• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মোবাইল গেমস এবং অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বশান্ত মানুষ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০২:০০ পিএম
অনলাইন জুয়ার ফাঁদে সর্বশান্ত মানুষ
মোবাইল গেমস

অলোক আচার্যঃ 

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়ে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার স্কুল-কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনে ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে পরে যা এখন অনেকটাই কমে গেছে। গত দুই বছরে পরিবার থেকে মোবাইল কিনে না দেওয়ায় দুই উপজেলায় প্রায় দশ জন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যাও করেছেন। গেমস এর পর এখন দুই উপজেলার শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, ভ্যানচালকসহ ছোট-বড় সব শ্রেণীপেশার মানুষ গ্রামগঞ্জসহ সর্বত্র  জমজমাট হয়ে উঠেছে অনলাইন জুয়ার আসর। 

 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন চটকার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ বাড়ছে অনলাইন জুয়ার প্রতি। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও বেকার যুবকসহ সব বয়সি দুই উপজেলার হাজারো মানুষ জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন। গ্রামের শ্রমজীবী লোকজন যাহারা অনলাইন সম্পর্কে খুব ভালো বুঝে না তারা মোবাইলে লুডু দিয়ে জুয়া খেলা শুরু করেছে।

অনেকেই এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে জুয়া খেলে হচ্ছেন সর্বস্বান্ত। তরুণদের অনেকেই কৌতুহল বশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তীতে লোভে পড়ে এক পর্যায়ে খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। জুয়ার কারনে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য জীবনে কলহ। খেলার টাকা যোগার করতে এলাকায় মাদকসহ বাড়ছে অপরাধ। অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন লোভের নেশায় পড়ে। উদ্বেগ বাড়ছে অভিভাবকদের। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে মোষ্টবেট, ওয়ান এক্সবেট, বেট উইনার, বেট৩৬৫, মেলবেট, লাইনবেট,জিটুইন, ক্রিকেক্স,প্যারিম্যাচ,এমসিডবিøউসহ বিভিন্ন অ্যাপসে খেলা হচ্ছে এই জুয়া। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ১০টাকা থেকে শুরু করে যে কোন পরিমান টাকা দিয়ে খেলা যায়। সকল অ্যাপসের মধ্যে জুয়ার মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মোষ্টবেট ও ওয়ান এক্সবেট অ্যাপস। এটা পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া,মালেয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব ওয়েবসাইট পরিচালনা করছে দেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এটা খেলার সময় আশপাশের কেউ বুঝতে পারেনা মোবাইলে গেম খেলছে,নাকি জুয়া খেলছে। গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারসহ সবজায়গায় এজেন্টরা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে  টাকা জমা দেওয়া এবং একাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। এক হাজার টাকায় এজেন্টরা কমিশন নিচ্ছেন ৪০ টাকা। এই জুয়ায় যারা প্রথম দিকে আসক্ত হয় তারা প্রতারিত হচ্ছে ডলার বিক্রি করা একটি চক্রের হাতে।

 সরেজমিনে কয়েকটি গ্রাম-পাড়া মহল্লায় ঘুরে দেখা যায়, শ্রমজীবী মানুষ জটলা ধরে বসে মোবাইলে লুডু খেলছে। কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, বর্ষা মাস কাজকাম কম তাই বসে লুডু খেলে সময় কাটাই। প্রকৃত পক্ষে তারা বাজি করে জুয়া খেলেন বলে জানান স্থানীয়রা।  

বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামের  ভূূক্তভোগি এক অভিভাবক জানান,‘আমার ছেলে স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে। এন্ড্রয়েড মোবাইল কেনার বায়না ধরে স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে বাধ্য হয়ে মোবাইল কিনে দিয়ে বিপদে পরে গেছি। এখন নানা বাহানায় টাকা নেয়। পরে জানতে পারি মোবাইল দিয়ে নাকি সে জুয়া খেলে। কিন্ত অনলাইনে জুয়া খেলার কারনে তেমন পড়লেখা করছেনা। কোনভাবেই বিরত রাখতে পারছিনা। আমার ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এই অনলাইন জুয়া নষ্ট করে দিচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনলাইনে জুয়া খেলে ক্ষতিগ্রস্ত এক যুবক জানান, সি জি নামের একটি জুয়ার সাথে যুক্ত হই। আমার গ্রæপে প্রায় ৩০ জনের মত সদস্য হয়েছিল। প্রথম দিকে সবারই কিছু লাভ হয়। তিন মাসে আমার দুই লক্ষ টাকা খোয়া যায় পরে আমি আবার এক লক্ষ টাকা ইনভেষ্ট করি তারপরই ঐ অনলাইন জুয়ার এপ্স গায়েব হয়ে যায়। আমার টিমের প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা লোকসান গেছে। আমি চাই আমার মত কেউ যেন এই অনলাইন জুয়ার লোভে পরে সর্বশান্ত না হয়।

 নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক স্কুল শিক্ষার্থী জানান, ‘আমি প্রথমে ১৬ শত বিনিয়োগ করে প্রথমে প্রায় দুই হাজার টাকা পাই। সেই লোভে  আরও কিছু টাকা দিয়ে খেলা শুরু করি। এক মাসের মধ্যে প্রায় দশগুন লাভ আমার একউন্টে জমা হয়। দুই দিনের মধ্যে সব হেরে যাই। আমার স্কুলে যাওয়া সাইকেল দশ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাড়িতে জানাই সাইকেল হারিয়ে গেছে। সে টাকাও শেষ পরে ধারের টাকা শোধ করতে শেষমেশ আমার মোবাইলটাই বিক্রি করে দিতে হয়েছে।  

এক নারী জানান, ‘তার স্বামী ক্যাসিনোসহ অনলাইন জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে টাকার জন্য তাকে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহের কারনে তিনি পারিবারিকভাবে তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন। এই জুয়া খুবই খারাপ নেশা  খেলা শুরু করলে যতক্ষণ টাকা থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত খেলতে ইচ্ছে করে।’

বেড়া মাসুমন্দিয়া জে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আলাউল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় অভিভাবকদের ভূমিকাই মূখ্য। শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে শিক্ষকদের। জুয়ার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং নৈতিক শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করা। প্রশাসনেরও ব্যপক নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতার সম্পর্কে সচেতন করাটা জরুরি।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, অনলাইন জুয়া শুধু সাঁথিয়া নয় সারা দেশেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকায় অনলাইন জুয়ার ব্যাপারে আমরা শুনেছি ও খোজ খবর রাখছি। জুয়ার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সবুর আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ এই মোবাইল গেমসের নেশা  থেকে সড়িয়ে আনতে হলে প্রথমে অভিভাকদের সচেতন হতে হবে এবং বেশি বেশি বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে হবে। এছাড়াও এলাকার জনপ্রতিনিধি সচেতন ব্যক্তিদের ব্যাপক ভুমিকা রয়েছে। অনলাইন জুয়ার বিষয়টিকে  নিয়ে আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় যে কোন আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বলছি।’ 
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image