• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ আরব দেশগুলোর ভূগোল পাল্টে দিতে পারে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৭:২১ পিএম
গাজা
গাজায় আক্রান্ত শহর লোকজনের আর্তনাদ

কামার আগা

হামাস যে ভুল করেছে এবং যে সন্ত্রাস করেছে তা ইসরাইলকে প্রতিশোধ নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। ইসরায়েলের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল গাজা উপত্যকা সংযুক্ত করা। তাদের অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন যে তারা পশ্চিম তীর এবং সেখানকার জনগণকে সংযুক্ত করবে। জনসাধারণ অনুভব করতে শুরু করেছে যে তারা এখন শ্রমের মতো আচরণ করছে। পাছে আমরা দাস শ্রমে পরিণত হই।  
তারা বৃহত্তর ইসরায়েলের প্রকল্প চলছিল। হামাসের এই হামলা ইসরায়েলকে যা খুশি করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি এটি শুরু করেছেন এবং আমরা এটি শেষ করব। এর শেষ কোথায় হবে তা এখনই বলা মুশকিল। এটি ইরানে পৌঁছায় না তা দেখতে হবে।

ইসরায়েল একটি সুযোগ পেয়েছে

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন যে ইরান আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। ইসরায়েলকে ঘিরে যে রিং অফ ফায়ার তৈরি হয়েছে তা ইরানের সাথে যুক্ত এবং এর প্রধান ইরানে রয়েছে।

 নেতানিয়াহুও বারবার বলছেন যে তিনি ইরানের পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচি ধ্বংস করবেন। আমেরিকাও বলতে শুরু করেছে এই সময়ে ইরান ১৫ দিনের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে।

এর মধ্যে দুটি জিনিস রয়েছে। একদিকে বৃহত্তর ইসরায়েলের পরিকল্পনা রয়েছে অন্যদিকে আমেরিকাও এর সঙ্গে যুক্ত। কিছুদিন ধরে নিশ্চয়ই দেখা যাচ্ছে যে আমেরিকা সেখানে তার সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। 

তাদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের বিমান সদর দপ্তর কাতারে। তা ছাড়া স্থলবাহিনীর সদর দপ্তর বাহরাইনে। আমেরিকা তার নৌ উপস্থিতিও বাড়িয়েছে।
সৌদি আরব বা কাতার এই দেশগুলোর কোনো সামরিক সক্ষমতা নেই। তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাও শূন্য। এই লোকেরা তাদের নিরাপত্তার জন্য আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। কোনো আরব দেশ ফিলিস্তিনকে সাহায্য করতে আসবে না। তারা নিজেদের মধ্যে খুব বিভক্ত। তাদের সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। আমি মনে করি না কোনো আরব দেশ এখনই ফিলিস্তিনকে সাহায্য করার কথা ভাববে

ইরানের জন্য বিপদ বেড়েছে

ইরান অবশ্যই সেখানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছিল, তবে হামাসকে সমর্থন করা খুব কঠিন কারণ সেখানে ১৫ বছর ধরে অবরোধ চলছিল। গাজা উপত্যকায় আসা-যাওয়া যেকোন পণ্য শুধুমাত্র ইসরায়েলের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। একদিক মিশর থেকে এসেছিল তাই সেও বন্ধ করে রেখেছিল। 

মিশরও হামাসকে পছন্দ করে না কারণ হামাস মুসলিম ব্রাদারহুড মতাদর্শের। এটি একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা। আমেরিকা মনে করে ওই এলাকায় তার প্রভাব কম। সৌদি আরব চীনের সাথে লেনদেন করছে। সৌদি আরব বলছে যে তারা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখবে। এটা আমেরিকার বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে আমরা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও বন্ধুত্ব করব। 

এই লোকেরা রাশিয়ার কারণে ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দাও করেনি।

আমেরিকা তার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে

আমেরিকা এই সমগ্র অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন ইরান নিয়ন্ত্রিত হবে। এরই মধ্যে ইরান অনেক অগ্রগতি করেছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি অবকাঠামোগত ফ্রন্টেও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমেরিকা বিশ্বাস করে যে ২১ শতক আমেরিকান শতাব্দী। এটি বজায় রাখতে তেল সম্পদের উপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। এই কারণেই আমেরিকা ইরাক ও আফগানিস্তানে অনেক যুদ্ধ করেছে। তার চেষ্টা ছিল ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের, কিন্তু তা এখনও হয়নি।

