
কক্সবাজার :
বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে ২৯ বাংলাদেশিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। মংডুতে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি ও মিয়ানমার ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা দুই থেকে সাড়ে ছয় বছর মিয়ানমার কারাগারে খাওয়া দাওয়া এবং মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানান। তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে টেকনাফে মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, সাগরে মাছ শিকার এবং সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে সেদেশের আইশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে।
বিজিবি জানায়, মংডুতে বেলা ১১টায় টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল ইয়ে ওয়াই শো-এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে বৈঠকে অংশ নিতে টেকনাফ বিজিবির বিওপির জেটি দিয়ে রওনা হয়েছিল বিজিবির প্রতিনিধি দল।ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে টেকনাফ ৭, উখিয়া ৩, মহেশখালী ১২, রাঙ্গামাটি ৩ ও বান্দারবানের ৪ জন রয়েছেন।মঙ্গলবার দুপুরে জেটিঘাটে বিজিবি ২ টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৯ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা মালয়েশিয়া ও সাগরে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমারের হাতে আটক হয়েছিল। তাদের সাজাভোগ শেষে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়।
তিনি বলেন, সে দেশের কারাগারে যেসব বাংলাদেশি জেলে আটক রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। ২৯ জনকে টেকনাফ মডেল থানায় পুলিশের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এখান থেকে সাগরপথে কেউ যাতে অবৈধভাবে যাত্রা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। তাদের বলেছি, যদি জলসীমানা থেকে কোনো বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের অবিহত করে সমাধান করা হয়।
তাছাড়া এ বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তিও রয়েছে। বিশেষ করে সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। এবং মিয়ানমার থেকে যে পরিমাণ ইয়াবা ঢুকছে, সে বিষয়ে তাদের পক্ষে থেকে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সাজা ভোগ করে ফেরত আসা তৈয়ব ও আব্দুল আজিজ বলেন, আমাদের চারজন জেলেকে ২০১৭ সালের নভেম্বরে নাফ নদী থেকে মাছ শিকারের সময় ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী পুলিশ। আমাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। আমাদের অমানবিক নির্যাতন করে। তখন আমরা বেহুশ হয়ে গেলে হাত পা বেঁধে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। আমাদের সাজা ছিল ২৯ বছর। কিছু সাজা মওকুফ করে সাড়ে পাঁচ বছর করা হয়।
তারা আরও বলেন, সেদেশের কারাগারে টিকমতো খাবার দিতো না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টে দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
অবশেষে সরকারের চেষ্টায় স্বদেশে ফেরত আসতে পেরেছি, এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী, টেকনাফ-২ বিজিবি উপঅধিনায়ক মেজর মাসুদ রানা, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর রাজ্জাক।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: