নিউজ ডেস্ক: ভারতের মণিপুরে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার কারণে গোটা রাজ্যকে 'উপদ্রুত এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করে সামরিক আইন জারি করেছে দেশটির সরকার। বুধবার রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে'র (আফস্পা আইন) অধীনে ১৯টি থানা এলাকা ব্যতীত গোটা রাজ্যেই অশান্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা দেওয়া হলো। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজ্য পুলিশের ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে আগামী ছয় মাসের জন্য রাজ্যকে 'উপদ্রুত এলাকা' বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে রাজ্যে বিভিন্ন চরমপন্থী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ রুখতে অসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে।
সহিংসতা কবলিত মণিপুর ধীরে ধীরে শান্ত হওয়ায় প্রায় পাঁচ মাস পর গত শনিবার দুপুরে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালু করা হয়। এর পরই গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মেইতি সম্প্রদায়ের ২ শিক্ষার্থীর মরদেহের ছবি ভাইরাল হতেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়। ১৭ বছর বয়সী হিজাম লিন্থোইনগাম্বি এবং ২০ বছর বয়সী ফিজাম হেমজিত নামে ওই দুই শিক্ষার্থী গত ৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় নেমে প্রবল বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয় 'র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স'। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত হন কমপক্ষে ৪৫ জন। নতুন করে অশান্তির আশঙ্কায় বুধবার ও শুক্রবার রাজ্যের স্কুলগুলোতে ছুটি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলবারই নতুন করে পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, মূলত সংরক্ষণ ইস্যুকে কেন্দ্র করেই গত ৩ মে অশান্তির সূত্রপাত মণিপুরে। সেই থেকেই কত ৫ মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষিপ্তভাবে সহিংসতা চলে আসছে এই রাজ্যটিতে।
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতিরা 'তপসিলি উপজাতি' (এসটি) দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সরব হয়ে আসছে। তাতে সরকারের তরফে সিলমোহরও পরে। হাইকোর্টের নির্দেশে মেইতি সম্প্রদায়কে 'তফসিলি উপজাতি' (এসটি) মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নির্দেশও দেয়। তারই প্রতিবাদে গত ৩ মে রাজ্যটির পার্বত্য জেলাগুলোতে 'উপজাতি সংহতি মার্চ' সংগঠিত হওয়ার পর ওইদিনই চূড়াচন্দ্রপুর টাউনে প্রথম জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়।
এরপর থেকেই গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে মণিপুরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে নারীদের ওপর অত্যাচার, বিবস্ত্র করে ঘোরানো, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধ, বোমা, গুলির ঘটনা ঘটছে। মণিপুরের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার মানুষ।
ঢাকানিউজ২৪.কম /
আপনার মতামত লিখুন: