• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ; ০৪ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • সরকারি নিবন্ধন নং ৬৮

Advertise your products here

banner image
website logo

বিশ্ব মোড়লের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে বিশেষ বার্তার অপেক্ষায় কিছু দেশ


ঢাকানিউজ২৪.কম ; প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ০৮:৪৭ পিএম
বাইডেন
ফাইল ছবি

সুমন দত্ত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় থাকতে বেশ কয়েকবার আমেরিকা সফর করেছেন। তবে এবারের সফরটা একটু ভিন্ন। যাবার আগে এত আলোচনা কোনো বারই হয়নি।
 নরেন্দ্র মোদীর এই সফরকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ বিশেষভাবে নজর দিয়ে আছে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, পাকিস্তান, ইউক্রেন, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ।
 
উল্লেখিত এই দেশগুলি মোদীর এই সফরকে দেখছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ইউক্রেন দেখছে ভারত রাশিয়া সম্পর্কে কি বলে। চীন ও পাকিস্তান দেখছে আমেরিকার সঙ্গে ভারত কোন কোন অস্ত্র চুক্তি করে। আগামীতে এসব অস্ত্র-চুক্তি কি প্রভাব পড়বে  সামরিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ দেখছে মার্কিন সমর্থন আগামী নির্বাচনে কার কাছে যায়। মালদ্বীপে ভারত চায় জনগণ সমর্থিত নাশিদের ক্ষমতা বহাল হোক। আর তার উল্টোটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। এখানে ভারত চায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। জনগণের সরকার বাংলাদেশে নির্বাচিত হোক। এটা ভারত চায় না। 

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার কে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এর পিছনে ভারতের যুক্তি আমেরিকার কাছে দেশটির নিরাপত্তা। ভারত মনে করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে কেউ তার দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে না।  বাস্তবে এটা ভারতের খোঁড়া যুক্তি বা অজুহাত।

 এই মুহূর্তে ভারতের মনিপুরে যুদ্ধ চলছে। বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। সেখানে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে ভারতের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ কারণে। তেমনি মিজোরামে কুকি চীন মিয়ানমারের সহায়তা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা করছে। এতে বাংলাদেশের তিন সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। তাই নিরাপত্তার যে অজুহাত ভারত আমেরিকার কাছে তুলে ধরছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প ছাড়া আর কিছু না। এসব মিথ্যা বানোয়াট গল্পের ওপর ভিত্তি করে যদি ভারত বাংলাদেশের এই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে সহায়তা দিয়ে যায় তবে সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে।

 শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি ধর্মান্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে। জঙ্গিরা এখন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে। সম্প্রতি এই বিবৃতি বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে বলছে। বাংলাদেশের এসব জঙ্গি মমতা বেগমের হয়ে কাজ করছে।  মোদি যদি শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যায় তবে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি মার খাবে বাংলাদেশের জঙ্গিদের দ্বারা। যেই জঙ্গি এদেশে হিন্দুদের ওপর হামলা মামলা করছে, পশ্চিমবঙ্গেও গিয়ে তারা সেই একই কাজ করবে। 

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব আজ বিভক্ত। ইউরোপ ও আমেরিকা এক শিবিরে। অন্যদিকে রাশিয়া চীন এবং তাদের ঘনিষ্টদেশগুলি ভিন্ন এক অবস্থান নিয়ে আছে। ভারত এমন এক শক্তি দেশটি কোনো পক্ষে না গিয়ে দুই দিকেই সমান ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে। অদ্ভুত এক কূটনৈতিক সম্পর্ক সারা বিশ্বের সঙ্গে বজায় রেখেছে ভারত। আর এটাকেই পুঁজি করতে চাইছে আমেরিকা। 

ভারতের সঙ্গে আমেরিকা এমন এক সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসরাইলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। যেমন এবারের মোদীর সফরে আমেরিকা ভারতকে জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি হস্তান্তর করার চুক্তি করতে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তি আমেরিকা বিশ্বের কোনো দেশকে দেয়নি। 

জাপান ও ইসরাইলের মতো দেশও এই প্রযুক্তি আমেরিকা থেকে পায়নি। নরেন্দ্র মোদীকে সম্মান জানাতে মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দ্বিতীয়বারের মতো ভাষণ দেবেন মোদী। হাতে গোনা দুই একজনকে এই সম্মান দিয়েছে আমেরিকা।  এছাড়া আমেরিকার বড় বড় কোম্পানির কর্ণধারদের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত দেবেন মোদী। 

অনেকেই ভারত আমেরিকা সম্পর্ককে চীনের কাউন্টার হিসেবে মূল্যায়ন করে বিশ্লেষণ করেন। তাদের এই বিশ্লেষণ সঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র জানে ভারত চীনের সঙ্গে বিভিন্ন জোটে রয়েছে। ভারত চীনের সঙ্গে ব্রিকসে আছে। ভারত চীনের সঙ্গে এসিইউও তে আছে। চীন যদি ভারতের এক নম্বর শত্রু হয় তবে এসব অর্থনৈতিক জোটে কেন তারা এক সঙ্গে রয়েছে ?

 অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে (চীন-ভারত) নিজেদের স্বার্থে একে অপরের সহায়ক শক্তি হিসেবে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে।  ভারতের সঙ্গে আমেরিকা কিংবা অন্যদেশগুলোর সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে প্রবাসী ভারতীয়রা। বাংলাদেশ , পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল এসব দেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিম্নমানের শ্রমিক সাপ্লাই করে। অন্যদিকে ভারত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী  সাপ্লাই করে। আমেরিকাতে এইচওয়ানবি ভিসা সবচেয়ে বেশি পায় ভারতীয়রা। প্রতি বছরই এই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে তারা। 

দিনকে দিন আমেরিকাতে প্রবাসী ভারতীয়দের সংখ্যা বাড়ছে। আর এই স্থানে নেটিভ আমেরিকানদের সংখ্যা কমে আসছে। নাসা কিংবা মাইক্রোসফটের বড় একটি অংশ ভারতীয়। এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ভারতীয়রা আমেরিকাতে ছোট ছোট র্স্টাটআপ খুলে ব্যবসা করছে।  

বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই স্থানে ভারতের প্রাধান্য সর্বোচ্চ দেখা যায়। এমনকি চীনে যেসব মার্কিন কোম্পানি কারখানা খুলে বসে আছে সেখানে কাজ করছে ভারতীয়রা। মার্কিন রাজনীতিতে ভারতীয়দের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই পার্টিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদরা আছেন। তারা সব সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নে ভূমিকা রাখছে। মার্কিন পার্লামেন্টে ভারতের স্বার্থে যেসব বিল পাশ হয় তার পিছনে থাকে এসব প্রবাসী ভারতীয় রাজনীতিবিদরা অথবা তাদের অর্থে পরিচালিত মার্কিন কংগ্রেস-ম্যানরা। 

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর যে রাষ্ট্রগুলো ভারতকে এড়িয়ে চলত এখন সেই রাষ্ট্রগুলো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়নে ব্যস্ত। যেমন মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব। একসময় সৌদি আরব ভারতকে মোটেও পছন্দ করত না। সৌদি আরব সব সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতের বিরোধিতা করত। তখন ভারতের ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস ও জনতা দলের জোট সরকার। সেই সৌদি আরব এখন ভারতের ঘনিষ্টমিত্র। সৌদির বৃহৎ তেল কোম্পানি আরমাকোর মালিকানাও পেয়েছে ভারতের আম্বানি গ্রুপ।

 সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি আরব দেশ মোদী কে দিয়েছে  তাদের দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেলে দিয়ে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা দিয়ে সৌদির তেল কূপগুলি রক্ষা করা হচ্ছে এখন। ভারত সৌদির সঙ্গে সামরিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক চুক্তি করে ভারত-সৌদি সম্পর্ক অন্যরকম এক জায়গায় নিয়ে গেছে। 

ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক। ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় এই সম্পর্ক দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকা জানে, ভারত যদি কোনো সামরিক প্রযুক্তি চেয়ে না পায় তবে ইসরাইল সেটা দিয়ে দেবে। কারণ ভারতের সঙ্গে ইসরাইলের বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুসারে ভারত ইসরাইল থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদ কেনে। পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলায় যেসব বোমা ফেলা হয়েছিল সেগুলো ছিল ইসরাইলের স্পাইক বোমা। 

