ডেস্ক রিপোর্টার: স্টিল ডাস্ট (ছাই) ইস্পাত শিল্পের রপ্তানিপণ্যের তালিকায় রয়েছে । কাঠখড় পোড়ানো ছাইয়ের মতোই এই ছাই অনেকটা। এক সময় এসব ছাই বাতাসের সঙ্গে মিশে পরিবেশ দূষণ করতো। কারখানার নির্গত ধোঁয়া পরিশোধন করে সেই ছাই আলাদা করা হয়, যা যাচ্ছে বিদেশে। এতে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি দেশে আসছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বর্তমানে ইস্পাত কারখানাগুলোর এই ছাই রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের সাতটি দেশে। বছরে যা থেকে আসছে দুইশ কোটি টাকা।
জানা যায়, দেশের শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম, আবুল খায়ের স্টিল, কেএসআরএম, জিপিএইচসহ বড় বড় কারখানা ছাই রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। বিশেষত বিএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি রপ্তানি করে এলেও গত দুই বছরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেক জায়ান্ট জিপিএইচ স্টিলও। এসব ছাই কারখানা থেকে সংগ্রহ করে রপ্তানিতে যুক্ত তৃতীয়পক্ষের অনেক ব্যবসায়ীও।
আরও জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রায় ৬০ লাখ টন এমএস রড উৎপাদন হয়। রড উৎপাদন করে- বিএসআরএম, কেএসআরএম, একেএস, জিপিএইচ, এইচএম, বন্দর, আনোয়ার ইস্পাতের মতো বড় জায়ান্টরা। এরই মধ্যে অনেকে কারখানা সম্প্রসারণ করে সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে।
২০২৩ সালে রড উৎপাদনের সক্ষমতা এক কোটি টনে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এ শিল্পে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও। আগে বায়ুদূষণের জন্য ইস্পাত কারখানাগুলোকে দায়ী করা হলেও নতুন নতুন প্রযুক্তি আসায় তা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। অন্যদিকে, ইস্পাত প্ল্যান্টগুলোতে পুরোনো লোহা গলানোর সময় চুল্লি থেকে কালো ধোঁয়ার মাধ্যমে ছাই বেরিয়ে আসে। এসব কালো ধোঁয়া এয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (এটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করা হলে বাতাস এবং ছাই আলাদা হয়ে যায়।
পরিশোধনের পর স্বচ্ছ বাতাস খোলা আকাশে ছেড়ে দেওয়া হলেও ছাইগুলো জমা পড়ে নির্ধারিত বাস্কেটে। এরপর পরের প্রক্রিয়াগুলো শেষে এসব ছাই চলে যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চায়না, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, স্পেন, তুরস্ক ও ভারতে এই ছাই রপ্তানি হয়। মূলত ছাই প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে কালি ও প্রিন্টারের কার্টিজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে প্রায় ৭০ বছর ধরে ইস্পাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিএসআরএম। মূলত বিএসআরএমের হাত ধরে দেশে সমৃদ্ধ হয় ইস্পাত শিল্প। সময়ের ব্যবধানে নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসে এ শিল্পে। দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বিএসআরএম’র পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ঘটছে অন্যদের প্ল্যান্টগুলোতেও।
বিএসআরএম এর একজন কর্মকর্তা জানান, বছরে প্রায় ১২ হাজার টন ছাই রপ্তানি করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ছাই রপ্তানি করে প্রায় ৬২ লাখ ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশি টাকায় যা ৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুইশ কোটি টাকার ছাই রপ্তানি করেছে বলেও জানান তিনি।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: