• ঢাকা
  • শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

প্রিয় গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০৯:৪১ এএম
স্বাধীন দেশ গড়ার সাহস আর স্বপ্ন দেখ
গাজী মাজহারুল আনোয়ার

খুরশীদ আলম

সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। কীভাবে বগুড়া থেকে আমাকে ঢাকায় আনা হয়েছে, ঠিক মনে নেই। বাঁচব কিনা, নেই তারও নিশ্চয়তা। তবু বাঁচার আশা জেগে উঠেছিল প্রিয় কিছু মানুষের জন্য। তাঁদের একজন গাজী ভাই। 'খুরশীদ আলমকে যেভাবেই হোক, সুস্থভাবে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাঁর জন্য যা কিছু করতে হয়, করব'- এটাই ছিল তাঁর কথা। এ যেন কথা নয়, ঝলসে যাওয়া রোদ্দুরে খুঁজে পাওয়া এক মহিরুহের ছায়া। শুধু আমি নই, সংগীতাঙ্গনের বহু শিল্পী, গীতিকবি, সুরকার, সংগীতায়োজক- গাজী মাজহারুল আনোয়ারের এমনই ভালোবাসা আর স্নেহের ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। আমার জীবনের সঙ্গে তিনি কতটা জড়িয়ে ছিলেন, তা লিখে শেষ করা যাবে না। জীবনী লিখিনি।

যদি কখনও লিখি, তাহলে বড় অধ্যায় জুড়ে থাকবে গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে যে মানুষটির সঙ্গে ওঠাবসা, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়া, সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠা- তাঁর কথা আমার লেখায় বারবার উঠে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ আজ তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কলম বারবার থেমে যাচ্ছে। মনের পর্দায় ভেবে উঠছে পাঁচ শতকের অজস্র স্মৃতি। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেসব স্মৃতি কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াও কঠিন। শুধু মনে হচ্ছে, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে আজ অনেকটাই নিঃস্ব্ব হয়ে গেছি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার কত বড় মাপের গীতিকবি- তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। একাত্তরের রণাঙ্গনে যাঁর গান মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, স্বাধীন দেশ গড়ার সাহস আর স্বপ্ন দেখিয়েছিল- তিনি ইতিহাসের অংশ হবেন, তা বলা বাহুল্য। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়েও তিনি অনবদ্য লেখনীর মধ্য দিয়ে হৃদয় স্পর্শ করেছেন অগণিত সংগীতপ্রেমীর। বিবিসি জরিপের সর্বকালের সেরা ২০ গানের তালিকায় স্থান পাওয়া গানের তিনটি তাঁরই লেখা। এ থেকেই স্পষ্ট, বাংলা গানকে তিনি কোন অবস্থানে নিয়ে গেছেন।

এমন কোনো বিষয় নেই, যা তাঁর গানের মধ্যে উঠে আসেনি। ২০ হাজারের বেশি গীতিকবিতা রচনা করেছেন তিনি। এটাও চমকে দেওয়ার মতো বিষয়। এর চেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, একের পর এক গীতিকবিতা লিখলেও কখনও সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে নজর দেননি। আর সে কারণেই তাঁর সৃষ্টি হয়ে উঠেছে অনন্য। আসলে এভাবে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করতে গেলে তা কত দিনে শেষ করা যাবে, বলা কঠিন। গানের বাইরেও চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও নির্মাণের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। তবে অন্যান্য পরিচয়ের চেয়ে গীতিকবি পরিচয়ই সবার কাছে প্রধান হয়ে উঠেছে। এই একটি জায়গায় তাঁর তুলনা চলে না কারও সঙ্গে।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা হবে সব সময়। তাই এ নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না। আমি বরং সেই মানুষটার কথা বলতে চাই, সংস্কৃতি অঙ্গনের মহিরুহ হয়ে ওঠার পরও যার মাঝে এতটুকু অহম ছিল না। খুবই সাদাসিধে মনের মানুষ ছিলেন গাজী ভাই। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন।

১৯৬৯ সালে তাঁর সঙ্গে পরিচয়। সেই সময়েই আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। 'সাধারণ মেয়ে' থেকে শুরু করে কত ছবিতে যে তাঁর লেখা গান করেছি, হিসাব মেলানো কঠিন। মনে পড়ে সত্য সাহা, দিলীপ বিশ্বাস, আলী হোসেন, আনোয়ার পারভেজদের বাসায় বসে রাতদিন একাকার করে একেকটি গানের জন্ম দেওয়ার স্মৃতি। দেখতাম মুহূর্তের মধ্যে কীভাবে এক বিষয় থেকে চলে গিয়ে অন্য একটি বিষয় নিয়ে অনবদ্য লেখা তুলে ধরতেন। ঠিক এ যেন এক ম্যাজিশিয়ানের কারসাজি।

সংসার জীবনেও তিনি ছিলেন যোগ্য স্বামী ও পিতা। আর সত্যিকারের এক দেশপ্রেমিক। এমন একজন মানুষের বিদায় যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তা অপূরণীয়।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image