জাফর আলম, কক্সবাজার : বিএনপি-জামায়াতের চলমান হরতাল অবরোধে কক্সবাজারের পর্যটন খাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই সময়ে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। পর্যটনের মৌসুম শুরু হলেও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আশানুরূপ পর্যটক ছিল না। তবে এবারের বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জেলার পর্যটন খাতে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। বিকেলের মধ্যেই পুরো সৈকত পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে স্বস্তির সুবাতাস বইছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।সরেজমিনে দেখা যায়, ভ্রমণপিপাসুরা সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে সমুদ্রস্নান ও আনন্দ মেতেছেন।
বালিয়াড়িতে বসে শিশুর সঙ্গে খেলাতে মেতেছেন বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আবার অনেকেই প্রিয় মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত। আর পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্যেও নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা।কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির নেতা ও পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের মৌসুমের শুরুতে হরতাল ও অবরোধের প্রভাবে পর্যটক শূন্য ছিল। কিন্তু বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রনি চৌধুরী বলেন, ট্রেনে করে কক্সবাজারে এসেছি। কিন্তু রুম খালি না থাকায় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরে অতিরিক্ত দাম দিয়ে রুম নিতে হয়েছে। তবে, সমুদ্রে গোসল করতে পেরে সব কষ্ট মুছে গেছে। মিরপুর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক সোনিয়া বলেন, ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা শেষ। বছরও শেষের দিকে। তাই পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। সায়েদ খাঁন নামক আরেক পর্যটক বলেন, কক্সবাজারে প্রথম বার আসলাম। ভালো লাগছে। তবে এখানে প্রশাসনের একটু আন্তরিকতার ও দায়িত্বের অভাব আছে। টমটম চালকরা যে হারে ভাড়া নিচ্ছে সে ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। তাই এটা একটু মনিটরিং করা দরকার।
কক্সবাজারে প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, কটেজ ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব হোটেলের অধিকাংশই আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে।
এ ছাড়া ১৫ তারিখ থেকে ১৭ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনগামী জাহাজের কোনো টিকেট নেই।এবিষয়ে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অক্টোবর থেকে পর্যটনের ভরা মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটন শূন্য ছিল কক্সবাজার। তবে আশার কথা হচ্ছে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে গেল ১৪ ডিসেম্বর থেকে বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ও কটেজের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
আপাতত বুকিং রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।তিনি আরও বলেন, বুধবার থেকে কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক রয়েছে। বিজয় দিবসে এ সংখ্যা বেড়ে দেড় লাখ হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সভাপতি বলেন, অবরোধের কারণে শুধু হোটেল সেক্টরে প্রতিদিন কর্মচারী বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জেনারেটরসহ অন্যান্য খাতে একটি হোটেলে কমপক্ষে গড়ে ৩০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে।
সেই হিসেবে থাকার আবাসন খাতেই দিনের খরচ বাবদ লোকসান হয়েছে দেড় কোটি টাকা।ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটককের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই প্রস্তুত। পর্যটক বাড়তে থাকায় নিরাপত্তার দিক দিয়ে আরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটক হয়রানি হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: