
নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ২৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সকাল ১১:০০ টায় বামদলীয় জোটের নারী নেতৃবৃন্দের সাথে ‘নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।
আলোচনা সভায় বামদলীয় জোটের নারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মুর্শিদা আখতার নাহার; বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট জোবাইয়া পারভিন; কেন্দ্রীয় সদস্য শাহানা ফেরদৌস লাকী; সিপিবি এর কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা নূর; গণসংহতি আন্দোলনের সদস্য তাসলিমা আখতার; শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী; এছাড়াও সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃবৃন্দ বা নারী কর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা আছে। সামষ্টিকভাবে ব্যাপক নারীর জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য প্রভাবিত করার প্রক্রিয়াই রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ ভালো হলেও নারীর অংশীদারিত্ব কম। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত হতে হলে সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে নারী নেতৃবৃন্দ কি কি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় নারী ইস্যু যুক্ত হচ্ছে কিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করার জন্য তিনি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান।
সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, মহিলা পরিষদ ১৯৭৩ সাল থেকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। যা আজও চলমান। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকারে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিধান করা প্রথম। এভাবে ধাপে ধাপে নির্বাচনের মাধ্যমে নারীরা রাজনীতিতে আসলেও তারা কতটা কাজ করতে পারছেন এটা দেখতে হবে। একজন নারী ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে নির্বাচন করেন যেখানে পুরুষে ১টি ওয়ার্ডে নির্বাাচন করে; তাদের সুযোগ সুবিধা ও এক নয় যা বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বহি:প্রকাশ, রাজনৈতিক দলে ৩৩% নারীকে দলে রাখার বিধানটি কোনো দলই পূরণ করতে পারেনি। এছাড়াও মুক্তবুদ্ধির মানুষের উপর আঘাত ও ধর্মান্ধতা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
উপস্থিত বামদলীয় জোটের নারী নেতৃবৃন্দ বলেন, সমাজে নারীর অবস্থান কি তা যাচাই করলে দেশের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হবে। নারীর প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, চিন্তা চেতনায় পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব আছে। বামদলগুলো নারী অধিকারে সোচ্চার হলেও ৩৩% নারীর উপস্থিতি দলে নিশ্চিত হয়নি। এছাড়াও নারীরভোটাধিকারের অভাব, অর্থ ও পেশীশক্তিকে বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের জন্য নারী প্রার্থীদের গুরুত্ব কম দেয়া; ধর্মন্ধতা,নারীকে অবদমন করতে ধর্মের ব্যবহার; মৌলবাদী সংগঠনের ওয়াজের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আলোচনা, দলের মধ্যে থাকা নারীদের ঐক্যবদ্ধ না থাকা, নারী রাজনীতিবিদদের প্রতি তাদের পরিবারের বিদ্বেষমূলক মনোভাব; নারীর স্বাধীনভাবে চলাফেরায় বাধা, সংরক্ষিত আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে গুরুত্ব না দিয়ে আর্থিক ও ক্ষমতাবান নারীকে প্রাধান্য দেয়া, রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে । বক্তারা আরো বলেন সাংস্কৃতিক চর্চার অভাব, রাজনীতির জন্য নতুন জেনারেশান তৈরি করতে না পারা, নারীর পোশাক ও চলাফেরা নিয়ে বৈষম্যমূলক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি; নির্বাচনী ইশতেহারে নারীবান্ধব ইস্যূ যুক্ত থাকলেও তার বাস্তবায়ন না হওয়া নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বড় বাধা।
এসব বাধা দূর করতে রাজনৈতিক দলের সকল কমিটিতে ৩৩% নারীকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে, নির্বাচনী ইশতেহারে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিহার করতে হবে; কমিটি গঠন করার সময় নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, সকল নারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত হতে হবে; সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক সকল নীতিমালা বা উদ্যোগ বাতিল করথে হবে, সিডও সনদের যে দুটি ধারায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেই সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে, নারী উন্নয়ন নীতিমালা সংস্কার করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদিতাকে পরিহার করে নিজস্ব চিন্তা চেতনা থেকে বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে,রাজনৈতিক কন্ঠ সোচ্চার করতে হবে, নারীদের সম্পদ সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে, ১৯৭২ এর সংবিধানকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে; অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; পুজিঁবাদী ব্যবস্থাকে সরিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অভিন্ন পারিবারিক প্রণয়ণে , রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে নারীর ইস্যূকে গুরুত্ব দিতে হবে; নির্বাচনী পদ্ধতির মধ্যে প্রচারণা ও আর্থিক দিকগুলোর সংস্কার করতে হবে, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, নারী-পুরুষের মজুরী বৈষম্য দূর করতে হবে।
সভার সভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন যে, লিঙ্গীয় সমতা ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন জরুরী। এটা করতে হবে রাজনৈতিক দলের নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একটি বড় ভ’মিকা রয়েছে। শুধুমাত্র একটি দর্শনের ভিত্তিতে নারীর সমতা অর্জন হয়না। নারীকে পেছনে টেনে নেয়ার জন্য ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প সবজায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মকে সমতার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নারীকে নাগরিক হিসেবে তার পরিচিতি দাঁড় করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সম্পদ- সম্পত্তিতে সমান অধিকারের আন্দোলনকে অগ্রসর করে নিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্রবিরোধীরা গলতন্ত্রেেক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। এ জায়গা থেকে সমাজকে তুলে আনতে হবে। এ জন্য সকলকে একত্রিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানেিয় বক্তব্য শেষ করেন।
সভার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: