
নিউজ ডেস্ক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব ধরনের গণবিরোধী এবং নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছে ৩০টির বেশি সংগঠন। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে “প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ”-এর ব্যানারে আয়োজিত প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধাপক বদিউর রহমান-এর সভাপতিত্বে সমাবেশের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন। এরপর বক্তব্য, আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশের কার্যক্রম।
সমাবেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা এবং বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জেড আই খান পান্না, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র-এর অভিজিৎ রায় রঘু, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ-এর ইফতেখার আহমেদ বাবু, ভাসানী পরিষদ-এর ডা. হারুন অর রশিদ, প্রগতি লেখক সংঘ-এর সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, আসাদ পরিষদ-এর শামসুজ্জামান মিলন প্রমূখ। এছাড়া, গণসঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ এবং গণসংস্কৃতি কেন্দ্র-এর শিল্পীরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বদেশ চিন্তা সংঘ-এর হাসান ফকরি, তীরন্দাজ-এর দীপক সুমন, আসাদ পরিষদ-এর
শামসুজ্জামান মিলন, কবি মাসুক শাহী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর কামরুজ্জামান ভূইয়া। “তুমিই বাংলাদেশ” শিরোনামে নাটক পরিবেশন করে বটতলা-এ পারফরমেন্স আর্ট-এর শিল্পীরা। থিয়েটার ৫২ পরিবেশন করে “একটি সাহসী ফুল দেখা যায়” শিরোনামের নাটক। আর তীরন্দাজ-এর শিল্পীরা মঞ্চে নিয়ে আসেন “ডেভেলপমেন্ট” নামের প্রতিবাদী নাটক। এছাড়া, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন-এর শিল্পী-কর্মীরা পরিবেশন করেন পারফরম্যান্স আর্ট। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র-এর আমিরুন নূজহাত মনীষা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে বাহাত্তরের সংবিধানের মৌল চেতনার বিরোধী নানা ধরনের আইন-কানুন প্রয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার পাঁয়তারা চলছে। যার মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অন্যতম। সংবিধানের মৌল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক এই আইনের মাধ্যমে দেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যম, শিক্ষক, ছাত্র, শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি এবং বিরোধীমত দমনের অন্যতম হাতিয়ার বানানো হয়েছে এ আইনকে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ধরনের নিবর্তনমূলক আইন কখনোই বলবৎ থাকতে পারে না বলেও তারা মন্তব্য করেন।
সমাবেশে প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের পক্ষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এতে বলা হয়, সরকার অগণতান্ত্রিক, নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে একের পর এক সংবাদকর্মী ও সমাজের নানাস্তরের মুক্তচিন্তার মানুষকে গ্রেফতার, ভয় ভীতি দেখানোর মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে চলেছে। ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে কথায় কথায় মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে গ্রেফতার-হয়রানির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশ এক বর্বর সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সরকার অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতের নাম করে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার
গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে উদ্যোগী হয়েছে। দেশে লুটপাট ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে এসকল অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে সমাবেশের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়। ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, এসব অগণতান্ত্রিক আইনকানুন এবং দমন-পীড়ন স্বাধীনতার ঘোষণা তথা সাম্য, সামাজিক ন্যায়
বিচার ও মানবিক মর্যাদার পরিপন্থী। একচেটিয়া অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের স্বার্থে সরকার বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ না করে মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। ফলে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের আত্মদানে অর্জিত স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ছে। ঘোষণাপত্রে সুনির্দিষ্ট চারটি দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো--
১) অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে এবং এ আইনে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সকল বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
২) অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা খাতের অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটের অধিকার হরণের পায়তারাসহ জনস্বার্থবিরোধী নিত্য নতুন আইন প্রণয়নের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
৩) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে হবে। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪) নিরাপত্তার অজুহাতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয়া বন্ধ করে সংস্কৃতি চর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ সমাবেশ উপরোক্ত দাবির সপক্ষে সংস্কৃতিকর্মী, লেখক-শিল্পী, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: