নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয়রা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন, না ঘুমিয়ে আমাদের ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন তাদের এ ঋণ কোনোভাবে শোধ হওয়ার নয় বলেছেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে আগরতলার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলার প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন পর্ষদ’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। ৩৫ কোটি মানুষের ভাষাটা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। সব পণ্ডিত স্বীকার করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা হচ্ছে বাংলা। সেই বাংলা ভাষার অধিকারী আমরা, এটি একটি গর্বের বিষয়।’
তিনি বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে আসামেও আন্দোলন হয়েছে। পৃথিবীর বহু প্রান্তে বাংলা ভাষার আন্দোলন এখনো চলমান। এ হিসাব এখনো অনেকেই জানেন না বলে হীনম্মন্যতায় ভোগেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আগরতলা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অতি স্মরণীয় একটি জায়গা। আমার স্ত্রী আগরতলায় ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধ করেছে। আগরতলা শুধু বকুল মোস্তফা নয়, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে কাজ করেছে। সে সময় তারা শুধু ট্রেনিং নয়, সবক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছিল, তা অসামান্য। আগরতলা শুধু নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা বাংলাদেশের প্রতি যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা ও সহর্মিতা দেখিয়েছে, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিব বাহিনী গঠনসহ অন্যান্য কাজে অসাধারণ ভূমিকা ছিল আগরতলার। ভারতবাসী নিজেরা না খেয়ে আমাদের খাইয়েছে। না ঘুমিয়ে ঘুমানোর জায়গা দিয়েছে। এক কোটি শরণার্থীর পাশাপাশি আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, তাদের যে সহায়তাটুকু পেয়ে আসছি তা অসাধারণ। এ অসাধারণ স্মৃতি যেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মনে রাখে।’
তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরাবাসী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে স্মারকগ্রন্থ বানিয়েছে তার মাধ্যমে তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নয়, সমগ্র বাঙালি জাতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বলে আমি মনে করি।’
স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন কবি অসীম সাহা। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিতিক সেলিনা হোসেন।
মোড়ক উন্মোচনের এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব কবি আসাদুল্লাহ, আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ ও প্রকাশনা পর্ষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কবি আসলাম সানি, ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ড. দেবব্রত দেবরায়, প্রধান সম্পাদক ড. মুজাহিদ রহমান, সাংবাদিক অমিত ভৌমিক, কবি বরুণ চক্রবর্তী, ড. আশীষ কুমার বৈদ্য, আবৃত্তিশিল্পী সেলিম দুরানি বিশ্বাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডি কে সৈকত ও খোরশেদ আলম বিপ্লব। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় অংশ নেন বাংলাদেশ-ভারতের সংগীতশিল্পীরা। সেখানে গান, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্যের ছন্দে যেন নেচে ওঠে গোটা মিলনায়তন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: