নিউজ ডেস্ক : ৯২ শতাংশ মানসিক রোগী মানসিক রোগ সম্বন্ধে অজ্ঞতা, ভ্রান্ত ধারণা, ভীতি, লোক লজ্জা ও বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে মানুষ মানসিক রোগের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার পরিবর্তে অপ্রচলিত অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গ্রহণ করছে। যার ফলে মানসিক রোগ নিরসনের পরিবর্তে আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে।
১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’।
এক গবেষণার তথ্যমতে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। দেশের প্রায় ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ও ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে। অথচ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে মানসিক রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানসিক রোগী সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যায় বলে জানায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, আধুনিক নগরায়ণ, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি, অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় ও মনোসামাজিক কারণে দেশে দিনদিন মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার অনেকে মানসিক সমস্যাকে রোগ মনে করে না।
বিশেষ গুরুত্বও দেন না এবং সঠিক চিকিৎসা করাতেও উদ্যোগী হন না। ফলে মানসিক সমস্যা ভেতরে ভেতরে আরও বেশি বাড়তে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ক্রোড়পত্র প্রকাশ, শোভাযাত্রা, গোলটেবিল বৈঠক, মিট দ্য প্রেস, আলোচনাসভা, বৈজ্ঞানিক সেমিনার ও বিনা মূল্যে মানসিক চিকিৎসাসেবা প্রদান। বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার দূর করা ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ ১৯৯২ সাল থেকে ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন কর্মসূচির সূচনা করে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) দিবসটি উপলক্ষে রেলি, আলোচনাসভা, লিফলেট বিতরণ, পোস্টার ও ব্যানার প্রদর্শন, বিনা মূল্যে মানসিক চিকিৎসাসেবা প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বাণীতে বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য মানবতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণ করার এবং কমিউনিটিতে পরিপূর্ণভাবে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়। তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বে প্রতি আট জনের মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও তরুণ জনগোষ্ঠী।
নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার পাঁচ দশমিক এক শতাংশ। কনডাক্ট ডিজঅর্ডার এক দশমিক ৭ শতাংশ। জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার চার দশমিক ৭ শতাংশ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) যৌথ গবেষণায় দেখো গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ মানসিক রোগাক্রান্ত। উদ্বেগ আধিক্য চার দশমিক সাত শতাংশ, বিষণ্নতা ছয় দশমিক সাত শতাংশ। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ মানসিক রোগাক্রান্ত।
দেখা যায়, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তিন দশমিক তিন শতাংশ মাদক গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে চার দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ আর দশমিক ৬ শতাংশ নারী। ১২ বছর থেকে ১৭ বছরের শিশু-কিশোররা এক দশমিক পাঁচ শতাংশ মাদক গ্রহণ করে আর ৭ থেকে ১১ বছরের মধ্যে দশমিক দুই শতাংশ শিশু মাদকাসক্ত।
অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজ আয়োজিত মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় জানায়, বাংলাদেশে প্রতি আট জনে একজন মানসিক রোগী। আর ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছরে বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ। ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: