• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

জলঢাকায়  উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের স্বপ্ন বিপ্লব চিশতির


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: বুধবার, ০১ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৫:১৭ পিএম
জলঢাকায়  উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের স্বপ্ন
বিপ্লব চিশতি

মো. মশিয়ার রহমান, জলঢাকা, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ পারিবারিক সমস্যা আর অভাব-অনটনের কারণে বাল্যকালে পড়ালেখা করতে পারেননি বিপ্লব চিশতি। সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার দরকার আছে-এমন অনুভব থেকেই ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে GPA 4.63 এবং ২০২২ সালের এইচএসসিতে GPA 4.58 অর্জন করেন তিনি। আগামীতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার আমরুলবাড়ি এলাকার বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল জব্বারের ২য় পুত্র আল ইকরাম বিপ্লব চিশতি পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা, অভাব-অনাটনের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়েছিলেন ২০০৪ সালে।  তখন তিনি  নবম শ্রেণিতে পরতেন। দুই ভাই আট বোনের সংসারে বাবার মাসিক আয় ছিলো মাত্র তিন হাজার টাকা তাই তাকে পড়ালেখা ছেড়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় পাড়ি দিতে হয়েছিল। ২০০৪ সালে ঢাকার একটি পোষাক কোম্পানীতে টানা দুই বৎসর চাকুরি করেছেন মাত্র ৯০০ টাকা বেতনে। কিন্তু তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার(ফখরুদ্দিন) শিশু শ্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা দিলে তাঁকে পোষাক কোম্পানী থেকে বের করে দেয়া হয়।

সেই শোকে আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে পরেন তিনি। কোনভাবে চিকিৎসার জন্য বাড়িতে আসলে ঢাকায় আর ফেরা হয়নি তাঁর। অসহায় আল ইকরাম বিপ্লবের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এরশাদ নামক স্থানীয় একজন সাংবাদিক  তিনিই তাঁকে কম্পিউটার শেখানোর বদৌলতে বিভিন্ন দোকানের কর্মচারি হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন ।

বিভিন্ন দোকানে কাজ করে সামান্য টাঁকা জমিয়ে একটি দোকান অল্প টাকায় ভাড়া নিয়ে  পিতার অবসরের কিছু  টাকা দিয়ে একটি পুরাতন কম্পিউটার ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। পর্যাক্রমে ব্যবসা বড় করে বিয়ে,হালখাতা সহ বিভিন্ন ছাপার কাজ শুরু করেন। এখন তার আর্থিক অবস্থা ভালো এবং তিনি দুই সন্তানের জনক। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে তাকে মিশতে হয়।

সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে তার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার দরকার আছে-এমন অনুভব থেকেই ২০১৭সালে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে  ভর্তি হন এবং ২০১৮ সালের  পরিক্ষায় একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে সহপাঠিদের পরামর্শে ২০১৮ সালে কারিগরি (ভোকেশনাল) শাখায় পুনরায় ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে ২০২০ সালে এসএসসিতে কৃতিত্বের সহিত জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে সফলতা অর্জন করেন। তারপর লক্ষ অর্জনের উদ্দেশ্য ইন্টারমিডিয়েট একাদশ শ্রেণীতে কারিগরি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শাখায় ভর্তি হয়ে স্ত্রী,সন্তান,পরিবার-পরিজন ও ব্যবসার যাবতীয়  প্রতিন্ধকতা উপেক্ষা করে ২০২২ সাল এইচএসসিতে কৃতিত্বের সহিত  জিপিএ ৪.৫৮ অর্জন করে শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে দেন তিনি। এখন তার ইচ্ছে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করার লক্ষ্যে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া।

এ বিষয়ে আল ইকরাম বিপ্লব  বলেন, বর্তমান সমাজে চলতে গেলে পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন আছে এমন অনুভূতি থেকেই পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমার স্বপ্ন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করা 

জলঢাকা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ জনাব আকবর হোসেন বলেন, অর্থিক অভাব অনাটনের প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে পূনরায় পড়ালেখা শুরু করা আমাদের সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত। সরকার কারিগরী শিক্ষাকে এমনভাবে সাজিয়েছেন ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আশির্বাদ।

 বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকশন কমান্ডার প্রফেসর আব্দুল গফফার চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষার কোন বয়স নেই এ কথাটি আবার প্রমান করে দিলেন বিপ্লব। তার কাজ থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। আজকেই এই বিপ্লব সমাজের হৃদপিণ্ড।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image