সুমন দত্ত: সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অনলাইনে সেটি প্রকাশ হয়েছিল।
সেখানে জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি রাশিয়ান তেল কেনার বিষয়ে আমেরিকাকে কি বলেছিলেন ? জবাবে তিনি বলেছেন, আমরা এ বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে যখন কথা বলি, তখন কোনো চালাকির আশ্রয় নেয়নি। আমরা সরাসরি জানিয়ে দিয়েছি আমাদের মতো গরিব দেশের জন্য উচ্চমূল্যের জ্বালানি ক্রয় করা সম্ভব নয়। এতে আমার দেশের জনগণ এই চাপ সহ্য করতে পারবে না। তাই দেশের জনগণের স্বার্থে আমাদের কম দামে জ্বালানি কিনতেই হবে। তারা আমাদের কথা বুঝতে পারেন এবং বিষয়টি মেনে নেয়।
আজ রাশিয়া বাংলাদেশকে কম মূল্যে জ্বালানি দিতে চাচ্ছে। অথচ আমরা ভয় পাচ্ছি সেটা কিনতে। ভয় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার। আমাদের উচিত হবে আগে ভয় কাটানো। পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তারাও চাইবে না হুট করে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে।
জাতিসংঘে আমরা সব সময় পশ্চিমা স্বার্থে ভোট দিয়েছি। তাই আমাদের সংকটে পশ্চিমাদের এগিয়ে আসা একটা নৈতিক দায়ের মধ্যে পড়ে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আমেরিকা জানত এর ফল কি হতে পারে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে প্রথমে ইচ্ছুক ছিল না আমেরিকা। কারণ আমেরিকান নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটানোর ক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার। এটা তো কিউবা কিংবা ইরান নয়। আজ আমেরিকান নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটাতে রাশিয়া জ্বালানিকে অস্ত্র বানিয়েছে। আর এটা হতে দিয়েছে আমেরিকার কারণেই। আমেরিকা সৌদি আরবকে আস্থায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
আমেরিকা চাইছিল বিশ্বে তেলের দাম কমাতে। এজন্য সে সৌদি আরবকে রাজি করানোর চেষ্টায় থাকে। সৌদি আরব কে তেলের উৎপাদন বাড়াতে বলেছিল আমেরিকা। সৌদি আরব সেটা করবে না। বর্তমান প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমান আমেরিকাকে সেটা জানিয়েছে। আর এতেই পোয়া বারো রাশিয়ার। রাশিয়া তেলের দাম কমিয়ে চীন ও ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এমন কি আমেরিকাও ভারতের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে লুকিয়ে তেল কিনছে। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এক বক্তব্যে এই সত্য উঠে এসেছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে কম দামে জ্বালানি কিনলে তা কি অযৌক্তিক হবে?
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট আছে। আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকা সত্ত্বেও এই সংকট সহজে কাটছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি সংকট। জ্বালানি সংকটে দেশের অর্থনীতি আজ কাহিল। এমন সময় কেউ যদি সেখান থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেয় তাতে পশ্চিমা শক্তি বাধা দিতে পারে না। যেসব দেশ বাংলাদেশকে নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের উচিত তাদের কাছে জানতে চাওয়া রাশিয়ান প্রস্তাবের বিকল্প আছে কিনা । আলোচনার টেবিলে অনেক কিছুরই সমাধান হতে পারে।
দেশের বাজার এখন অস্থিতিশীল। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের পিট দেয়ালে ঠেকে গেছে। সংসার চালাতে জনগণ হিমশিম খাচ্ছে। ডিজেলের দাম এক লাফে লিটার প্রতি ৮০ থেকে ১১৫ টাকা হওয়ার কারণে কৃষকের পণ্য উৎপাদনের দাম বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় রাশিয়া ৪০ টাকায় প্রতি লিটার ডিজেল দিতে চাইলে আমরা তা নেব না কেন ? এই টাকায় ডিজেল পেলে সব পণ্য ও সেবার মান কমে আসবে। আগের চাইতেও কমে যাবে। পাশাপাশি টাকার মানও বাড়বে। কারণ রাশিয়া টাকা-রুবলের বিনিময়ে এসব করতে চাচ্ছে। ডলারের ওপর যে চাপ, সেটা সহসাই কমে যাবে। রাশিয়ান প্রস্তাব গ্রহণ করে সত্ত্বর দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটানো হোক।
ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি
আপনার মতামত লিখুন: