• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

 মানুষ নয়, বই ছুটছে পাঠকের কাছে


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১:৫৭ এএম
 মানুষ নয়
বই ছুটছে পাঠকের কাছে

অলোক আচার্য

ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলো আমাদের ও শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে পরিবার, স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ব্যাবহারের কারনে মানুষ চলে যাচ্ছে এক অজানা জগতে। মুঠোফোন ও কম্পিউটার অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের করে তুলছে অলস,সহিংস,হতাশাগ্রস্ত। ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম হারাচ্ছে ধৈর্যশীলতা,সহনশীলতা এবং বোধবুদ্ধি। সমাজের মানুষ বিশেষত তুরুণ ও শিক্ষার্থীদের এ পথ থেকে ফেরাতে পাবনার বেড়ার শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন গড়ে তুলেছে ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার।

ইতিমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুর আলীর অর্থায়নে নির্মিত ব্যতিক্রমী এই শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি। 

ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি তিন চাকা বিশিষ্ট একটি ভ্যানে নির্মিত হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ আগষ্ট প্রায় ৭০০ বই নিয়ে পথ চলা শুরু করে। পাঠাগারটি ৭ দিন করে উপজেলার প্রতিটি স্কুলে থাকবে এবং ঐখানের শিক্ষার্থীরা এর দায়িত্বে থাকবে।পাঠাগার উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।এটা স্কুলের টিফিনের সময় খোলা হয়। শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় হলেই চলে আসে পাঠাগারে পছন্দমত বই নিয়ে যায় ক্লাসে। টিফিন শেষ হওয়ার ঠিক ৫ মিনিট আগে এই বই গুলো আবার ফেরত দিয়ে যায়। শিক্ষাথীরা খাতায় নাম ঠিকানা লিখে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুর্যোগও পাবে। ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটিতে গল্প, উপন্যাস, ছোট গল্প, ইসলামিক, শিশুতোষ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, বঙ্গবন্ধু আত্মজীবণীসহ বিভিন্ন বই রয়েছে।

সরেজমিনে উপজেলার আলহেরা স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় তাদের ইচ্ছামত বই নিয়ে দাড়িয়ে বা ভবনের বারান্দায় বসেই বই পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষর্থীরা ভ্রাম্যমাণ এই পাঠাগারের বই পড়েন।

আলহেরা স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহমুদা জান্নাত বলেন, আমি আলহেরা একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজে এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটির দায়িত্বে আছি। এই সপ্তাহে আমাদের স্কুলে পাঠাগারটি থাকায় টিফিনের সময় হলে আমি পাঠাগারের পর্দাটি সরিয়ে দেই। তারপর সবাই সবার পছন্দের বই সংগ্রহ করে পড়া শুরু করে। এতে দেখা যাচ্ছে সবাই গল্প করে সময় নষ্ট না করে বই পড়ছে। কাজটি করে সে খুবই আনন্দ পাচ্ছে।পাঠাগারে অনেক রকমের বই রয়েছে।গতকাল আমি একটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। বইটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অনেক অজানা তথ্য জেনেছি।

বেড়া বি বি স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবু সালেক ও সৌরভ বলেন, পড়ার ফাঁকে অবসর সময় মোবাইল ব্যবহার করেছেন বা বাইরে আড্ডা দিত । এখন পাঠাগার থেকে বই বাড়িতে নিয়ে  পড়ে অনেক কিছু শিখেছেন।এখন আর বাইরে সময় নষ্ট না করে বই পড়েন।তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ছেন। তা থেকে জাতির পিতার প্রতি সম্মানটা আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি করেছে তাদের। এই জন্য তারা শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান।

সাঁথিয়ার জোড়গাছা ডিগ্রি কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জালাল উদ্দিন বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষা। আর পাঠাগার হচ্ছে সুশিক্ষা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম। শিক্ষা বিস্তারে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় পাঠাগার স্থাপন হওয়া দরকার।পাঠাগার একটি সুস্থ্য বিনোদনেরও জায়গা। একটি তথ্যনির্ভর ও আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে বইপড়ায় সম্পৃক্ত করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা সহজেই সম্ভব। শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন ভ্রাম্যমান পাঠাগার করে যে কাজটি করে যাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই পাঠাগারের কারনে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তার হচ্ছে। সংগঠনটিকে ধন্যবাদ জানচ্ছি। সেইসাথে তাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাতা মেহেরাব হোসেন (জিম) বলেন,গল্প হোক বইয়ের সাথে এই শ্লোগান সামনে রেখে আমাদের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি করা। আমাদের শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয় মূলক কাজ করে যাচ্ছে কয়েক বছর ধরে।তারই ধারাবাহিকতায় বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব সবুর আলী স্যারের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের খারাপ মাদকের নেশা,মোবাইল গেমিং থেকে দূরে রাখতে আমাদের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের উদ্যোগ নেয়া। আশা করি পাঠাগারটি সফলতার মুখ দেখবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ সবুর আলী বলেন, ইতিমধ্যেই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরা আরেকটি এমন পাঠাগার নির্মাণের উদ্দ্যোগ নিয়েছি।এক সময় একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়ে অথবা খেলাধুলা করে সময় কাটত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর।এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মাট ফোন।আবার অনেক শিক্ষার্থী মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। নতুন প্রজন্মকে এই পথ থেকে ফেরানোর একটাই উপায় বই পড়ানো।বই নতুন প্রজন্মকে আলোর পথ দেখায়। আশা করছি পাঠাগারটি আলোর মুখ দেখবে।


লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পাবনা।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image