সুমন দত্ত
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের কোনো নিরাপত্তা নেই। অর্থনৈতিক , সামাজিক, রাজনৈতিক কোনো নিরাপত্তাই পায় না এদেশের সাংবাদিকরা। যে কারণে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। সাগর রুনির বিচার এখনো আটকে আছে। মানিক সাহা, হুমায়ন কবির বালু, শামসুর রহমান হত্যার বিচার গুলো এখনো শেষ হয়নি। এসব হত্যাকাণ্ডের জড়িতরা জায়গামত তদবির সুপারিশ করে বহাল তবিয়তে আছে।
আমরা সাংবাদিকরাও আছি ফরমায়েশি লেখায় ব্যস্ত। কোন ধরনের লেখা প্রকাশে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থাকবে ও বাড়বে, সেই দালালিতে ব্যস্ত থাকা সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি। পত্রিকার মালিক ও সম্পাদকরা সাংবাদিকদের কাছ থেকে এসবই চান।
প্রতিটি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কি তৈরি করতে পারে না আমাদের পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিকরা? কি করেন আমাদের ক্র্যাবের পুরস্কার প্রাপ্তরা?
আমার মনে আছে, সাগর রুনির বিচার নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি একবার বলেছিলেন, আপনারা তদন্ত করে বের করতে পারেন না কারা খুনি। সাংবাদিক নেতাদের মুখ থেকেও একই জিজ্ঞাসা ছিল।
সত্যিই তো আমরা সাংবাদিকরা কেন এসব কাহিনীর রহস্য ভেদ করতে পারি না? আমরা যারা সাংবাদিক তাদের কত নেটওয়ার্ক। কত জায়গায় নেটওয়ার্ক। আমরা কি নিজেদের সোর্স ব্যবহার করে এসব ঘটনার তথ্য বের করতে পারি না?
বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে পুলিশ কিংবা সাংবাদিক ঘটনার নেপথ্যে কি ঘটেছে তার রহস্য উন্মোচন করার ক্ষমতা কম বেশি দুপক্ষেরই আছে। তারপরও দেখা যায় আমরা নীরব ভূমিকা পালন করি। কারণ শর্ষের মধ্যে ভূত। যে দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ পুরোটাই সরকার নিয়ন্ত্রিত, সেখানে এসব হবার নয়।
সংবিধানের তিনটি স্তম্ভই দলকানা লোকে ভর্তি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কথা বলতে গেলে তিন দিক থেকে আপনার ওপর আক্রমণ হবে। দেশে বিচার আচার নির্ভর করে সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর। এমন একটি স্বৈরতান্ত্রিক সমাজে আমাদের বসবাস। এখনে স্বাধীনভাবে কিছু লেখালেখি করলেই ডিজিটাল আইনের খড়গ নেমে আসে।
ফেসবুকে প্রাইভেট চ্যাটিং করলেও সেটা পাবলিক করে দেয় কোনো এক মহল। আর ভিকটিম হয় যারা মুক্ত মনে লেখালেখি করছিল। বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রীর নিজেদের লেখা পড়ার জীবন এভাবে শেষ করেছে। এমন রক্ষণশীলতা বিএনপি জামাতের আমলেও ছিল না।
এখন দেশে ধর্মীয় অনুভূতি নতুন করে জেগেছে। কিছু একটা বললেই অনেকের অনুভূতির দণ্ড দাঁড়িয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা হতে মামলা হয়। এই দৃশ্য এরশাদ ও খালেদার দুই আমলেও দেখা যায়নি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন সকল আমলের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এর কোনোটারই বিচার হয়নি। বিদেশি রাজনৈতিক নেতারা এ নিয়ে তাদের দেশের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিলে আমার দেশের দালাল হিন্দু সংগঠন সরকারের পক্ষে সাফাই দিয়ে বিবৃতি দেয়।
প্রবাদে আছে শক্তের ভক্ত নরমের যম। এদেশের হিন্দুদের অবস্থা সেই রকম। যারা চিঠি দিয়েছে তাদের ওপর সরকারের কোনো প্রভাব নেই, অন্যদিকে দালালদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সাফাই দেওয়ানোতে ওস্তাদ।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর নাদিমের বিচার হবে না। বিচারের নামে হবে প্রহসন। কারণ হত্যাকারীরা সব সরকারি দলের লোকজন। ঘটনার মূল হোতাকে না ধরে সাইডের লোকজনকে পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করেছে। এ থেকেই বোঝাই যাচ্ছে কীভাবে এই বিচার এগুবে। কয়েকদিন হয়ত এ নিয়ে লেখালেখি হবে। পরে সবাই ভুলে যাবে নাদিমের ঘটনা। এভাবে একে একে হত্যার শিকার হবে এদেশের সাংবাদিকরা। আর বিচারের নামে চলবে প্রহসন। অতীতের ঘটনা গুলোর বিচার হলে এসব আজ হতো কিনা সন্দেহ।
লেখক সাংবাদিক, তারিখ ১৭/৬/২০২৩
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: