• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৮ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

আগষ্ট বিদ্রোহে রাজশাহীতে আমরা 


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ আগষ্ট, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২:১৫ পিএম
আগষ্ট বিদ্রোহে রাজশাহীতে আমরা 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

পারভেজ আহমেদ পাপেল 

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল। খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও সেনা সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায় সেনা সদস্যরা। এর প্রতিবাদ করতে গেলে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে সেনাসদস্যরা।

এর প্রতিবাদে পুরো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দাবি ওঠে ছাত্রদের কাছে সেনাদের ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু সেনারা তা মেনে নেয়নি। পরে ক্যাম্প প্রত্যাহার সহ জড়িত সেনাকর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।

এরকম পরিস্থিতিতে ২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তখন তাদের উপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। নীলক্ষেত, টিএসটি, কার্জনহল এলাকা সহ ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। পুলিশের টিয়ার সেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়  সেনাবাহিনী।
২০০৭ সালের ২১ আগষ্ট রাবি ক্যাম্পাসে একদল দেশপ্রেমিক শিক্ষক ঢাবির ঘটনার প্রতিবাদে মৌন র্যালী বের করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় একটি শায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হয়। ঢাবির ঘটনার প্রেক্ষিতে মৌন প্রতিবাদ করা কোন দোষের কিংবা অন্যায়ের ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর সেনা সদস্যদের নির্যাতনের ঘটনার জের ধরে ২২ আগষ্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-বিক্ষোভকালে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ছাত্রশিবির ক্যাডার ও ৫৪৪ খ্যাত কর্মচারীদের একটি অংশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর, ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। 

সংঘর্ষকালে ক্যাম্পাসে রিকশাচালক আফজাল হোসেন নিহত হন পুলিশের গুলিতে। ক্যাম্পাসের ভেতরে যখন ধ্বংসলীলা চলছিল ঠিক তখন রাজশাহী ডিজিএফআইয়ের একটি গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করছিল। ভেতরে বিক্ষুব্ধ অবস্থা বিবেচনা করে এখন ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে ডিজিএফআইয়ের সহকারী পরিচালককে বহনকারী গাড়িটিকে ভেতরে যেতে নিষেধ করেছিল সেখানে কর্মরত পুলিশ। কিন্তু ডিজিএফআইয়ের ওই কর্মকর্তা সেদিন পুলিশের অনুরোধের কর্ণপাত করেননি। ক্যাম্পাসের ভেতরে উপাচার্য ভবনে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা উপাচার্য এর সাথে কথাবার্তা বলে গাড়িতে ওঠে ফিরে যাচ্ছিলেন শহরে। এমন সময় উল্টো দিকে থেকে প্যারিস রোড দিয়ে নিহত রিকশা চালকের লাশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা উপাচার্য ভবনের দিকে আসতেছিল। উপাচার্য ভবনের মূল ফটক অতিক্রম করামাত্র ডিজিএফআইয়ের গাড়িটির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। ওইসময়ই লাশ বহনকারী বিক্ষুব্ধরা ডিজিএফআইয়ের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২২ আগস্ট এ আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। 

২০০৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে আমি এবং আমার বন্ধু ও সহযোদ্ধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এস এম চন্দন রাজশাহীর একটি এনজিওতে চাকরী শুরু করি। সৌভাগ্যক্রমে এই প্রতিষ্ঠানে আমাদের বস ছিলেন রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এহসানুল আমিন ইমন। আমরা তিনজন অফিসে একই রুমে বসতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার দিন আমরা মোবাইলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। দুপুরের দিকে খবর পাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ গুলি চালিয়েছে এবং বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা ডিজিএফআইয়ের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। এসময় আমরা তিনজন ভাবতে থাকি একটা কিছু করা দরকার। চন্দন ইমন ভাইয়ের মোবাইল থেকে রাবি’র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বলেন মিছিল নিয়ে শহরে আসতে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দ জানান এখান পরিস্থিতি ভালো নয় মিছিল নিয়ে বের হলে বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটতে পারে। 

এসময় ইমন ভাই বলেন শহরে এই ঘটনার প্রতিবাদে হাতে লেখা কোন পোষ্টার লাগানো সম্ভব কিনা। আমরা যখন এই আলাপে ব্যস্ত এ সময় আমাদের আর একজন সহকর্মী তৌহিদুল আলম টিয়া চাইপনবাবগঞ্জ জেলা  যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি বলেন আপনাদের উদ্যোগটি ভালো। আমার কোন ধরণের সহযোগিতা লাগলে বলবেন। এরমধ্যে ইমন ভাই ঠিক করে ফেলেন পোষ্টারে কি লেখা হবে। আমি শহর ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মাহফুজুর রহমান ডনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে পোষ্টার লেখার দায়িত্ব দেই। ঠিক হয় অফিস শেষে গণকপাড়া যাব আমি ও চন্দন। এবং পোষ্টার কোথায় কোথায় মারতে হবে টিমে কে কে থাকবে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে ঠিক করা হয়। দুপুরের পর খবর আসে সন্ধ্যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ফাকা করে দিতে হবে। এই খবর পেয়ে চন্দন কাজলা চলে যায়। আমি এবং ইমন ভাই গণকপাড়া যেয়ে ডনকে সব বিষয়ে বুঝিয়ে দেই। রাত্রি ৯টার দিকে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের রাজশাহী জেলা ও মহনগরের ডন, রনি, পলান ও আজাদ পোষ্টার লাগানোর জন্য বের হয়। বরেন্দ্র কলেজ, রাজশাহী কলেজ এ পোষ্টার লাগানো শেষে ওরা যখন মেডিক্যাল কলেজে পোষ্টার লাগাচ্ছিল এসময় ডিজিআইএফ এর একজন তাদের দেখে ফেলে। ঘটনা বেগতিক দেখে তারা চারজন দ্রুত আলাদা হয়ে যায়। ডিজিএফআই এর লোক ডনকে ধরে ফেলে এবং বিভিন্ন ভাবে জেরা করতে থাকে যে কেন কি কাজে মেডিক্যালে এসেছে। ইতিমধ্যে রনি আমাকে মোবাইলে বিস্তারিত ঘটনা জানায়। আমি সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে ইমন ভাই, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক ও সিপিবি’র নগর কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ভাইকে ঘটনাটি জানাই। ইতিমধ্যে ডন ডিজিআইএফ এর লোককে ছয় নয় বুঝিয়ে সেখান থেকে দ্রুত সরে পরে। 

রাবি’র হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা বিপদে পরে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ও সিপিবি রাজশাহী জেলার সাবেক সভাপতি  প্রয়াত মোহাম্মদ নাসের নাসের স্যারের বাসায় মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ২২ আগষ্ট বিভাগীয় শহর গুলোতে কারফিউ জারি করা হয়। উল্লেখ্য আমাদের মেয়েদের অধিকাংশের বাড়ি ছিল উত্তরবঙ্গে। কারফিউ শিথিল হলে ছাত্র ইউনিয়নের মেয়েদের বাড়ি পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় রাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু সায়েম এর উপর। সায়েম তাদের বাড়ি পৌছে দিয়ে যখন পিরগঞ্জে তার নিজ বাড়িতে পৌছে এর মধ্যেই জানা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় আবু সায়েমকে আসামি করা হয়েছে। আত্মগোপনে কালীন সময়ে  সায়েম উদীচীর জহির এর বাড়িতে অবস্থান করেন। দিনাজপুরে সায়েমের আত্মগোপনে থাকার ব্যবস্থা করেন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সিফাত ই জাহান শিউ।  

গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সিপিবির পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হতো। ভাষা সৈনিক এড. গোলাম আরিফ টিপুর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ রাখতেন রাবির শিক্ষক ও সিপিবি নেতা ড. মোহাম্মদ নাসের। যখন এই ১৩ জনের সাড়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়, তখন ড. মোহাম্মদ নাসেরের বাসায় কমিউনিস্ট পার্টির এক জরুরি গোপণ বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, সাজাপ্রাপ্ত রাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি আবু সায়েমসহ সকলের মুক্তি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা হবে। তবে কোনোভাবেই ক্ষমা চাওয়া হবেনা। সেভাবেই একটি আবেদনপত্র তৈরি করেন চন্দন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ও পরবর্তীতে আমার বন্ধু ও সহযোদ্ধা এস এম চন্দন এর স্ত্রী সিফাত ই জাহান শিউ এর তখন এমবিএ ক্লাস চলছে কিন্তু হল বন্ধ থাকায় তার থাকার সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ইমন ভাই আমার বাবার সঙ্গে কথা আলোচনা করে শিউ এর থাকার ব্যবস্থা করে আমাদের বাসায়। 

পার্টি অফিস বন্ধ। আমরা তখন অফিস শেষে সন্ধ্যা বেলায় গণকপাড়া তুলা পট্টিতে চায়ের দোকানে বসা শুরু করি। আমি, ইমন ভাই, পিন্টু ভাই, আজাদ(ছাত্র ইউনিয়ন), পলান, ডন, রনি, আবুল কালাম আজাদ (সিপিবি), আলী আর্সলান অপু, এনামুল হক (সিপিবি), চন্দন, লিসা আরজুমান্দ (সমগীত), মুরাদ মোর্শেদ (গণ সংহতি), আলফাজ (বাসদ), দেবাশীষ (বাসদ) সহ অনেকেই নিয়মিত গণকপাড়ায় আড্ডা দিতাম। পুলিশের গাড়ি বা ডিজিএফআইয়ের গাড়ি দেখলে আমরা এমন ভাবে বসে থাকতাম যেনো চা খেতে এসেছি কেউ কাউকে চিনি না। এভাবে কদিন কাটানোর পর ইমন ভাই একদিন প্রস্তাব দেন যে যেহেতু সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ এসো আমরা একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলি। যার ব্যানারে আমরা কাজ করতে পারব। প্রাথমিক ভাবে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, সাংকৃতিক ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমগীত, ছাত্রফ্রন্ট, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন ও সিপিবির কয়েকজন বসে আমরা এই আলোচনার সঙ্গে একমত পোষণ করি। এবং চেতনায় একুশ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত পোষণ করি। 