স্থল থেকে নয়, আমেরিকা ও ইসরায়েল বিমান শক্তির মাধ্যমে ইরানের অবকাঠামো ধ্বংস করার সম্ভাবনা রয়েছে। অবরোধ চলছে, সেনা মোতায়েন বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, ইরান ১৫ দিনের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সব ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ভবিষ্যতে কি হবে বলা মুশকিল। 

হামাসের হামলা ইসরায়েল ও আমেরিকার পক্ষে এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যে তারা এসব এলাকায় যা খুশি করতে পারে। এরপর কি হবে বলা মুশকিল। পরিস্থিতি যেভাবে দেখছে তাতে মনে হচ্ছে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি সমতল করা হবে এবং সেখানকার লোকজনকে স্থান ত্যাগ করতে হবে। গাজা উপত্যকায় বসবাসের যোগ্য কিছুই থাকবে না। জনবসতিপূর্ণ পাড়াগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। কতজন মারা গেছেন, কতজন সমাধিস্থ হয়েছেন, প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। ইসরায়েলের ১৩০০ লোক মারা গেছে, সেটাও আফসোসের বিষয়, তাদের ৫০০ জন বন্দীও হয়েছে। যুদ্ধে কখনো কারো উপকার হয়নি, সর্বদাই ক্ষতি হয়েছে।

হামাসের হামলায় ফিলিস্তিনের কোনো লাভ নেই

হামাসের হামলায় ফিলিস্তিন কোনো সুফল পাচ্ছে না।আগামী সময় কঠিন।আমেরিকা যদি একদিক থেকে সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় এবং অন্যদিক থেকে হিজবুল্লাহ জড়িয়ে পড়ে তাহলে বিষয়টি আরও খারাপ হবে। আমেরিকা ইসরাইলকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত। ইসরাইল ওই অঞ্চলে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এসব পশ্চিমা দেশ ইসরাইলকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

এখন দেখার বিষয়, ইরান কী করে, আত্মসমর্পণ করে নাকি আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাকে ধ্বংস করার পদক্ষেপ নেয় কিনা। এটি একটি বড় ফাঁদ, আমেরিকা এবং তার মিত্রদের একটি বড় পরিকল্পনা। রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান শক্তি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাইওয়ানে আটকা পড়েছে চীন। আমেরিকা চায় না আরব দেশগুলোতে রাশিয়া বা চীনের প্রভাব বাড়ুক। ইরান দুর্বল হয়ে পড়লে রাশিয়াকে সাহায্য করতে পারবে না। এটি সবকিছুকে প্রভাবিত করবে। এই লড়াই দীর্ঘ দিন চলবে।

হিজবুল্লাহর আগমনে সমস্যা বাড়বে

হিজবুল্লাহ যদি ফিলিস্তিনকে সাহায্য করতে আসে, আমেরিকা খুব খুশি হবে। আমেরিকা তখন ইসরায়েলের হয়ে খোলাখুলি লড়াই করার সুযোগ পাবে। হিজবুল্লাহ জড়িত না হলে পুরো অঞ্চলের জন্যই ভালো হবে। এটা লেবাননের জন্যও ভালো হবে। এবার ইরান নিরপেক্ষ হলে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক সব শেষ হয়ে যাবে। সে অবস্থায় ইরানও চুপ হয়ে যাবে।

ইসরায়েল ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে অবস্থান নিয়েছেন তা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সন্ত্রাসকে ধ্বংস করতে হবে। ফিলিস্তিনের সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও। রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে দেখা করতে রামাল্লায় এসেছিলেন। ফিলিস্তিন সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। ভারতের সহায়তায় সেখানে অনেক প্রকল্প চলছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেয়, হামাস বা ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নয়। ভারত এখনও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাসী। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের কৌশলগত অংশীদার। সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান। তারা একসঙ্গে প্রতিরক্ষা উৎপাদনও করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরাইল ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কামার আগা ভারতীয় নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, লেখাটি অনুবাদ করেছেন সুমন দত্ত
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি

আরো পড়ুন

banner image
banner image