• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৩:৫১ পিএম
হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়
উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম

মো: আব্দুস সাত্তার, দিনাজপুর প্রতিনিধি : প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে একটি বাচ্চা ফোটে।

দেড়মাস আগে ইনকিউবেটরে ১৯টি ডিম বসানো হয়েছিল বাচ্চা ফুটানোর জন্য। সেখান থেকে গত মঙ্গলবার মাত্র একটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চা ছানাটির ওজন ৯৪৮ গ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গবেষকের দাবি দেশে প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়। 

জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষনাগারে গিয়ে দেখা যায়, ইনকিউবেটরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি তাকে ট্রেতে সাজানো সারিসারি উটপাখির ডিম। নিচের ট্রেতে চুপটি মেরে বসে আছে একটি উটপাখির ছানা। গায়ে ধূসর রঙের মসৃণ হালকা লোম। এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে যাচ্ছে ছানাটি। গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম ইনকিউবেটর থেকে ছানাটি বের করে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছেন। আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধিতে, বানিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের যোগান দেওয়া বিষয়ে গবেষনা করছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে তিন দফায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোতে সফলতা পেয়ে আনন্দিত গবেষক খন্দকার তৌহিদুল।

কৃতজ্ঞতা জানান, বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার মিঞা, সুপারভাইজার উম্মে সালমা, বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম ও উটপাখির খামারী এলমিস অটোরাইস মিলের স্বত্ত্বাধিকারীর প্রতি।

উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম Struthio Camelus। এর জন্মস্থান আফ্রিকা অঞ্চলে। পাখি জগতের সকল প্রজাতির মধ্যে উটপাখি বৃহত্তম। অনেক বছর আগে উত্তর আফ্রিকার সাহারার দক্ষিনাঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিন আফ্রিকার উডল্যান্ড এবং এশিয়া মাইনর উটপাখির আবাসস্থল হলেও বর্তমানে দক্ষিন-পশ্চিম আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে এর বসবাস। মরুভূমির উষ্ণ আবহাওয়ায় উটপাখির উৎপত্তি হওয়ায় প্রচন্ড গরম সহ্য করার ক্ষমতা যেমন আছে তেমনি বৃষ্টি ও শীতপ্রধান এলাকাতেও উটপাখি সহজেই খাপ খাইয়ে চলতে পারে। উটপাখির একটি ডিমের ওজন ১-২কেজি পর্যন্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক উটপাখির ওজন ৮০-১৫০ কেজি এবং উচ্চতা ১ দশমিক ৮ থেকে ২দশমিক ৮মিটার। সাধাণত ঘাস, লতাপাতা, ফলমূল, শস্যদানা, ছোট ছোট পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় এর চর্বি ও কোলেস্টেরল কম থাকে এবং সুস্বাদু হয়। সাধারণত আড়াইবছর বয়সে স্ত্রী পাখি ডিম দেওয়া শুরু করে। মার্চ-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  ডিম দেওয়ার সময়কাল। মৌসুমে একেকটি উটপাখি ৬০-৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম হতে বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে ৪০-৪২দিন।

পিএইচডি গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে। ২০২১ সালে ‘প্রোডাক্টিভ এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ পাওয়ার সেন্স অব অস্ট্রিস ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে গবেষনায় আগ্রহী হন। তবে খন্দকার তৌহিদুলের গবেষনার দ্বার উন্মোচন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার মিঞা(বর্তমানে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য । ২০১৫ সালে সাউথ আফ্রিকা থেকে ২১টি উটপাখির বাচ্চা এনে প্রথমে বাসায় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ভবন সংলগ্ন এক বিঘাজমিতে খামার স্থাপন করে গবেষনা শুরু করেন। সেই ১৮দিন বয়সী ২১টি বাচ্চা বড় হয়ে ডিম দিয়েছে সর্বশেষ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার মিঞা জানান, মঙ্গলবার বিভাগের এক শিক্ষক ফোন করে জানান, ‘স্যার আপনি উটপাখির বাচ্চার বাবা হয়েছেন’। কথাটা শুনে চোখে পানি চলে আসছে। একজন গবেষকের জন্য এযে কত বড় আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবেনা। জানালেন, সাফারি পার্কে উটপাখির দেওয়া ডিম থেকে প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফুটিয়েও কিন্তু বাঁচানো যায়নি। নরসিংদীতে একটি ‍ফার্মেও সফল হওয়া যায়নি। প্রথমবারের মত হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উটপাখির বংশ বিস্তারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। একটি উটপাখির বাচ্চা আমদানিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। আমরা এই সফলতা ধরে রাখতে পারলে ১০-১৫হাজার টাকায় একএকটি বাচ্চা আগ্রহী খামারীদের দিতে পারব।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় উটপাখির টিকে থাকা ও প্রজনন বৃদ্ধি করার বিষয়ে আব্দুল গাফফারের গবেষনা আজও চলছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল পরিবেশে গবেষনা বাধাগ্রস্থ হওয়া ও শিক্ষার্থীদের গবেষনায় ব্যাঘাত ঘটা থেকে ২০২১সালে খামারী ও ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখার ওয়ালীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। এরপর উটপাখিগুলো তাঁর খামারে লালনপালন হতে থাকে। ওই খামারে উৎপাদিত ডিম থেকেই বাচ্চা ফুটানো হয়েছে। খামারের স্বত্ত্বাধিকারী সুলতান ইফতেখার ওয়ালী বলেন, উটপাখিসহ বিলুপ্তপ্রায় নানা পশুপাখি আমার খামারে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষক তাদের গবেষনা কাজে খামারে আসছেন। ভালোই লাগে আমার। খামারে এখন ১৪টি উটপাখি রয়েছে। পাখি ডিম পারলেই আমি গবেষনাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

বিশ্ববিদ্যালয় ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডীন উটপাখি গবেষনার সুপারভাইজনার উম্মে সালমা বলেন, ‘উটপাখি হচ্ছে প্রোটিনের একটি অন্যতম সোর্স। দেশে প্রোটিনের যোগান দিতে প্রথমবারের মত উটপাখির বংশ বিস্তারে আমরা সফলতা পেয়েছি। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারাদেশের গবেষনাখাতের সফলতা। এটি অব্যাহত থাকলে স্বল্প খরচে খামারীদের আমরা বাচ্চা সরবরাহ করতে পারব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হব সেইসাথে প্রেটিনের চাহিদার যোগান দেওয়া সম্ভব হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image