নিউজ ডেস্ক : আর্জেন্টিনা দলটা যে মেসির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। লিওনেল মেসি জ্বলে না উঠলে বড় ম্যাচে জয় পায় না আর্জেন্টিনা। এমন কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। কাতার বিশ্বকাপে বাদ পড়ার শঙ্কায় থাকা আর্জেন্টিনা পোল্যান্ডের বিপক্ষে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই পা রেখেছে শেষ ষোলোয়। এদিন অবশ্য দেখা মিলেছে ভিন্ন এক আর্জেন্টিনার। মেসির পেনাল্টি মিসের পর আলবিসেলেস্তেরা জয় পেয়েছে মেসির গোল-অ্যাসিস্ট ছাড়াই।
আর্জেন্টিনা কোনো ম্যাচ হারলেই বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়, মেসি একা কী করবে? সমর্থকরা তো বলেই, ট্রল করার উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষরাও বলে। মেসির ওপর আর্জেন্টিনার অতিনির্ভরশীলতা অনেক সময়ই কাল হয়েছে তাদের। প্রয়োজনের মুহূর্তে এই কিংবদন্তি জ্বলে উঠতে না পারলে ম্যাচ আর বের করে নিয়ে আসতে পারে না আলবিসেলেস্তেরা। যার বড় প্রমাণ তো ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল।
লিওনেল স্ক্যলোনির দল মেসিনির্ভরতা কাটিয়ে দলবদ্ধ হয়ে খেলে, এমনটাই দাবি কয়েক বছর থেকে। এবার মাঠের খেলায়ও পাওয়া গেল প্রমাণ।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রথম দুই ম্যাচে হওয়া ৩ গোলের ৩টিতেই অবদান রয়েছে মেসির। প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করা আর্জেন্টাইন তারকা দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল তো করেছেনই, এঞ্জো ফার্নান্দেজের গোলেও রেখেছেন অবদান। তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে চিত্র ভিন্ন।
এমন না যে মেসি পোল্যান্ডের বিপক্ষে খারাপ খেলেছে। একটা পেনাল্টি মিসের পরও সোফাস্কোর মেসিকে রেটিং দিয়েছে ৮.২। পুরো ম্যাচে গোলে ৭টি শট নিয়ে ৪টি রেখেছেন লক্ষ্যে। দুটি গেছে লক্ষ্যের বাইরে আর একটি শট ব্লক হয়েছে। পাঁচটি কি-পাস ও ৪টি সফল লং বল দিয়ে প্লেমেকিংয়েও রেখেছেন দারুণ ভূমিকা।
এদিন একটা রেকর্ডও গড়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর থেকে পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করা ও ৫টি সফল ড্রিবল করা সবচেয়ে বয়স্ক তারকা এখন মেসিই। ভেঙে দিয়েছেন ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার গড়া রেকর্ড।
কিন্তু এতকিছুর পরও এদিন আর্জেন্টিনার করা দুই গোলের কোথাও নেই মেসির নাম। হুট করে কেউ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পড়লে হয়তো টেরই পাবেন না যে, মেসি ছিলেন এই ম্যাচে!
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে। ডানপাশ থেকে নাহুয়েল মলিনার লো ক্রস থেকে প্রথম টাচেই নিচু শটে ভয়েচেখ সেজনিকে পরাজিত করেন এই ব্রাইটন তারকা।
৬৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা এসেছে তারুণ্যের হাত ধরে। নতুন সেনসেশান এঞ্জো ফার্নান্দেজ বল বাড়ান বক্সে থাকা ইউলিয়ান আলভারেজকে। তার বুলেট শটে বল জড়িয়ে যায় জালে। ২-০ ব্যবধানে জয় পায় আর্জেন্টিনা।
দুই গোলের কোথাও নেই মেসির নাম। অথচ বড় ম্যাচ মানেই এতকাল আর্জেন্টিনা তাকিয়ে থেকেছে মেসির দিকে। স্ক্যালোনি এই মেসিনির্ভরতা থেকেই বের করে আনার চেষ্টা করেছেন শুরু থেকেই। মেসি ব্যর্থ হলেও যে জয় বের করে আনতে পারে তার একটা শোডাউন অবশ্য গত কোপা আমেরিকা আসরেই দেখা গিয়েছিল। ফাইনালে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা।
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগপর্যন্ত আর্জেন্টিনা গোল করেছিল ৮টি। যার ৭টিতেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভবে ছিল মেসির নাম। ফাইনালে মেসি ব্যর্থ, দলও পারেনি শিরোপা জিততে। কাতার বিশ্বকাপে তাই মেসিনির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে চায় আলবিসেলেস্তেরা। শেষ ষোলো নিশ্চিতের ম্যাচে তারই প্রদর্শনী হলো যেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন
আপনার মতামত লিখুন: