মশিউর রহমান সেলিম, কুমিল্লা: কুমিল্লার লাকসাম পৌরশহরের প্রানকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত লাকসাম মডেল কলেজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ষড়যন্ত্র, শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাহ ভাবে হয়রানী বন্ধ এবং সুষ্ঠভাবে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার দাবীতে বুধবার সকালে ওই কলেজ মিলনায়তনে এক মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে কলেজের সার্বিক বিষয় নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের। ১৯৯৪ সালে বীরমুক্তি যোদ্ধা বশির আহমেদ লাকসাম ব্রাড মহিলা কলেজ নামে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন সময়ে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে লাকসাম ব্রাড মহিলা কলেজ নাম থেকে মহিলা শব্দটি প্রত্যাহার করে ব্রাড মডেল কলেজ হিসাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, ২০০০ সালে ১৫মে কলেজটি এমপিও ভুক্তি হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত নানাহ নাটকীয়তা, পেশীশক্তির প্রভাব ও দু‘পক্ষের একাধিক মামলার শিকারে পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংশের দাড়প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ব্রাড নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হলেও সরকার কর্তৃক পরিচালিত নয়, প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করলে সরকারী সনদ পাওয়া যাবে না মর্মে নানাহ প্রচারনা ছিলো বিদ্যমান। কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিলে সরকারী শিক্ষাঅর্ধাদেশ নানাহ প্রক্রিয়া শেষ করে অবশেষে পরিচালনা পরিষদের সভায় কলেজটি লাকসাম মডেল কলেজ নামকরণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তবে রয়ে যায় নানাহ নাটকীয়তা ও ছলছাতুরী।
লিখিত বক্তব্যে বিদ্যালয়টি পরিচালনাকালে নানাহ তথ্যভিত্তিক যুক্তি ও নির্দেশনা উঠে আসে। বিশেষ করে ব্রাড সংস্থার পক্ষ থেকে ৩০/১২/১৯ইং তারিখে ১৩০৯৩/২০১৫ রিটপিটিশনে স্থগিতাদেশ বর্ধিত না করায় শিক্ষাবোর্ডের ০৩/১২/২০১৫ তারিখের আদেশ কার্যকর এবং ১৭/৩/২০১১ তারিখের অনুমোদিত পরিচালনা কমিটি অকার্যকর মর্মে একটি দীর্ঘ মহামান্য হাইকোর্ট ৩০/১২/২০১৯ তারিখের আবেদনটি নিস্পত্তির জন্য শিক্ষাবোর্ডকে ৪০দিন সময় বেঁধে দেন।
মহামারী করোনার কারনে অফিস আদালত বন্ধ থাকায় শিক্ষাবোর্ড ১১/০১/২০১১ তারিখে অনুমোদিত কমিটি দিয়ে কলেজ পরিচালনা না করার নির্দেশ দেন এবং ১৩০৯৩/২০১৫ রিট পিটিশনটি দ্রুত নিস্পত্তি করার পরামর্শ দেন। ১১/০১/২০১২ তারিখ থেকে কলেজটি পরিচালনা কমিটিবিহীন ভাবে চলছে। শিক্ষামন্ত্রনালয় ও শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশনা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের প্রতি স্বাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতার বিল উত্তলন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, একটি অভিযোগ এ ভাবে দেয়া হয় যে, অধ্যক্ষ নিজ ক্ষমতা বলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। মূলত শিক্ষাবোর্ড যখন যে ভাবে নির্দেশান দিচ্ছে কলেজটিও সে আইনানুগ ভাবেই চলছে। যদি নিয়মের ব্যতয় ঘটত তাহলে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষাবোর্ড কলেজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতো।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানা যায়, ১১/১/২০২১ তারিখে গর্ভনিংবডির কার্যকারীতা স্থগিতের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিতই স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করে প্রবিধানমালা ২০০৯ এর ৪৯প্রবিধানে সংস্থা ব্রাড সংস্থা পরিচালিত কমিটির গঠনের অনুমোতি প্রার্থনা করলে শিক্ষাবোর্ড কোন প্রদক্ষেপ না নেয়ায় ব্রাডের নির্বাহী পরিচালক বাদী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে ১০৭০৮/২০২১ রিটপিটিশান দায়ের করেন। উক্ত রিট শুনানী ২৮/৬/২০২১ এ আবেদনটির নিস্পত্তির জন্য ৪ সপ্তাহের সময় দিয়ে অন্তরবর্তীকালীন আদেশ প্রদান করেন।
বিশেষ করে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী কলেজের সার্বিক বিষয়ে দু‘পক্ষকে এক জায়গায় এনে গত ২৫/২/২০২২ তারিখে একটি সমঝোতায় আসলেও পরবর্তীতে সময় চেয়ে ব্রাড এনজিও কর্তৃপক্ষ এ সমঝোতা থেকে সরে দাঁড়ায়। শুরু হয় আবারও অতীতের মতো দু‘পক্ষের নাটকীয় অবস্থান।
ফলে শিক্ষক-কর্মচারীরা হচ্ছেন নির্যাতিত এবং ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এছাড়া ১৯/৫/২০২২ তারিখের অনুমোদিত কমিটির কার্যক্রম স্থাগিত রাখার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদন করলে গত ২৪/৫/২০২২ তারিখে উক্ত আবেদন শুনানী শেষে মহামান্য হাইকোর্ট দু‘সপ্তাহের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়টি আপীল বিভাগের পূর্নাঙ্গবেঞ্চে স্থানান্তর পূর্বক গত ২৭/৬/২০২২ তারিখ শুনানীর ধার্য্য ছিলো কিন্তু বিশেষ কারণে তা হয়নি। বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারীরা মে-জুন মাসের বেতন এখনও পায়নি। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় শুসীল সমাজ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ওই কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকানিউজ২৪.কম / মশিউর রহমান সেলিম/কেএন
আপনার মতামত লিখুন: