• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

সেন্টমার্টিন চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:০৬ এএম
রাজনৈতিক মহলে তোলপাড়
সেন্টমার্টিন চায় যুক্তরাষ্ট্র

শিমুল জাবালি

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে সরব দেশি-বিদেশি কূটনীতিক টেবিলসহ রাজনৈতিক অঙ্গন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ চায় এমনটি দাবি করেছেন ১৪ দলের নেতারা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। যদিও মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের কোনও ভূখণ্ডের ওপর দাবি করেনি তারা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। এদিকে বিএনপি বলছে, সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোটের বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশলের অংশ।

বঙ্গোপসাগরের ওপর কৌশলগত নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেরিন একাডেমির নামে কার্যত মার্কিন সৈন্যদের ঘাঁটি করার কৌশল বলে মনে করেন কেউ কেউ। এই কৌশল বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধীরে চলো নীতিতে চললেও এখন খুব জোরালোভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেওয়া হচ্ছে বলে ধারণা অনেকের।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। বাংলাদেশকে তারা বাগে রাখতে এর আগে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এটা শুধু দুরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের রেজিম চেঞ্জের কৌশলের অংশ।’

যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে বাংলাদেশের জন্যে যে ভিসানীতি করেছে সেটিও সেন্টমার্টিনকে পাওয়ার কৌশল বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তার মতামত জানালেন।

বুধবার (২১ জুন) সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিলে ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু সেটা তাঁর (শেখ হাসিনা) দ্বারা হবে না। তিনি দেশের কোনও সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চান না।

এসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল কীভাবে? তখন তো গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে আসতে চায়? আমি তো এইটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত দিয়ে এই দেশের কোনো সম্পদ কারও কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। এখনও যদি বলি ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ লিজ দেব, তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনও অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।’

প্রধানমন্ত্রীর এমন অবস্থান প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বহুমাত্রিক পৃথিবীতে এক দেশের খবরদারি এখন আর নেই। কোনো দেশ কারো ওপর কিছু চাপিয়ে দেবে এটা কেউ চায় না। তার মতে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে এমনটা বলেছেন। আগে বাংলাদেশের মাটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতের মণিপুরসহ কয়েকটি রাজ্যে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সুযোগ কেউ আবারও পায় সেটা হয়তো প্রধানমন্ত্রী চান না। পাশাপাশি ভারতের একটি বিষয় তো রয়েছেই। এ বক্তব্যের মাধ্যমে ভারত হয়তো কিছুটা স্বস্তি বোধ করবে।’

এদিকে সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভিত্তিহীন, মিথ্যা। বিএনপি কখনো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়নি। সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা রাজনৈতিক কৌশল।’

গত ১৯ জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে হঠাৎ বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকা অতি উৎসাহী হয়ে উঠছে। নানা বিবৃতি দিচ্ছে। কিন্তু হঠ্যাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন? তারা গণতন্ত্র টার্ম ইউজ করছে। অথচ পৃথিবীতে এমন একটি দেশের নামও কেউ বলতে পারবে না যেখানে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বরং আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে, তখন সেই দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের জন্য বেশি দুর্ভোগ বয়ে আনে। আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে আমেরিকার হঠাৎ এই অতি উৎসাহের হেতু কী? গণতন্ত্র নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ!’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মহাজোট নেতাদের এমন মন্তব্যের পর এ বিষয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সেলর শন ম্যাকিনটোশ গণমাধ্যমকে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। দেশটির কোনো ভূখণ্ডের ওপর আমেরিকা কোনও দাবি করেনি।’

সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলারও। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ শক্তিশালী এবং সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব বজায় রাখে। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। দেশটির কোনো ভূখণ্ডের ওপর আমরা কোনও দাবি করিনি। অবাধ, মুক্ত, উন্নত ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিশ্চিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্বকে আমরা মূল্য দিই এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সহ গণতন্ত্রের প্রচারে একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ককে জোরদার করার চেষ্টা করি।’

কোয়াড নিয়ে মহাজোট নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কিছুদিন আগের এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ-পিয়েরের বক্তব্য তুলে ধরে মার্কিন দূতাবাস বলছে- কোয়াড সম্প্রসারণ সম্পর্কে মে মাসে এক প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে নতুন সদস্যদের বিষয়ে (নেওয়ার) কোনো পরিকল্পনা নেই। কোয়াড সদস্যরা আপাতত জোটের শক্তি-সামর্থ্যরে দিকগুলো সুদৃঢ় করার ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে, ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের একটি বিস্তৃত পরিসরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগকে স্বাগত জানায় কোয়াড। যেমন: তার ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারদের মাধ্যমে মেরিটাইম ডোমেন সচেতনতা, যা এই অঞ্চলের চারপাশে অত্যাধুনিক মেরিটাইম ডোমেন সচেতনতা প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণের ভূখণ্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপটি স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা বা দারুচিনি দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। আরব নাবিকরা প্রথম এ দ্বীপে বসবাস করেন। তারা এর নাম দেন জাজিরা।

ব্রিটিশ শাসনের সময় টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল দ্বীপটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে সময়ে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরও সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

এর আগে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে বর্মী রাজার যে যুদ্ধ হয় তাতে বিতর্কের ইস্যুগুলোর মধ্যে এ দ্বীপের মালিকানাও ছিল অন্যতম। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় আট বর্গকিলোমিটার। এর সঙ্গে সংলগ্ন ছেঁড়া দ্বীপটি মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। ভাটার সময় দুটি দ্বীপ এক হলেও জোয়ারের সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুদিন আগে মিয়ানমার তার দেশের মানচিত্রে সেন্টমার্টিনকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া পূরণ করতে গেলে সাংঘর্ষিক পরিবেশের সৃষ্টি হবে যা বাংলাদেশ কখনো চায় না।

ঢাকানিউজ২৪.কম /

আরো পড়ুন

banner image
banner image