ভারতের বিমান বাহিনীতে যেসব নেভিগেশন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় সেগুলো ইসরাইলের। আমেরিকা এখন চাইছে ভারতের এই মার্কেট ধরতে। এ কারণে আমেরিকার অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি গুলো ভারতের সঙ্গে নতুন নতুন প্রস্তাব দিয়ে চুক্তি করতে চাইছে। ভারতের রয়েছে একটি বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এর সংখ্যা হবে ৭০ থেকে ৮০ কোটির মতো। এই শ্রেণির জন্য অনেক কিছু প্রয়োজন। এজন্য ভারতের ইন্ডিগো সংস্থা বোয়িং কোম্পানি থেকে ৫০০ উড়োজাহাজ কিনবে। মোদির সফরে এই চুক্তি হবে বলে জানা গেছে।

 এর আগে ভারতের টাটা গ্রুপ কয়েকশ উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। ভারতের রেল যোগাযোগ উন্নত করা জন্য আমেরিকা থেকে রেল ইঞ্জিন কেনারও আলোচনা চলছে। ভারতে আসছে হাইপুরালুপ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এটা বুলেট ট্রেন থেকেও দ্রুতগামী। মুম্বাই-আহমেদাবাদ চলবে এটি। ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন বিনিয়োগ এসেছে। নতুন করে আরো কিছু যোগ হবে। সামরিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ভারতকে সবকিছুই দিতে চায়। দরকষাকষিতে সেগুলো উত্তীর্ণ হতে না পারায় ভারত সেগুলো পায় নাই। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ভারত আমেরিকা আলোচনা হবে। 

রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই চায় ভারতের মাধ্যমে আমেরিকা কি ম্যাসেজ দেয় সেটা জানার। শোনা যাচ্ছে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দিয়েছে। এই সফরে ভারত কে আমেরিকা কি বলে তা বাংলাদেশের মাধ্যমে জানতে চাইছে ইউক্রেন। বাংলাদেশও ভারতের কাছ থেকে জানতে চাইবে আমেরিকা কি চায় এখানে। মোদির সফর শেষে সবকিছু পরিষ্কার হবে।  

রাশিয়া এখন ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদন করবে। এমন খবর আসার পর একই রকম  প্রস্তাব আমেরিকাও দিয়ে রেখেছে। নরেন্দ্র মোদির এই সফরে তার কিছু বাস্তবায়ন হবে। ভারতের তেজস বিমানে মার্কিন জেট ইঞ্জিন লাগানো হবে। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে মিলে এসব যুদ্ধবিমান তৈরি করবে আমেরিকা। বিভিন্ন দেশের কাছে এসব বিমান বিক্রিও করা হবে। এতে ভারত ও আমেরিকা উভয় লাভবান হবে। এমন এক লক্ষ্য থেকে এসব চুক্তি করা হচ্ছে। তাই যারা বলেন চীনকে দেখানোর জন্য এসব করা। সেটা ভুল বিশ্লেষণ।

গত বছর ভারতের একটি সুপারসনিক মিসাইল পাকিস্তানের রাডার ফাঁকি দিয়ে দেশটিতে বিধ্বস্ত হয়। চীন থেকে পাওয়া সর্বাধুনিক রাডার পাকিস্তান সেটআপ করেছিল। সেই রাডারের দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ে এই দুর্ঘটনায়। বিশ্ব এখন চীনের এই রাডার কিনতে চাইবে না। ভারত এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অস্ত্র ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের চুক্তি করছে।  নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্য মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্ট। সেই পরিকল্পনার অংশ হয়ে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া ভারতের সঙ্গে নতুন নতুন চুক্তি করেছে। যার বাস্তবায়ন আগামীতে হবে।  

লেখক সাংবাদিক , তারিখ ২০ জুন ২০২৩      
 

ঢাকানিউজ২৪.কম / এসডি

আরো পড়ুন

banner image
banner image