নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলে সোমবার সন্ধ্যায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। সেই ঝড়ের ঝাপটা লাগে দেশজুড়ে। ৭৪ কিলোমিটার গতিবেগের সিত্রাং উপকূলজুড়ে তাণ্ডব চালায় মধ্যরাত পর্যন্ত। ভোরে দুর্বল হয়ে বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল পেরিয়ে ভারতের দিকে যায়। তবে পার হওয়ার সময় তছনছ করে দিয়ে যায় উপকূল। অমাবস্যা রাতে ভয়াবহতা টের পাওয়া গেলেও স্পষ্ট হয়নি ক্ষত। ভোরে রৌদ্রোজ্জ্বল আলো ফুটতেই বেরিয়ে আসে রাতের ধ্বংসযজ্ঞের চেহারা। তবে ঝড়ের সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি।
সোমবার রাতে ৯ জন মারা যাওয়ার খবরের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগ হয় আরও ২৯ প্রাণ। সব মিলিয়ে সিত্রাং কেড়ে নিয়েছে ৩৮ জীবন। বিধ্বস্ত হয় ঘরবাড়ি, উপড়ে যায় গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে গেছে ঘেরের মাছ, ডোবে ক্ষেতের ফসল। সবচেয়ে বেশি আঘাত আসে কৃষকের ঘামে ভেজা স্বপ্নের ফসলে। আধাপাকা আমনে মই দিয়েছে সিত্রাং।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তাৎক্ষণিক তথ্য বলছে, ৫৮ হাজার ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের ভাষ্য, ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে কম হয়েছে। ১০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৯ জন। আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। মৎস্য ঘের ভেসে গেছে ১ হাজার। সরকার বলছে, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে তারা।
এদিকে ঝড়ের কারণে সোমবার সন্ধ্যা থেকে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাসায় ফিরেছেন দুর্গতরা।
পূর্বাভাসে ঘাটতি, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ব্যাখ্যা :ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিয়ে পূর্বাভাস ছিল ১ অক্টোবর। তার পরও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রস্তুতি ছিল নড়বড়ে। পূর্বাভাস, সতর্কবার্তা পৌঁছানো ও আগাম প্রস্তুতিতে ছিল ঘাটতি। একেক সময় দেওয়া হয়েছে একেক বার্তা। প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বাংলাদেশে সিত্রাং আঘাত হানার তথ্য নিয়েও শেষ মুহূর্তে তৈরি হয় বিভ্রান্তি। যদিও সোমবার তিনি তাঁর আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যেও ছিল গরমিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুরু থেকেই সিত্রাংয়ের আচরণ ছিল এলোমেলো। বারবার পাল্টাতে থাকে গতিপথ। তাই এর গতিবিধি ঠিকমতো বোঝা যায়নি। আসার পথে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিজের শক্তি ক্ষয় করেছে।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় হিসেবে গঠিত হওয়ার আগে নিম্নচাপের সময়ই এটি তিন অংশে ভাগ হয়ে যায়। আর বারবার পাল্টেছে গতিপথ। প্রথমে ভারতের উড়িষ্যা, পরে পশ্চিমবঙ্গ এবং শেষে বাংলাদেশের উপকূলমুখী হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরও সোমবার পর্যন্ত একে প্রবল ঘূর্ণিঝড় বলেছে। তবে আসার পথে এটি প্রবল বৃষ্টি ঝরায়। তাতে এর শক্তিক্ষয় হয়। তাই এটি দ্রুত এসে দ্রুতই চলে যায়। রাত ১টার মধ্যেই উপকূল মোটামুটি পরিস্কার হয়ে যায়। ছয় ঘণ্টার মধ্যে এটি হয়ে পড়ে শক্তিহীন।
১৭ জেলায় ৩৮ প্রাণহানি : তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত দেশের ১৭ জেলায় ৩৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: