• ঢাকা
  • শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

গণপরিবহনে ই-টিকিটিং ভাড়ায় স্বস্তির বার্তা


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, ১০:৫৭ এএম
ই-টিকিটিং ভাড়া
গণপরিবহন

নিউজ ডেস্ক : সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানতো না কোনো গণপরিবহন। এ বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগেরও অন্ত ছিল না। কিছুদিন আগে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে সুস্থতার ইঙ্গিত দিয়েছিল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এখন যার সুফল পাচ্ছে যাত্রী থেকে মালিক সবাই।

গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য থেকে মুক্তির বার্তা মিলেছে। এর মাধ্যমে চার্ট অনুযায়ী আদায় করা হচ্ছে ভাড়া। কাউন্টারে একটি পজ মেশিনের মাধ্যমে যাত্রীরা টিকিট কেটে গাড়িতে ওঠছেন। তবে কখনো কখনো ভাংতি না থাকায় যাত্রী ও টিকিট বিক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। অর্থাৎ ১৩ টাকার ভাড়ার ক্ষেত্রে যাত্রী দিচ্ছে ১৫ টাকা বা ২০ টাকার নোট। এক্ষেত্রে টিকিট বিক্রেতা কখনো কখনো ২ টাকা ফেরত দিতে পারছেন না। আবার যাত্রীও ১০ টাকার সাথে তিন টাকার ভাংতি দিতে পারছেন না।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এমন বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন রনি তালুকদার। রাজধানীর আসাদগেট থেকে তিনি যাবেন মিরপুর ১ নম্বরে। প্রজাপতি বাসে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর ফলে এ দূরত্বে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৩ টাকা। যা আগে ২০ টাকা নেয়া হতো। রনি এবং টিকিট বিক্রেতা কারও কাছেই তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভাংতি টাকা না থাকায় রনিকে ২ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। তবুও স্বস্তি দেখা গেছে তার মধ্যে।

তিনি বলেন, আগে ঠিকমতো বাস পাওয়া যেত না, দৌড়ে বাসে উঠতে হতো ভাড়াও বেশি নেয়া হতো। এখন বাস নির্দিষ্ট স্টপেজে এসে দাঁড়াচ্ছে। ফলে কারও মধ্যে হুড়োহুড়ি নেই। সবাই লাইন ধরেই উঠছে। ভাড়াও কমেছে। সব বাসে এটা চালু হলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে বলেও মত তার।

তানজিলা মোস্তাফিজ মিলি প্রজাপতি বা পরিস্থান নামক বাসে মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে সপ্তাহে পাঁচ দিন শ্যামলীতে যাতায়াত করেন। বেসরকারি একটি এনজিওতে কাজ করা এই নারীও জানালেন স্বস্তির কথা। তিনি বলেন, ‘আগে বাসে সিট পাওয়া যেত না। এখন টিকিট সিস্টেম হওয়ায় যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়ায় না, ফলে বাসে অতিরিক্ত যাত্রী না থাকায় সিট পাওয়া যায়। আবার যেখানে যাব ঠিক সেখানের ভাড়াই নিচ্ছে। এতে আরামে গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার থেকে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান এবং গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাসে এ পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে।

ই-টিকিটিং-এর বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ই-টিকিটিং একটি কার্যকর পদ্ধতি। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে চালু করেছি, যাত্রীদের কাছ থেকে ভালো রেন্সপন্স পাচ্ছি। এ সপ্তাহেই আরও তিনটি রুটে চালুর পরিকল্পনা আছে।

তিনি জানান, গাবতলী থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক হয়ে বাড্ডা-স্টাফ কোয়ার্টার রুটে অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কা পরিবহনে এ পদ্ধতি চালু হবে। খুব শিগগিরই পুরোদমে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুর আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বহুদিন ধরেই রাজধানীতে চলাচলাকারী বাসগুলোতে নির্দিষ্ট দূরত্বে কোম্পানিগুলো ‘চেক পয়েন্ট’ বসিয়ে যাত্রীর হিসাব রেখে আসছিল। কোম্পানির চেকার নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামিয়ে কতজন যাত্রী আছে, মাথা গুনে কাগজে লিখে দেন। এর ফলে একজন যাত্রী বাসে উঠে পরের স্ট্যান্ডে নেমে গেলেও বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটাকে মূলত ‘ওয়েবিল’ বলে। এটার মানেই হলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি টাকা আদায় করা। আর যারা এই ‘ওয়ে বিল’র কাগজে স্বাক্ষর করে নামার সময় বাসের সুপারভাইজারের কাছ থেকে চেকার নিয়ে থাকেন ১০ থেকে ২০ টাকা।

ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমার পর গত ৩১ আগস্ট বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে এ অনিয়ম ঠেকাতে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্যাহ।

তিনি বলেছিলেন, ঢাকার ১২০টি কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যানদেরকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ওয়েবিল থাকবে না। কিন্তু মালিকরা বলছে, ওয়েবিল বন্ধ করে দেয়ার পর তাদের যা ইনকাম আসত, তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে। এতে তারা যাত্রীদের হিসাব পায় না।

এখন ই-টিকিটিং পদ্ধতি যেসব পরিবহনে চালু হয়েছে, সেসবের মালিক সহজেই দিনের আয়ের হিসাব পাবেন। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে ‘ওয়েবিল’র সঙ্গে বড় ধরনের ফারাক দেখছেন যাত্রীরা। আগে যে গন্তব্যে যেতে ২০ থেকে ২৫ টাকা গুনতে হতো এখন সেখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। সুপারভাইজারের সাথেও যাত্রীদের এখন কথা কাটাকাটি হচ্ছে না। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনের কর্মীরাও স্বস্তিতে আছেন।

পরিস্থানের সুপারভাইজার শাহ জালাল জানান, বাসে চড়ার পর আগে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই তর্ক হতো। কারণ, সরকারের চার্টের সঙ্গে ওয়েবিলের ভাড়া বেশি ছিল। যাত্রীরা ওই ভাড়া দিতে চাইত না, কিন্তু মালিকদের হিসেব আমাদের ঠিকই বুঝিয়ে দিতে হতো। কখনো কখনো যাত্রীদের বুঝাতে পারলেও বাকি সময় নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে মালিকের হিসেব বুঝিয়ে দিতে হতো। এখন কারো সাথে তর্ক করতে হয় না। যাত্রীরা টিকিট কেটে বাসে ওঠে, আমরা শুধু চেক করি টিকিট আছে কি না। মালিকের সাথে এখন আমাদের কোনো ঝামেলা নেই।

তিনি জানান, এখন সব হিসেব মেশিনে থাকে। দিন শেষে মালিকপক্ষের লোক এসে মেশিনে কত টিকিট বিক্রি হয়েছে তা দেখে সেই হিসেবে টাকা নিয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় নতুন করে ই-টিকেটিং চালু করতে যাওয়া কোম্পানি নূর-ই মক্কা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি ই-টিকিটিং চালু করেছে আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি, বিষয়টি বেশ সুবিধাজনক। প্রতিদিন কত টাকা ভাড়া উঠছে, সে হিসাব মেশিনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে; যাত্রীরাও সুফল পাচ্ছে। ফলে আমরাও এ ব্যবস্থায় যেতে আগ্রহী হয়েছি।

এদিকে ই-টিকিটিং চালুর ফলে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ঝামেলায় পড়েছেন। কারণ, এখানে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। আর নির্দেশ অনুযায়ী শুক্র-শনিবার শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া রাখা হচ্ছে না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। বন্ধের দিনও শিক্ষার্থীদের অনেক কাজে বাইরে বের হতে হয়’ কিন্তু তখন ভাড়া নিয়ে বিপত্তি বাধে। এতে বাকবিতণ্ডার মতো ঘটনাও ঘটছে কিছু জায়গায়।

মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী আনোয়ার পারভেজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বন্ধের দিন কি শিক্ষার্থীদের কোন কাজ থাকে না? অনেকেরই তো শুক্র-শনিবারও ক্লাস-পরীক্ষা থাকে। চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষা দিতে যান বিভিন্ন প্রান্তে। দেশটা আজ মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। তাই এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।’

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্যাহ বলেন, হাফ ভাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় আছে। দ্রুতই এর সমাধান হবে।

ঢাকানিউজ২৪.কম / কেএন

আরো পড়ুন

banner image
banner image