• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

শুভ ভাতৃদ্বিতীয়ার তাৎপর্য ও গুরুত্ব


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৫৩ পিএম
শুভ ভাতৃদ্বিতীয়ার তাৎপর্য ও গুরুত্ব
পশ্চিমবঙ্গের উৎসবের নাম ভাইফোঁটা

অলোক আচার্য

বারো মাসে তের পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। হিন্দু সম্প্রদায়ের পালন করা উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভাইফোঁটা। পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসবের নাম ভাইফোঁটা হলেও নেপাল ও দার্জিলিং এলাকায় এই উৎসবের নাম 'ভাই টিকা'। উত্তর ভারতে এই উৎসবের নাম 'ভাই দুজ'। পশ্চিম ভারতে আবার একে বলা হয় 'ভাউ বিজ'।ভাই বোনের অটুট বন্ধন প্রকাশ করতে বছরের এই দিন পালন করা হয়ে থাকে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বাস এবং ধর্মীয় অনুভূতি। এপার বাংলা ও ওপার বাংলায় মহাসমারোহে ভাইফোঁটা পালন করা হয়। ভাইফোঁটা চালু নিয়ে কয়েকটি কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ভাইফোঁটার দিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাঁদের কপালে কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে তিনবার চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন।

ধান, দুর্বা দিয়ে ভাইয়ের মাথায় আশীর্বাদ করেন, শঙ্খ বাজান, উলু দেন ’ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/যম দুয়ারে পরলো কাঁটা/যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা/যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম অমর হয়/আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর- সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পার্বণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা। সনাতন ধর্মের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মানুষের হাতের পাঁচটি আঙ্গুল পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের প্রতীক, যথা - ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম। এদের মধ্যে ব্যোম হচ্ছে কড়ে আঙুল। ভাইবোনের ভালবাসা যেমন আকাশের মতো উদার, অসীম ও অনন্ত হয়, তেমনি শাস্ত্র মতে ব্যোম বা কড়ে আঙুল হচ্ছে মহাশূন্যের প্রতীক ও নারী প্রকৃতিস্বরূপা। তাই উদার ভালবাসার প্রতীক হিসেবে কড়ে আঙুলকেই পবিত্র বলে মনে করা হয় ভাইফোঁটা উৎসবের ক্ষেত্রে।

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, তিনবার এই মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে বোনেরা বাঁ হাতের কড়ে আঙুলের দ্বারা ভাইয়ের কপালে টিকা দেয়। দ্বিতীয়বার দুই কানের লতিতে দুটো টিকা দেয় এবং শেষে কন্ঠনালিতে একটি টিকা দেয়। এভাবে ফোঁটা দেওয়ার মাধ্যমে ভাইয়ের মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বোনেরা।ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন কামনায় এভাবেই ভাইয়ের কপালে ফোঁটা এঁকে দেয় বোন। সেই অতীত কাল থেকেই সনাতন ধর্মানুসারীদের একটি অন্যতম উৎসবের নাম ভাইফোঁটা। ভাই-বোনের বন্ধন চির অমর করতে এবং দৃঢ় করতে ভাইফোঁটা একটি অন্যতম বড় উৎসব। এই উৎসবটি সাড়ম্বরে পালন করা হয় কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিতে। স্কন্দপুরাণে লেখা আছে যে এই দিনে যমরাজকে প্রসন্ন করলে উপাসক কাঙ্খিত ফল লাভ করেন। ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, কার্তিক শুক্লা দ্বিতীয়ার দিনে, যমুনা তার ভাই যমের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বর পেয়েছিলেন, যার কারণে ভাইফোঁটা যম দ্বিতীয়া নামেও পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে, যমরাজের বর অনুসারে যে ব্যাক্তি এই দিনে যমুনায় স্নান করে যমের পূজা করবে, তাকে মৃত্যুর পর যমলোকে যেতে হবে না, তার ভাই অকাল মৃত্যু থেকে বাচবে। অন্যদিকে, সূর্য কন্যা যমুনাকে দেবী স্বরূপা মনে করা হয়, যিনি সমস্ত কষ্ট দূর করেন। এ কারণে যম দ্বিতীয়ার দিনে যমুনা নদীতে স্নান করে যমুনা ও যমরাজের পূজা করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, এই দিনে করা পূজায় যমরাজ প্রসন্ন হন এবং কাক্সিক্ষত ফল দেন।

ভারতের একেক অঞ্চলে ভাইফোঁটা বিভিন্ন নামে পরিচিত। তবে উদ্দেশ্য একই। তবে বাংলাদেশে এটি ভাইফোঁটা নামেই বেশি প্রচলিত। এই উৎসবের আর একটি নাম হলো যম দ্বিতীয়া। এর কারণও আছে। হিন্দু ধর্মানুসারে যম হলো মৃত্যুর দেবতা এবং ধর্মরাজও। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনায় ভাইয়ের কপালে বোন ফোঁটা দেয়। এতে ভাইয়ের সামনের সব বিপদ দূর হয়ে আয়ু বৃদ্ধি পায় বলেই মনে করা হয়। কথিত আছে, এই দিনে যম তার বোন যমুনার হাতে ফোঁটা নিয়েছিলেন। আবার নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। ভাইফোঁটার দিনে সকালে বোন শিশির সংগ্রহ করে জমা রাখেন। দূর্বা তোলেন। মূলত এটার সাথে চন্দন মিশিয়ে কপালে ফোঁটা দেওয়া হয়। চন্দনের সাথে দই থাকে।

এটি মঙ্গল বলেই ধরে নেওয়া হয়। সামনে জ¦লবে প্রদীপ। এসময় নানা পদের মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। ভাইয়ের সামনে সেসব খেতে দেওয়া হয়। উপহার দেওয়ার রীতিও প্রচলিত আছে। আগামী বুধবার সকালেই ঘরে ঘরে ভেসে আসবে উলুধ্বনি,শঙ্খধ্বনি আর ভাইকে আশীর্বাদ করা সুর। ভাই বোনের এই নিঃস্বর্গীয় ভালোবাসায় পৃথিবী পূর্ণ হয়ে উঠবে। 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image