চেতনায় একুশ গঠনের প্রথম প্রস্তুতি সভাটি আমাদের বাসায় অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রস্তুতি সভায় চেতনায় একুশের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় রাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত এ্যাড আব্দুর রাজ্জাক (আমার বাবা)। যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন তৎকালীন শহর উদীচীর সভাপতি আলমগীর মালেক, সদস্য সচীব সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এহসানুল আমীন ইমন। সদস্য ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের মুরাদ মোর্শেদ, বাসদের দেবাশীষ, যুব ইউনিয়নের হাফিজ উদ্দীন পিন্টু, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা দেবাশীষ সাহা, সমগীত এর লিসা আরজুমান্দ। এবং উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ভাষা সৈনিক গোলাম আরিফ টিপু, প্রয়াত ভাষা সৈনিক সাইদ উদ্দিন আহমদ, প্রয়াত ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন, ভাষা সৈনিক মোশারফ হোসেন আখুঞ্জি। 

সেনা সমর্থিত সরকার থাকার কারণে সেই সময় যেহেতু কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে রাস্তায় নামা সম্ভবপর ছিল না। তাই এই ধরণের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যেই চেতনায় একুশ গঠন করা হয়। 
চেতনায় একুশের ব্যানারে আমরা প্রথম প্রকাশ্যে বিজয় র্যালি করেছিলাম ১৬ ডিসেম্বর। ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর ভূবন মোহন পার্কে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক প্রদান শেষে শপথ বাক্য পাঠ করান চেতনায় একুশের আহবায়ক ভাষা সৈনিক এ্যাড আব্দুর রাজ্জাক। এসময় ভাষা সৈনিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় মিছিল মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। কিন্তু শহীদ মিনারে পুষ্প স্তবক অর্পন শেষে আমি শ্লোগান ধরলে আমার সহযোদ্ধারা জোরালো কণ্ঠে এর উত্তর দিয়ে ভূবন মোহন পার্ক চত্তর প্রকম্পিত করেন মুহুর্তেই। 

এরপর ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করে চেতনায় একুশ। সেনা শাসন চলাকালীন পুরো সময়টা ধরে চেতনায় একুশ তার কাজ চালিয়ে গেছে। এই সময় রাজনৈতিক দলগুলো যখন এই ধরণের  কর্মসূচীগুলো পালন করার ক্ষেত্রে দ্ধিধান্বিত ছিল তখন চেতনায় একুশ মাঠে নামে। সেখানে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং ভাষা সৈনিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। চেতনায় একুশ সকল রাজনৈতিক মহলের জন্য একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। 

চেতনায় একুশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ব্যাপক ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মহান ভাষা দিবসে উদযাপনের লক্ষ্যে চেতনায় একুশ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক  সংগঠনের সঙ্গে গোপনে মিটিং করে।  একুশে ফেব্রুয়ারী সকালে চেতনায় একুশের ব্যানারে রাজশাহীতে সর্ববৃহৎ প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রভাত ফেরিতে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রভাত ফেরিতে উপস্থিত ছিলেন ভাষা সৈনিক গোলাম আরিফ টিপু, প্রয়াত ভাষা সৈনিক সাইদ উদ্দীন আহমদ, প্রয়াত ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন, প্রয়াত ভাষা সৈনিক ও চেতানায় একুশের আহবায়ক এ্যাড আব্দুর রাজ্জাক, ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর চৌধুরী, ওয়ার্কাস পাটির পলিট ব্যুরোর সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সিপিবি’র রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক, সিপিবি মহানগরের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাসদের দেবাশীষ, গণসংহতি আন্দোলনের মুরাদ মোর্শেদ, এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী সম্পাদক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, সাংবাদিক ও লেখক ফজলুর রহমান, সাংস্কৃতিক সংগঠন এস এর সমন্বয়কারী আজমল হুদা মিঠু সহ অনেকেই।   রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলে নির্মিত দেশের প্রথম শহীদ মিনারের রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবী জানায় চেতনায় একুশ। চেতনায় একুশের দাবীর প্রেক্ষিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহী কলেজ মুসলিম হোস্টেলে প্রথম শহীদ মিনারের স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। 

চেতনায় একুশ ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম। এটি সামাজিক ব্যানারে পরিচালিত হচ্ছিল। আগষ্ট আন্দোলনে রাজশাহী শহরে ছোট ছোট কিছু আন্দোলনের স্মৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। 

লেখক: পারভেজ আহমেদ পাপেল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, রাজশাহী জেলা। 
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image