নিউজ ডেস্ক: সঞ্চয়পত্রের রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে উপ কর কমিশনারদের ভয়ভীতির মুখে সাধারণ গ্রাহকরা।
সরকার সঞ্চয়পত্র কিনতে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করায় হয়রানি ও ভোগান্তির মুখে পড়ছে সঞ্চয়পত্রের আয় দিয়ে সংসার চালানো সাধারণ গ্রাহকরা। জমা নিতে চাইছে না এক পাতার রিটার্ন ফরম। সঞ্চয়পত্রের জন্য চার পাতার রিটার্ন ফরম জমা দিতে বলা হচ্ছে।
আর সঞ্চয়পত্র কিনতে কোথায় টাকায় পেলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর ফরমে না চাইলেও, মৌখিকভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকরা বাবা মা ভাই বোনের কথা বললেও, উপ-কর কমিশনাররা বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। নোটিশের ভয় দেখানো হচ্ছে। আইনজীবী ধরে রিটার্ন সাবমিটের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে ঘরে বসে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেবার অপশনটি কোনো এক অজানা কারণে বন্ধ করে রেখেছে এনবিআর।
বুধবার এ সংক্রান্ত এক অনুসন্ধানে এসব চিত্র উঠে এসেছে। বাজেটে সরকার আয়কর রিটার্ন দিতে জনগণকে উৎসাহিত করলেও বাস্তবে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে এনবিআরের কর কর্মকর্তাদের আচরণে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট পাশের সময় প্রধানমন্ত্রী বড় গলায় ঘরে বসে নিজ উদ্যোগে আয়কর জমা দেওয়ার সহজ পদ্ধতির কথা ঘোষণা দিলেও তার ছিটাফোঁটা প্রতিফলন নেই মাঠ পর্যায়ে। ইনকাম ট্যাক্স অফিসাররা চলছেন সেই পুরাতন নিয়মে। সাধারণ গ্রাহকরা নির্দিষ্ট জোনে কর সার্কেল অফিসে গেলে তাদের বিভিন্নভাবে নোটিশের ও ট্যাক্স আরোপের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক জোন-২ কর সার্কেল ০৪৩ অফিসে গেলে সেখানকার উপ-কর কমিশনার সঞ্চয়পত্রের ক্রয়ে টাকার উৎস নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তোলেন। সঞ্চয় পত্র কিনতে কোথায় টাকা পেলেন, কে দিলেন এসব প্রমাণ চাইলেন। মৌখিকভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেও তিনি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি নোটিশ দেবেন বলে জানালেন। অথচ সরকার চারদিকে প্রচার করে বেড়াচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না এর মালিক কে। টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না।
তবে বাস্তব চিত্র উল্টো। সঞ্চয়পত্র কেনার টাকার উৎস জানতে চাচ্ছে এনবিআরের এসব কর কর্মকর্তা। সঞ্চয়পত্র কিনতে গ্রাহক কার কাছ থেকে কীভাবে টাকা পেয়েছে এসব প্রশ্ন তুলছেন। তার সপক্ষে প্রমাণ ও নথি চাইছেন। প্রমাণ ও নথি তাদের মন মতো না হলে, নোটিশ দেওয়া হবে। উচ্চহারে কর আরোপ করা হবে। এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশে দান কর ১৯৯০ তে পরিষ্কার বলা আছে বাবা মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী ছেলে মেয়ে একে অপরকে কিছু দিলে তার ওপর কোনে কর আরোপ হবে না। এদিকে এনবিআরে কর কর্মকর্তা এসব কথা ভুলে কর আরোপের কথা বলছেন। যা সাধারণ গ্রাহকদের মনে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করছে।
সুমি নামে এক গৃহিণী বলেন, আমার ১০ লক্ষ টাকার ৩ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র কেনা ছিল। তার মুনাফা দিয়ে সংসার চলত। এখন আয়কর রিটার্নের ঝামেলায় পড়ে সঞ্চয়পত্র নবায়ন করতে পারছি না। তাকেও একই ভাবে ভয় দেখিয়েছে উপ কর কমিশনাররা। তিনি বলেন, সরকারের উচিত হয়নি সাধারণ নাগরিকদের এসব ভোগান্তিতে ফেলা। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে টাকা আয় করার অনেক খাত আছে । সেই সব খাতের কোনো নথি হয় না। যেমন টিউশনি করে যারা অর্থ জমান। গৃহস্থালির কাজ করে যারা রোজগার করেন। তারা কীভাবে টাকার উৎস প্রমাণ করবেন ?
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: