসরায়েলি প্রশাসনের জরুরি অনুরোধে প্রতিরক্ষা বিমান, গোলাবারুদসহ ব্যাপক অস্ত্রশস্ত্র পাঠাচ্ছে। বিমানগুলো ইতোমধ্যে উড়াল দিয়েছে।’

দখলদার রাষ্ট্রের জন্য বাড়তে থাকা এই সংকটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি দুটি আলাদা ফ্রন্টে যুদ্ধ চালাবে? দুটি আলাদা ভৌগোলিক অঞ্চলে যুদ্ধরত দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব একাই নিতে পারবে? এর উত্তর সম্ভবত না। ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এমন সময় আমেরিকা এই অর্থ ব্যয় করেছে, যখন দেশটির জাতীয় ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তুঙ্গে উঠছে মুদ্রাস্ফীতি।

এখন যখন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে, তখন ইউক্রেনের প্রতিদ্বন্দ্বী শুধু রাশিয়া নয়, ইসরায়েলও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ৯ অক্টোবর আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমর্থন ইউক্রেন থেকে সরে ইসরায়েলের দিকে যাবে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের কাছে খুব স্পষ্টভাবে প্রমাণিত তথ্য রয়েছে যে, রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের উস্কানি দিতে চায়, যাতে বৈশ্বিক ঐক্য ধ্বংস হয়। এটি বিভাজন ও বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দেবে। ইউরোপের স্বাধীনতা ধ্বংস করায় সহায়তা করছে রাশিয়া।’

যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেন লবির ক্ষমতা থাকলেও ইসরায়েল লবির প্রভাব আরও ব্যাপক। হামাস ও ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সঙ্গে সংঘাতের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে মার্কিন অস্ত্রের জন্য ইসরায়েল যে ভিক্ষা করছে, তাতে ইসরায়েলের দুর্দশা স্পষ্ট। কারণ হিজবুল্লাহ, সিরিয়া, আনসারুল্লাহ, পপুলার মবিলাইজেশন ইউনিট ও ইরান কেউই এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সংঘাতে প্রবেশ করেনি।

২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধ মার্কিন অস্ত্রের ওপর ইসরায়েলের নির্ভরতার স্বরূপ প্রকাশ করেছিল। এতে প্রমাণ হয় হিজবুল্লাহকে পরাজিত করার মতো অস্ত্রের ঘাটতি তাদের কতটা। যুদ্ধের ১০ দিনের মধ্যে ইসরায়েল তার অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশ খুইয়ে ফেলে। ২০০৬ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েল যে সমস্যায় পড়েছিল সে সংকট আরও বাড়বে, যদি এবার তার প্রতিপক্ষের সব শক্তি সম্মিলিতভাবে যুদ্ধে অংশ নেয়। খেয়াল করার বিষয়, হামাসের রকেটবৃষ্টি সামলাতেই তাদের আয়রন ডোমের অস্ত্রমজুতের বড় অংশটা খরচ হয়েছে। এখন লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ যোগ দিলে তারা সংকটে পড়বে। এমনকি ইরান সংঘাতে যোগ দিলে ইসরায়েলের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ তাদের কাছে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। এগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলি ও মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রায়ই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কথিত হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করে । কিন্তু ইরানের ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির হুমকির কথা তারা খুব কমই বলে থাকে।

১৯৯৩ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে অসলো সনদে স্বাক্ষর করেন। ওই সময় কেবল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। ইরান তখন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত ইরান যুদ্ধ কাটিয়ে উঠছিল। ইরান-ইরাক যুদ্ধে উভয় পক্ষের ১০ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। অসলো সনদের মাধ্যমে আমেরিকা ও ইসরায়েল ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার প্রতিশ্রুতি দেয়। ফিলিস্তিনিদের তখন নির্ভর করার মতো মিত্র কম ছিল। বস্তুত অসলো সনদের মাধ্যমে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের টুকরো টুকরো করে ধ্বংস করা। ফিলিস্তিনিরা তখন সেটা অনুভব করতে সক্ষম হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমসের কলাম লেখক টমাস ফ্রিডম্যানের ভাষায় বললে, অসলো সনদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এক ‘কল্পকাহিনি তৈরি’ করেছিল। তা হলো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ভবিষ্যতের কোনো একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। ফ্রিডম্যানের মতে, এটি ইহুদি বসতি নির্মাণের জন্য ইসরায়েলকে জমি দখলের অনুমতি দিয়েছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অথচ ‘সেখানে শান্তির আশা বিরল’।

তবে এখন ৪০ বছর পর ফিলিস্তিনিরা একা নয়। তারা আরব অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত প্রতিরোধ শক্তির অংশ। এ শক্তি পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এজেন্ডায় বাধা দিচ্ছে। তারা যেমন নির্ভরযোগ্য মিত্র, তেমনি ব্যাপক লড়াই করতেও সক্ষম। তাদের সাংগঠনিক যোগ্যতা ও নিখুঁত কর্মপরিকল্পনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইরান, সিরিয়া, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতিসহ প্রতিরোধের অক্ষশক্তি বলে পরিচিতরা কোনোভাবেই গাজাকে পরাস্ত হতে দিতে চাইবে না। এটি হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যই ইসরায়েলের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

এদিকে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ব্যর্থতার পাল্লা পাহাড়সম হচ্ছে। ইউক্রেনে আমেরিকার প্রক্সি যুদ্ধের সময় রাশিয়ার বিশ্বব্যাপী প্রভাব বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ চীন ও রাশিয়া এখন বহুমুখী বিশ্ব গঠনে কাজ করছে। রাশিয়া ও ইরানকে পঙ্গু করার জন্য আরোপ করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উল্টো রাষ্ট্র দুটিকে শক্তিশালী করেছে এবং সামরিক সহযোগিতার দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হলো রাশিয়া ও ইরান এখন এমন সামরিক অস্ত্র উৎপাদনে সক্ষম, যে অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো ইসরায়েল বা ইউক্রেনে তাদের মিত্রদের দিতে পারে না।

ইসরায়েল ইতোমধ্যে গাজার বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নারী, শিশুসহ নিহত হয়েছে হাজারের বেশি। বিমান হামলা করে তারা গাজা উপত্যকার বড় বড় স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েলের জন্য ফিলিস্তিনের গাজা আক্রমণ সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের একটি ভুল পদক্ষেপ ও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিণতিতে ইসরায়েল আঞ্চলিকভাবে এমন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে, যা তার জন্য একটা সময় পর্যন্ত অস্তিত্ব সংকট তৈরি করতে পারে।

উইলিয়াম ভ্যান ওয়াগেনেন: দ্য ক্রেডলের কলাম লেখক; ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক ।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image