সাহাদাত হোসেন কাজল, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোণা জেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমকেসিএম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই নাজুক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম আলমগীর হাছান এর স্বেচ্ছাচারিতায় স্কুলের সমস্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে । দুর্নীতির সীমা পেরিয়ে গেলেও সে বহাল তবিয়তেই আছেন। তিনি স্কুলের সহকারি শিক্ষক, অবিভাববকবৃন্দ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। বিদ্যালয়ের কক্ষগুলোর ব্যাঞ্চ এলোমেলো, নোংরা । শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে আলমগীর হাছানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থী এবং অবিভাবক বৃন্দ । ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিগত ২৮ জুন পদত্যাগের দাবিতে আলমগীর হাছানকে তালাবন্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরে যাবেন শর্তে ছাত্ররা তালা খুলে দেয়। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা না করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে পোষ্ট দেন যা দেখে তারা খুবই মর্মাহত হন । এতে করে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ।
তারা স্বস্তিতে ক্লাস নিতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে তিনি ৪ মাস ধরে স্কুলে অনুপস্থিত যে কারনে অর্থনৈতিক সংকট এই স্কুলে চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের প্রাচীর তৈরীতে অনিয়ম সহ নানা অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে । ক্ষমতার অপব্যবহার তার কাছে মামুলি বিয়ষ । তার অসদাচরণ ও গালিগালাজের জন্য ভাড়া বাসা থেকে ঘরের মালিক বের করে দিয়েছেন । সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণের ব্যাপারে তিনি অপবাদ, কটুক্তি ও গালিগালাজ করেন । পরীক্ষা পরিচালনায় তিনি খুবই নিন্মমানের কাগজ সরবরাহ করেন কিন্তু বিল করেন বেশী দামের কাগজের ।
পরে বাড়তি টাকা তিনি তসরুপ করেন বলেও অভিযোগ আছে । শিক্ষকগন কিছু বললে শোকজ করার হুমকি দেন। ইতি মধ্যেই তিনি দুইজন শিক্ষকের বেতন ফরোওয়ার্ড করেন নি যার ফলে বিগত একমাস যাবৎ তারা বেতন তুলতে পারছেন না। ছাত্র-অভিভাবক এবং সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ তার পদত্যাগের দাবীতে মানববন্ধন করলেও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। তিনি এসবের কোন তোয়াক্কা করেন না। অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ময়মনসিংহ বরাবরে অভিযোগ দেয়া সত্বেও কোন কাজ হচ্ছে না।
ছাত্র অভিভাবকগণ হতাশ হয়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এখানে ওখানে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজের হযবরল অবস্থা। এই স্কুলে কোন ক্লাস রুটিন নাই। , শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া হচ্ছে না। আগামী এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে । প্রয়োজনে প্রত্যয়নপত্র, প্রশংসাপত্র, মার্কসিট সার্টিফিকেট সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। মূলত স্কুলের প্রশাসনিক কাজ বন্ধ আছে । তার ব্যপারে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফান্ড আত্মসাথের একাধিক অভিযোগ রয়েছে । শুধু তাই নয় সরকারী বাজেটের ব্যয় শুধু বিল ভাউচারেই সীমাবন্ধ। সরকারী বাজেটের কোন দৃশ্যমান আলামত নেই।
অন্যান্য শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ের ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের নাজেহাল করা হয়। বাবা মা তুলে বকতেও দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারি বরাদ্ধকৃত অর্থ তিনি অনুষ্ঠানে খরচ না করেই তার নিজস্ব তহবিলে খরচ করেন। বিদ্যালয়ে ২১১জন শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিদিন উপস্থিত হয় ৭০/৭৫জন কিন্তু ভাউচারে সকল ছাত্রকেই দেখানো হয়। তিনি অসুস্থ্য থাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে পারেন না । এই নামকরা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব নেই, বিজ্ঞান গবেষণাগার নেই।
এইসব সরঞ্জাম কেনার জন্য সরকারী বাজেট বরাদ্ধ থাকলেও এ খাতে খরচ না করে তিনি বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন । তাছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সময় তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন যা এখানকার মানুষের মুখে মুখে । এ রকম দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেন এলাকাবাসী ।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: