• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

মানিকগঞ্জে ভিজিএফের চালে ইউপি সদস্যের চাঁদাবাজি


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: রবিবার, ০৭ আগষ্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ০১:১৬ পিএম
ভিজিএফের চালে ইউপি সদস্যের চাঁদাবাজি
৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের জীবন নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন মৎস্য অধিদফতরে নিবন্ধিত ৭০টি জেলে পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে দ্বিতীয় কিস্তির চাল বিতরণে ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে চাল বিতরণকালে বেশ কয়েকজন সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ৬০০ করে টাকা নিয়ে তাদের চাল দেয় ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস। গত এপ্রিল-মে ২০২২ মাসে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্বে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই চাল বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে এলাকাবাসীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, ৮ নং ওয়ার্ডের বকচর গ্রামের মৃত মঙ্গল মোল্লার ছেলে সফিউদ্দিন মোল্লা, মৃত লাল মদ্দিনের ছেলে গেন্দুর কাছ থেকে চাল আনার খরচ বাবদ ৬০০ করে টাকা দাবী করেন ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস।

এছাড়াও ইউপি সদস্যের আপন চাচাতো ভাই মৃত হাতেম বিশ্বাসের ছেলে তাজেম বিশ্বাসের কাছ থেকেও চাল আনার খরচ বাবদ ৫০০ টাকা ও  চৌকিদারদের খরচ বাবদ ১০০ টাকা নেয়া হয়।  একই গ্রামের শেখ ফরহাদের স্ত্রী সুফিয়া বেগমের কাছ থেকে চাল দেয়ার কথা বলে ৫০০ টাকা নিয়েও তাকে চাল দেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সুবিধা ভোগী ৭০টি পরিবারের মাঝে যে চাল বিতরণ করা হয়, তাদের অনেকেই পেশাদার জেলে নয়।  কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন সুবিধাভোগীর সংখ্যাই বেশি। চেয়ারম্যান মেম্বারদের পছন্দ মতো লোকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।

হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র পেশাদার মৎস্যজীবীদেরকেই জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকা জেলেদের জীবন নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও ২০১৫/১৬ সালের মৎস্যজীবিদের তালিকায় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের নাম উঠে এসেছে তালিকায়।

টাকার বিনিময়ে চাল দেয়ার ব্যাপারে ইউপি সদস্যের চাচাতো ভাই বকচর গ্রামের তাজেম বিশ্বাস জানান, "চাইল আনার খরচের জন্য ৫০০ টাকা এবং চৌকিদারকে দেয়ার জন্য ১০০ টাকা মোট ৬০০ টাকা মেম্বারকে দিয়ে চাইল আনছি। চাইল আনতে নাকি গাড়ি ভাড়া দেয়া লাগে, তাই দিছি।"

একই গ্রামের শেখ ফরহাদের স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, "জাইল্যা কার্ডের চাইল দেয়ার কথা বইলা মেম্বার ছকেল বিশ্বাস আমাগো কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিছে। কিন্তু টেকা নিয়েও আমাগো চাইল দেই নাই।"

শফিউদ্দিনের স্ত্রী জবেদা বেগম জানান, "আমাগো কাছ থেকে চাইলের বাবদ মেম্বার ৬০০ টেকা নিছে। খালি আমাগো কাছ থেকেই না, আমাগো শরীক বাড়ি গেন্দুর কাছ থেকেও ৬০০ টেকা নিছে।"

দোয়াত আলী জানান, "চাইল আনার গাড়ি ভাড়া বাবদ আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিছে মেম্বার।"

হরিরামপুর উপজেলা মৎসজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নেপাল হালদারের কাছে মৎস্যজীবিদের তালিকায় ভিন্ন পেশাজীবিদের নামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, "মূলত মৎস্যজীবিদের জন্যই জেলে কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান মেম্বারদের অধীনে নামগুলো সংগ্রহ করার কারণে চেয়ারম্যান মেম্বাররা তালিকার সময় একটু এলোমেলো করে ফেলেছে। তবে পরবর্তীতে এগুলো যাচাই বাছাই করে সংশোধন সাপেক্ষে প্রকৃত জেলেদের যেন কার্ড দেয়া হয়, সে জন্য আমি উপজেলা প্রশাসনের নিকট দাবি জানাব।"

মুঠোফোনে ইউপি সদস্য মো.ছকেল বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে গাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা নিয়েছে সত্যতা স্বিকার করে বলেন, চেয়ারম্যান গাড়ি ভাড়া নিতে বলেছিল এর জন্য  ১০০ টাকা করে নিয়েছি। প্রতিবেদক'কে  বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করার জন্য বিকেলে তার বাসায় দেখা করার কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।

এ দিকে মুঠোফোনে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনের কাছে " ইউপি সদস্য কে গাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা নিতে বলেছেন কি-না?" জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদক'কে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার বিষয়ে কিছু লেখলে আপনার নামে মানহানির মামলা করব বলে ফোন কেটে দেন তিনিও। ফোন কেটে দেওয়ার পর প্রতিবেদক চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনের মুঠোফোনে আবারও বহু-বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন'নি।

এ ব্যপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, "মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাল দেয়া সম্পূর্ণ অন্যায়। এ ব্যাপারে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।"

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, "বিষয়টি আগে কেউ বলেনি। আপনার মাধ্যমেই শুনলাম। এ বিষয়ে তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চাল দেয়ার নামে একটা টাকাও কারও  কাছ থেকে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি ।"

ঢাকানিউজ২৪.কম / সাকিব আহমেদ/কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image