আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) ইরানের সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে । অভ্যুত্থানের ৭০ বছর পর সংস্থাটি জানায়, ১৯৫৩ সালে ইরানের তৎকালীন গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে সরিয়ে মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভিকে ক্ষমতায় বসানোর ঘটনায় তারা জড়িত ছিল।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বলা হয়, ১৯৫৩ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ইরানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে সরিয়ে ক্ষমতায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি। এতে তাকে সহায়তা করে মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দারা। তবে ইরানের ওই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার বিষয়ে এর আগে বহু মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করলেও এতদিন তা করেনি সিআইএ। দীর্ঘ ৭০ বছর পর এবার এক পডকাস্টে এ স্বীকারোক্তি করেছে সংস্থাটি।
এপির বিবৃতিতে বলেছে, সিআইএ জনগণের সঙ্গে যতটা সম্ভব খোলামেলা থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইরানের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে এজেন্সির স্বীকারোক্তিমূলক পডকাস্ট জনগণের সঙ্গে তার প্রতিশ্রুতিরই একটা অংশ।
জাতিসংঘের ইরান মিশন ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানকে ‘ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমেরিকার নিরলস হস্তক্ষেপের সূচনা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
১৯৫১ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক। এর আগেও দুবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোসাদ্দেক ইরানের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ পরিচিত ছিলেন।
পঁয়ত্রিশতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল সম্পদকে জাতীয়করণ করেন তিনি। এতে করে মোসাদ্দেক সরকারের ওপর ক্ষিপ্ত হয় ব্রিটেন। কেননা সে সময় ইরানের তেল সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্রিটিশদের।
মোসাদ্দেক দেশীয় সম্পদকে জাতীয়করণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণ করলেও ইরানের তৎকালীন রাজা (শাহ) মোহাম্মদ রেজা পাহলভীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেননি কিংবা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বসতেও চাননি।
মূলত শাহের সঙ্গে মোসাদ্দেকের বিরোধিতাকে পুঁজি করেই পরপর দুবার ইরানে সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানের বীজ বপন করে সিআইএ। শাহের সমর্থকদের দিয়ে তেহরানসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে অবরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয় তারা।
ইরানের তেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিটেন তখন তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করে। আর তারই ফলশ্রুতিতে দেশটির ডাকে সাড়া দিয়ে ইরানে মোসাদ্দেক বিরোধী অভ্যুত্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নেমে পড়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
দ্বিতীয় দফায় ইরানের মোসাদ্দেক বিরোধী গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছিল এবং ১৯৫৩ সালের আগস্টে রেজা শাহ এক বিশেষ ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে বহিষ্কার করেন। মোসাদ্দেক সরকারের পতনের মধ্যদিয়ে ইরানে রেজা শাহের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। একই সময় দেশটিতে মার্কিন হস্তক্ষেপও শুরু হয়।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: