মিঠামইন প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ: মিঠামইন উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও বানভাসী মানুষদের দূর্ভোগ কমেনি।গত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ১ ফুট পরিমাণ কমলেও বন্যার্তদের দুর্ভোগ তাদের পিছু ছাড়ে নি।অনেকের বাড়ির উঠান থেকে পানি সরেনি। ১ ফুট পরিমাণ পানি কমেছে। কিন্তু অনেকের বাড়ি ঘর এখনও ২ ফুট পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। পানি সরতে আরও সময় লাগবে। উপজেলায় মৎস্য চাষিদের মাথায় হাত।এ উপজেলায় ২৫ই জুন শনিবার পর্যন্ত মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ১৮০ টির বেশি পুকুর তলিয়ে গেছে। পানি কমলেও অধিকাংশ পুকুরের পাড় তলিয়ে রয়েছে এসকল পুকুরে মাছ সম্পুর্ণ ভেসে গেছে।
সরকারি হিসাব মতে,৫৪ হেক্টর জায়গার পরিমাণ পুকুর এখনও পানির নীচে রয়েছে।
মিঠামইন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আকন্দ জানান, তলিয়ে যাওয়া পুকুর থেকে ২৪০ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য ৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। এসকল পুকুর থেকে ৩ লক্ষ পোনা মাছ ভেসে গেছে। এ ক্ষতি মৎস্য চাষিদের জন্য বড় একটা ঝুঁকি। তারা মাছের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেনা।অনেক মৎস্য চাষী উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পরামর্শ নিয়ে মাছের চাষ শুরু করছিলো।
পানি বাহিত রোগঃ-উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি কমার সাথে সাথে পানি বাহিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। সরজমিনে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,পানি বন্দি মানুষরা জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। অধিকাংশ টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবারের পানি তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পুরুষরা কলাগাছের ভেলা দিয়ে অনেক দূর থেকে খাবারের পানি সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে।
ঘাগড়া ইউনিয়নের সাবাসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি। এ গ্রামে শুকনো কোনো জায়গা নেই।অধিকাংশ বাড়ি ২-৩ ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে চলে আসছে।যে কয়টি টিউবওয়েল রয়েছে তাও পানির নীচে। এ গ্রামের এমন ৪ টি পরিবার রয়েছে। তারা ভরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন,সিদ্দিক মিয়া,তার ভাই শহীদ মিয়া,নুর ইসলাম ও আজগর।সব চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে বলে তারা জানান।তারা বলেন,পরিবার পরিজন নিয়ে এ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি।আমাদের বাড়িতে কোমড় পানি। সামান্য ধান,চাল নিয়ে ধানের বস্তার উপর শুয়ে কোনো রকম রাত কাটাই।চোর ডাকাতের ও ভয় রয়েছে। ১ সাপ্তাহ যাবৎ কোনো কাম কাজ নাই এছাড়াও পরিবারের সদস্যরা জ্বর, কাশিতে ভূগছে।ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ভুইঁয়া আশ্রয় কেন্দ্রে এসে তাদের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেন এবং স্থানীয় ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাক্তার আবদুল্লাহ আল সাফী বলেন,৭ ইউনিয়নের জন্য ৩০ জন ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যেকোনো সময় দূর্যোগ মোকাবেলায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতি মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যার্তদের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। ঔষধের কোনো সমস্যা নেই।
এাণ তৎপরতাঃ- মিঠামইন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্যার শুরু থেকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার ২৫ ই জুন পর্যন্ত ১২ হাজার পরিবারকে এাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।এাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।এ ছাড়াও জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২ হাজার দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে স্হানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক গত শুক্রবার ২৪ ই জুন ও শনিবার ২৫ ই জুন দিন ব্যাপী মিঠামইনের ৭ ইউনিয়নের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এাণ সামগ্রী ও পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট সহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতি গ্রস্ত পারিবারের মাঝে বিতরণ করেন।তিনি আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন ক্ষতি গ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বলেন।এছাড়াও চীনা দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল মিঠামইন সদরে হামিদ পল্লী, গুচ্ছ গ্রাম, নবাবপুর সহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
মিঠামইনে এাণ সামগ্রী বিতরণের সময় এম,পি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন,এাণ নিয়ে নয়,ছয় করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।তিনি জন প্রতিনিধি ও নেএাকর্মীদের দূর্যোগের সময় বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানান। শুধু বন্যা নয় হাওরে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের চিহ্নিত করে এাণ সামগ্রী বন্টন করবেন।ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সঠিক তালিকা তৈরি করে উপজেলায় ইউ,এন,ও অফিসে প্রেরণের কথা বলেন।তিনি ধৈর্যের সাথে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান সকলকে।
ঢাকানিউজ২৪.কম / বিজয়কর রতন/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: