
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের ভূয়াছড়িতে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে একই মাদ্রাসার শিক্ষক। নিহত শিশু ছাত্রটির নাম মো. আবদুর রহমান আবির (৭)। তার মুখ থেকে সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
রবিবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শিশুটিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত আবির জেলার পানছড়ি উপজেলার আইয়ুব মেম্বারপাড়া এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক মো. সরোয়ারের ছেলে। আবির জেলা সদরের ভূয়াছড়ি এলাকার বায়তুল আমান কমপ্লেক্সের হেফজ বিভাগের ছাত্র।
এদিকে ঘটনার পরপর অভিযুক্ত হেফজখানার হাফেজ মো. আমিনুল ইসলাম হাসপাতালে আবিরের মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়।
ঘাতক শিক্ষক হাফেজ আমিনুল ইসলাম মানিকছড়ি গচ্ছাবিল বাজার আনছার ক্যাম্প সংলগ্ন মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, মৃত আব্দুর রহমান আবির(০৮)কে ডিস লাইনের তার এর উপর কস্টিপ পেঁচিয়ে প্রচুর মারধর করার পর একটি দান বক্সের ভিতর শাস্তি স্বরুপ ৪০মিনিট যাবত আটকে রাখে। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় দেখে অন্য একটি ছাত্র সেই বক্স থেকে আবির রহমানকে ঘামন্ত অবস্থায় বের করে আনার পর থেকেই শুরু হয় মারাত্মক জ্বর আর বমি।
বমি করার অপরাধে ঘাতক শিক্ষক আবির রহমানকে আবারো মারে ও তাকে সেই বমি খাওয়ায়। আবিরকে বমি বন্ধ করার জন্য হেনাপাতি জর্দা দিয়ে পান খাওয়ানো হয়। ছোট শিশুকে জর্দা খাওয়ানোর জন্য আরো বমি শুরু হয়।
উক্ত হেফজ খানার অন্য আরেক শিক্ষক আবিরের গায়ে মলম লাগিয়ে দেয়। আর এই ঘটনা কম বেশি প্রায় শিক্ষক জানার পরেও কমিটির লোকদের বা অত্র এলাকার কাউকে জানায় নি। কেন? জানায় নি এলাকাবাসী তার জবাব চায়।
আবিরের মৃত্যুর আগে তাকে হিস্টাসিন/প্যারাসিটামল ট্যাবলেট জোর করে চুসিয়ে চুসিয়ে খাওয়ায় তবুও কোন পানি দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরেই নানা অজুহাতে হাফেজ আমিনুল ইসলাম শিশু আবিরকে নির্যাতন করে আসছিল। রবিবার বিকেলেও তাকে নির্যাতন করে। এসময় আবির বমি করলে অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে চিকিৎসক মৃত ঘোষণার পর সে পালিয়ে যায়।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শ্বাশতি দাশ জানান, মুখসহ পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বায়তুল আমান ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে এসে শুনি আবির মারা গেছে। তাকে কতটুকু নির্যাতন করা হয়েছে তা আমি জানি না।
নিহত আবিরের খালু নুরুল ইসলাম মোহাম্মদ বলেন, আমার সন্তানও ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সে জানায় শিশু আবিরকে প্রায়ই জর্দা খেতে দিত। খেয়ে বমি করলে বেদম মারধর করতো। এমনি একবার তাকে দানবাক্সে ঢুকিয়ে তালা মেরে রাখে। অনেক পরে তাকে বের করে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার উপপুলিশ পরিদর্শক সুজন চক্রবর্তী বলেন, শিশুটির মুখ থেকে পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: