
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের লেনদেন এখন থেকে রুপিতে করা যাবে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ডলারের প্রভাব কমাতে এমন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। রাজধানীর লা মেরিডিয়েন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে রুপিতে লেনদেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
প্রাথমিকভাবে সোনালী, ইস্টার্ন এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ভারতীয় দুটি ব্যাংকের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন নিষ্পত্তি হবে। গতকালই সোনালী ও ইস্টার্ন ব্যাংক এ বিষয়ে আলাদা ডেস্ক স্থাপন করেছে। প্রথম দিন ভারতের আইসিআইসিআই ব্যাংকের মাধ্যমে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বাংলাদেশের মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ রুপির রপ্তানি আদেশ পেয়েছে বগুড়ার তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ। আর নিটল-নিলয় গ্রুপ ভারতের টাটা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ রুপির আমদানি এলসি করেছে। প্রচলিত আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে শুধু ভিন্নতা হলো, নিষ্পত্তি হবে রুপিতে। তবে রুপি যেহেতু আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বীকৃত মুদ্রা নয়, সে কারণে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আলাদাভাবে নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ভারত বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশ ভারত থেকে বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। রপ্তানি করে ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছিল, ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছেন। এখন তা বাস্তব রূপ পেল।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সুবিধা চালু হলো। এই পদ্ধতি থেকে দু’দেশই লাভবান হবে। রুপিতে লেনদেন চালু করার ফলে দায়দেনা মেটানো সহজ হবে। ব্যবসায়ীরা এতে উপকৃত হবেন। এতে করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়বে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্ল্যাহ এবং বিডার চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা।
সেপ্টেম্বরে আসছে টাকা-রুপি কার্ড: বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর চিকিৎসা, ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে প্রচুর লোক ভারতে যান। তাদের অনেকে টাকা দিয়ে প্রথমে ডলার কেনেন। পরে আবার রুপিতে রূপান্তর করেন। এই সমস্যার সমাধানে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ‘টাকা-রুপি কার্ড’ চালু হচ্ছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, আমরা টাকা-রুপিতে ডুয়েল কারেন্সি লেনদেন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এতে ডলার সাশ্রয় হবে। আবার বিনিময় হার জনিত লোকসান হবে না। এ কার্ড দেশে যেমন ব্যবহার করা যাবে, ভারতে গিয়েও ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলন: সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ভারতের আগ্রহেই বাংলাদেশ এ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই ২০২২ সালের ১১ জুলাই প্রথমে রুপিতে লেনদেনের প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশ এ ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন শুরু হলেও সব ব্যাংকের জন্য এ পদ্ধতি উন্মুক্ত।
তিনি জানান, রুপিতে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় আসবে, শুধু সমপরিমাণ আমদানি দায় নিষ্পত্তি করা যাবে। রুপিতে লেনদেন শুরুর ফলে তৃতীয় মুদ্রায় পরিশোধের সুয়োগ তৈরি হলো। এতে লেনদেনের খরচও কমবে। কেননা, ডলারের রপ্তানি আয় আসার পর প্রথমে নিজ নিজ মুদ্রায় বিনিময় করতে হয়। পরে আবার ডলারে বিনিময় করতে হয়। প্রত্যেক পর্যায়ে একটি চার্জ দিতে হয়। সরাসরি রুপিতে লেনদেনের ফলে এখন আর চার্জ লাগবে না। রুপির বিনিময় হার নির্ধারণ হবে কোন পদ্ধতিতে– এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দুই দেশের মুদ্রার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারের ভিত্তিতে ক্রস কারেন্সি রেটের আলোকে বিনিময় হার ঠিক হবে। টাকা-রুপিতে লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা হলেও কেন শুধু রুপিতে লেনদেন হচ্ছে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলারের আমদানি করে। দেশটিতে রপ্তানি করে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। ফলে টাকায় নিষ্পত্তি হলে ভারতের কাছে অনেক টাকা জমে যেত, যা আবার ডলার দিয়েই কিনতে হতো। তবে এখন দেশটিতে রপ্তানি বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি হলো।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: