• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৮ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা লজ্জাজনক: মোমেন


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ মে, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১২:৪৪ পিএম
তিস্তা চুক্তি ঝুলে থাকা লজ্জাজনক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

ডেস্ক নিউজ:  ভারতের সঙ্গে সব বিষয়ে ঐক্যমত্যের পরও তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকাকে লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন । আরও বলেন, চুক্তিটি উভয় দেশের জন্যই মঙ্গলজনক ছিল। তবে সেটা হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যতে পানির জন্য বড় ধরনের হাহাকার দেখা দেবে এবং এর জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গুয়াহাটিতে গত ২৮ ও ২৯ মে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নদী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ওই কনফারেন্সে অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

দু’দিনব্যাপী ওই সম্মেলনের সাইডলাইনে রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে আমরা গত ১১ বছর ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে পারিনি।

সোমবার (৩০ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তা নদীর পানি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই পানির ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু যে কারণেই হোক, বাংলাদেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি এখনও। যাকে লজ্জাজনক বলে অভিহিত করেছেন ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে ঢাকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত। আগামী জুন মাসে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও আয়োজনের চেষ্টা চলছে, যার সূত্র ধরে ‍জুলাই মাসে ভারত সফর করতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়েই ড. মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। আমরা সব নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানি ভাগাভাগিসহ একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। মূলত উভয় দেশের নদীর পাড়ের মানুষের মঙ্গলের জন্যই যৌথ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি আটকে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা লজ্জাজনক। আমরা প্রস্তুত ছিলাম, তারাও প্রস্তুত ছিল, কিন্তু সেই চুক্তি করা হয়নি।

ড. মোমেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় চীনে মাত্র ৩ শতাংশ, ভারতে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষের জীবনযাপন নদীর কারণে প্রভাবিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হয়ে থাকে। এককভাবে একটি দেশের আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করা উচিত নয়।

‘আমাদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বাসিন্দাদের সবার একসঙ্গেই দেখা উচিত, সেটি চীনের উন্নয়ন হোক বা ভারত বা বাংলাদেশের। আমাদের সবাইকে সমগ্র অববাহিকা এবং এর জনগণের ওপর প্রভাব নিয়ে ভাবতে হবে’, যোগ করেন ড. মোমেন।

তিস্তা নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় চীনে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রসঙ্গে ড. মোমেন আরও বলেন, তিস্তা নদীর ওপর ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে বলে গণমাধ্যমে অনেক গুঞ্জন রয়েছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য নদী অববাহিকাকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং গ্রীষ্মকালে পানির সংকট মোকাবিলা করা।

তিস্তা নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব আসেনি। চীন যেটি প্রস্তাব করছিল তা প্রাথমিকভাবে একটি ফরাসি প্রকল্প ছিল, ১৯৮৯ সালে ফরাসি প্রকৌশলীরা একটি নকশা করেছিলেন। এটা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সেই সময় আমরা তা বহন করতে পারতাম না। তবে চীনারা এখন সেই প্রকল্প নিতে চাচ্ছেন।

চীনের প্রস্তাব বাংলাদেশের জন্য লাভজনক মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এটা কিভাবে সামনে এগোয় সেটি আমাদেরকে দেখতে হবে। কারণ তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে এখন পর্যন্ত ভারত আসলে তেমন কিছুই করছে না। সে কারণেই চীন একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমের চিতামু হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির মূল এলাকাগুলো ১৯৪৭ সালে ভারতকে বরাদ্দ দেয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।

২০১১ সালে তিস্তা নদীর পানি বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে সম্মত হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে চুক্তিটি আর স্বাক্ষরিত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় একটি বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্যে নেমে আসে। এতে তিস্তার ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ অংশে মানুষের জীবনযাত্রা আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image