• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

কক্সবাজারে পরীক্ষামূলক শৈবাল চাষে সাফল্য, রপ্তানিতে সম্ভাবনা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ ফেরুয়ারী, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৩৫ পিএম
কক্সবাজারে রপ্তানিতে সম্ভাবনার সৃষ্টি
পরীক্ষামূলক শৈবাল চাষ

জাফর আলম, কক্সবাজার : সামুদ্রিক শৈবাল থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, ঔষধি পণ্য, প্রসাধনী ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন করা যায়। তাই এই জলজ উদ্ভিদটির বৈশ্বিক চাহিদা ২৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। সুনীল অর্থনীতির এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশে বাণিজ্যিকভাবে শৈবাল চাষ করে আয়ের নতুন পথ সৃষ্টির চেষ্টা করছে সরকার। এর মধ্যে উখিয়ার রেজু খালে পরীক্ষামূলক শৈবাল চাষে সাফল্য এসেছে। এ সাফল্যের পর শৈবাল চাষের পরিসর বৃদ্ধি এবং  শুকনো আকারে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়ার রেজুখালে শৈবালের পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের উদ্যোগে। এতে অর্থায়ন করছে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল। আর কারিগরি সহযোগীতা দিচ্ছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট।

সরেজমিন দেখা যায়, রেজু খালে দুই পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে সামুদ্রিক  শৈবাল। নেট পদ্ধতিতে বাঁশের সঙ্গে জাল বাঁধা আর লাইন পদ্ধতিতে বাঁশের সঙ্গে রশি টানানো হয়। রশি বা জালের সঙ্গে শৈবালের বীজ বেঁধে নোনা পানির নিচে ডুবিয়ে রাখা হয়। আর ১৫ দিন পরপর ৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি প্লটে ১৫ থেকে ১৮ কেজি শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে বলে জানালেন চাষিরা শৈবাল চাষ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শিমুল ভূঁইয়া বলেন, শৈবাল চাষে খরচ কম কিন্তু আয় অনেক বেশি, যা বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।  স্থানীয় জনগনকে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করা গেলে দেশের ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ও ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক শৈবালের চাষ সম্ভব। রফতানি করা যাবে বিদেশেও।তিনি বলেন, শুধু রেজু খাল নয়, দেশের সমুদ্র উপকূলে ধীরে ধীরে বাড়ছে শৈবালের চাষ। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা শৈবাল চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপ, শাহ্পরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়া এলাকায় নাফ নদীর তীর, মহেশখালীর সোনাদিয়া এবং কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াতে শৈবাল চাষ হচ্ছে। এসব চাষি বছরে দুটি প্রজাতির শৈবাল গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ উৎপাদন করছে।

এছাড়া আরও অনেক চাষি রয়েছে, যারা প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত প্রায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার মণ শৈবাল সংগ্রহ করছে। উৎপাদিত এসব শৈবালের অধিকাংশই যাচ্ছে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান অঞ্চলে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্যে, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাগেরহাটসহ ৭১০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত ও ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার বালু, পাথর ও কর্দমাক্ত মাটি শৈবাল চাষের জন্য উপযুক্ত। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ এলাকায়ও শৈবাল চাষ সম্ভব। সরকারের সমুদ্র অর্থনীতি কার্যক্রমে শৈবালকে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসকে আবিদ হোসেন বলেন, শৈবাল থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য, ঔষধি পণ্য, প্রসাধনী ও পরিবেশ দূষণরোধক পণ্য উৎপাদন সম্ভব। উপকূলে পরীক্ষামূলক চাষে সাফল্য পাওয়ার শৈবাল চাষের পরিসর বৃদ্ধি এবং  শুকনো আকারে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে চাই আমরা।

তিনি বলেন, শৈবালটা বর্তমানে আমাদের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে স্থানীয় কিছু লোকজন এখনই কিছু খায়। আমাদের দেশেও ভোক্তা আছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোক্তা আছে চীনে। আমরা যদি এটিকে শুকনো আকারে পলিব্যাগ করে পাঠাতে পারি তাহলে আমাদের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূল কাজটা হচ্ছে উদ্যোক্তাদের দেখানো এটা একটা পন্য যা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব।বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, বাণিজ্যক উৎপাদন ও বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি শৈবাল চাষাবাদের সাথে স্থানীয় জনগনকে উৎসাহিত ও প্রশিক্ষিত করা গেলে সুনীল অর্থনীতিতে বিল্পব ঘটবে।

সারাবিশ্বে সামুদ্রিক শৈবাল সাধারণত খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রসাধন শিল্পে এবং ওষুধ শিল্পে শৈবালের একটা বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দেখেছি, সামুদ্রিক শৈবাল থেকে এলজিনেট, ক্যারাজিন, এগারএগার এগুলো তৈরি করা যায়। আমাদের ল্যাবরেটরীতেও আমরা এটি শুরু করতে পেরেছি।তিনি বলেন, রেজুখালে আমরা গত ২ বছর ধরে শৈবালের পরীক্ষামূলক চাষ করছি। পাশাপাশি সেন্টমার্টিন থেকে শুরু করে কুতুবদিয়া পর্যন্ত কোন কোন এলাকায় শৈবালের চাষ করা সম্ভব সে ব্যাপারে আমরা তথ্য—উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।

ইতোমধ্যে আমরা মহেশখালীর পাশে এবং রেজুখালে দুইটি পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করেছি। এখানে দুটি পদ্ধতিতে চাষ করে আমরা দেখেছি নেট পদ্ধতিতে ফলন বেশি হয়েছে। লাইন পদ্ধতিতেও মোটামুটি ভালো ফলন হয়েছে। মাত্র আড়াই গ্রাম সীড দিয়ে ১০-১৭ দিনের মধ্যে ১৭ কেজির মত উৎপাদন আমরা দেখেছি। ফলে এটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব।

কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করতে গেলে আমাদের এটির বাজার সৃষ্টি করা এবং চাষাবাদের সাথে স্থানীয় জনগনকে উৎসাহিত করা এবং তাদেরকে প্রশিক্ষিত করার উপর জোর দিতে হবে।সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের খাদ্য, পশুর খাদ্য ও বিভিন্ন টয়লেট্রিজ উৎপাদনে ২১ হাজার কোটি টাকার কাঁচামালের প্রয়োজন হয় বাংলাদেশে। এর সিংহভাগই আমদানি করা হয়। কিন্তু এই কাঁচামালের পুরোটাই বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক শৈবাল (সিউইড) ব্যবহার করে দেশে উৎপাদন করা সম্ভব।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image