
জাকারিয়া মিঞা, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ১২ আগস্ট শনিবার দিবাগত রাত ১টা ৫০মিনিটে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই গৃহবধূর। নিহত গৃহবধূর নাম মৌসুমি খাতুন (২০)। তিনি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম এলাকার মনসুর আলীর মেয়ে।
নিহতের পরিবার জানায়, প্রায় চার বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সুত্র ধরে পাশের গ্রামের পশ্চিম ধনিরাম এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রশিদ রাসেদের (৩০) সাথে বিয়ে হয় মৌসুমির। প্রেম করে বিয়ে করায় পুত্রবধূকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি তাঁর শ্বশুর শ্বাশুড়ি। তাই প্রায় সময় নানা ছুতোয় মৌসুমিকে নিয়মিত নির্যাতন করতো তারা। গত ৬ আগস্ট মৌসুমিকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন বেধড়ক মারধর করে। মৌসুমি অসুস্থ এমন খবর পেয়ে তাকে দেখতে যান মৌসুমির দাদা জহুর আলী। গুরুতর অসুস্থ দেখে নাতনিকে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এরপর গত রবিবার চিকিৎসার জন্য ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মৌসুমি খাতুনের।
নিহতের দাদি জরিনা বেগম বলেন, আমার নাতনিকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙে দিয়েছে। বুকে লাথি মেরেছে। তারা নির্যাতন করে আমার নাতনিকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। আমি দোষীদের বিচার চাই।
নিহতের চাচাতো বোন রুবিনা বেগম বলেন, মৌসুমির শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার উপর নির্মম নির্যাতন চালাতো। এর আগে বেশ কয়েকবার মেম্বারকে ডেকে বাড়িতে বিচার সালিশ করা হয়েছিল। তারপরেও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের মাত্রা কমেনি। তারা আমার বোনকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। মৌসুর গোটা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আমি দোষীদের উপযুক্ত বিচার চাই।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য আজিমউদ্দিন রাজিব বলেন, মৌসুমিকে তার স্বামী, শশুর শাশুড়ি নির্যাতন করে এমন অভিযোগ নিয়ে তার বাবার বাড়ির লোকজন প্রায়ই আমার কাছে আসতো। আমি নিজেও দুইবার বিচার করেছি। আজকে শুনলাম মেয়েটি হাসপাতালে মারা গেছে।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, মৌসুমি শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে খুব অসুস্থ জানতে পেরে আমি মৌসুমিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেই। আজকে তার মৃত্যুর খবর শুনে এখানে এসেছি। মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহনে দাবি জানাচ্ছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সুমন কান্তি সাহা বলেন, মৌসুমী আঘাতজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।
ফুলবাড়ী থানার ওসি প্রাণকৃঞ্চ দেবনাথ জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানতে পেরেছি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: